Cricket Incident: পচা আলু, আজহার-পত্নী ও ব্যাট তুলে ইনজির মার
"ও মোটে, সিধা খাড়া হো । মোটা আলু, সড়া আলু।" গ্যালারি থেকে ক্রমাগত কটাক্ষ শুনে আসছিলেন ইনজামাম উল হক।
কলকাতা: ১৯৯৭ সালের সাহারা কাপ (Sahara Cup)। বর্তমান প্রজন্মের এই ক্রিকেট সিরিজের বিষয়ে না জানারই কথা। সেই নব্বইয়ের দশকে কানাডায় বসত ৫০ ওভারের ক্রিকেটের এই আসর। পোশাকি নাম ফ্রেন্ডশিপ কাপ। কানাডায় ক্রিকেট (Cricket) তেমন জনপ্রিয় না হলেও এই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে বাকি বিশ্বের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। কারণ একটাই। মুখোমুখি হত দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও পাকিস্তান (India vs Pakistan)। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত চলার পর এই সিরিজ বন্ধ হয়ে গেলেও প্রতিযোগিতার সঙ্গে জড়িত কিছু ঘটনা এখনও ক্রিকেটানুরাগীদের মুখে মুখে ফেরে। তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৭ সালের সাহারা কাপে।
১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭। টরেন্টোয় অনুষ্ঠিত সাহারা কাপের সেদিন দ্বিতীয় ম্যাচ । প্রথম ম্যাচটি ২০ রানে জিতে নেয় মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ভারত। ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচনার মাঝে একরাশ চাপ মাথায় নিয়ে সেদিন মাঠে নামে পাকিস্তান। ম্যাচ যত এগোয় পাক ক্রিকেট দলের মাথায় চাপের পাহাড় আরও জেঁকে বসে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতের সামনে মাত্র ১১৭ রানের লক্ষ্য রাখতে পারে পাকিস্তান। সবাই ধরেই নিয়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচটিও ভারতের ঝুলিতে যাচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট ভারতের ব্যাটিং চলাকালীন হঠাৎই দেখা যায় পাকিস্তানের দ্বাদশ খেলোয়াড় ব্যাট হাতে মাঠে ঢুকছেন । ফিল্ডিং চলাকালীন ব্যাটের কী প্রয়োজন তা তৎক্ষণাৎ বুঝতে না পারলেও কিছুক্ষণ পর বিষয়টা স্পষ্ট হয়।
কী হয়েছিল সেদিন ?
দেখা যায় বাউন্ডারি লাইন টপকে গ্যালারিতে উঠে এক দর্শককে কলার ধরে হিড়হিড় করে টেনে নামিয়ে আসছেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ইনজামাম উল হক (Inzamam ul haq)। গোটা স্টেডিয়াম হতভম্ভ হয়ে যায় এই ঘটনায়। এরপরের ঘটনা আরও ভয়ানক। রাগে দিশেহারা ইনজি ওই দর্শককে ব্যাট তুলে মারতে উদ্যোত হন। যদিও তাঁকে আটকে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। না হলে সেদিন ক্রিকেট মাঠে রক্তারক্তি ঘটে যেত। কিন্তু কী কারণে এত রাগ? কীই বা বলেছিলেন ওই দর্শক।
পাকিস্তানের প্রথম সারির সংবাদপত্র ডন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দর্শক সেদিন গ্যালারি থেকে ক্রমাগত ইনজামামকে বিরক্ত করছিল। পাক ক্রিকেটারের শারীরিক গঠন নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দেয়। ক্রমাগত বলতে থাকে, “ও মোটে, সিধা খাড়া হো । মোটা আলু, সড়া আলু।” বাংলায় যার তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ওই মোটা, সোজা হয়ে দাঁড়া। মোটা আলু, পচা আলুর সঙ্গে তুলনায় ভীষণ রেগে যান। মাঠ থেকেই দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়কে ব্যাট নিয়ে আসার ইশারা করেন। তারপরের ঘটনা এতক্ষণে সবাই পড়ে ফেলেছেন। সেদিনের ঘটনার কথা স্মরণ করে একটি পডকাস্টে বিনোদ কাম্বলি বলেছিলেন, “আমরা ড্রেসিংরুমে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি ইনজি ব্যাট নিয়ে আসার ইশারা করছে। ফিল্ডিং করতে গিয়ে হঠাৎ ব্যাটের কী প্রয়োজন পড়ল তা নিয়ে আমরা বলাবলি করছিলাম। আর তারপরই ওই ঘটনা ঘটে। আমরা সবাই হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম।”
তবে শুধু ‘আলু’ মন্তব্য নয় । কারণ ছিল অন্য একটাও। পরে ওয়াকার ইউনিস পুরো বিষয়টি জানান। আর সেই কারণ হল তৎকালীন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিনের স্ত্রী। প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার ওয়াকার জানান, সেদিন আলু, আলু বলে ক্রমাগত ইনজিকে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছিল কয়েকজন দর্শক। সেই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। বিষয়টি খুব একটা আমল না দিলেও ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন আজহারউদ্দিনের স্ত্রী সঙ্গীতা বিজলানির উদ্দেশে কটূ মন্তব্য করেন। আর তাতেই রাগে আগুণ হয়ে যান ডানহাতি পাক ব্যাটসম্যান। তখন ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের মধ্যে মাঠ ও মাঠের বাইরে সম্পর্ক ছিল খুব ভাল।
ঘটনার জেরে ৪০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে ম্যাচ। দুই দলের অধিনায়ক এসে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। দর্শকদের উত্তেজিত না হওয়ার অনুরোধ করেন তাঁরা। সেদিন ম্যাচটি সাত উইকেটে জেতে ভারত। তবে ওই ঘটনার জেরে দু’ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন ইনজামাম।