East Bengal: জাভিদের সেটপিসে লন্ডভন্ড লাল-হলুদ
ডার্বির পরের ম্যাচ যে কোনও টিমের কাছেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের। জিতলে যেমন, হারলেও। এটিকে-মোহনবাগানের কাছে ০-৩ হারা ইস্টবেঙ্গল ঘুরে দাঁড়াবে কিনা, দেখার অপেক্ষাতে ছিল ফুটবলমহল।
অভিষেক সেনগুপ্ত
ওডিশা এফসি-৬ : এসসি ইস্টবেঙ্গল-৪ (হেক্টর ৩৩ ও ৪০, জাভি ৪৫, আরিদাই ৭১ ও ৯৩, ইসাকা ৮২) (সিডওয়েল ১৩, হাওকিপ ৮০, চিমা ৯০ ও পেনাল্টি-৯২)
লাল-হলুদ ডিফেন্স এ বার কত গোলে থামতে পারে? আইএসএলের (ISL) দুনিয়ায় এই প্রশ্ন নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে এখন? সবে ৩ ম্যাচ হয়েছে। এখনই জয়নার লরেন্সো, রাজু গায়কোয়াড়, ফ্রাঞ্জো পর্চেদের অ্যাকাউন্টে ১০ গোল! আর একটু সাহস আর উদ্যম থাকলে পুরো আইএসএলে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলতে পারে এসসি ইস্টবেঙ্গল (SC East Bengal)! জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে ১-১ করার পরের দুটো ম্যাচে ৯ গোল হজম করল মানুয়েল দিয়াজের (Manuel Diaz) টিম। গতবার যাদের বিরুদ্ধে ৫-৬ হেরে আইএসএল শেষ করেছিল, সেই ওডিশা এফসির (Odisha FC) বিরুদ্ধে আবার হাফজডন গোল হজম। শেষ দিকে কিছুটা জ্বলে না উঠলে স্কোরলাইন ৪-৬ হত না!
ডার্বি ম্যাচে ১১ মিনিটেই ছারখার হয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ১২ থেকে ২৩ মিনিটের মধ্যে ৩ গোল করে গিয়েছিলেন রয় কৃষ্ণা, মনবীর সিংরা। তিনদিন পর ওডিশার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ১২ মিনিটে লন্ডভন্ড লাল-হলুদ। ৩৩ মিনিটে স্টপার হেক্টর রামিরেজ ১-১ করেছিলেন জাভি হার্নান্ডেজের (Javier Hernandez ) ফ্রি কিক থেকে। ৭ মিনিট পরে আবার জাভির কর্নার থেকেই ২-১ হেক্টরের। ৪৫ মিনিটে আবার কর্নার থেকে সরাসরি গোল করে দেন জাভিই। ৩-১ এর পর যে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, তা বোঝাই গিয়েছিল। কিন্তু রাজু-পর্চেরা যে ৬ গোল খেয়ে বসবেন, কল্পনাই করা যায়নি।
ইস্টবেঙ্গল নিয়ে আজকাল আর কোনও ভবিষ্যদ্বাণীই করা যায়নি। বরং বলা ভালো, প্রতি ম্যাচে প্রত্যাশার ফানুস ফাটিয়ে দিচ্ছেন দিয়াজ। তিন ম্যাচ পরও জয়ের দেখা নেই। এক পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের ১০ নম্বরে। তার থেকেও বড় কথা হল, সম্মানজনক হারেরও দেখা নেই। ওডিশার বিরুদ্ধে যদি সেরা ফুটবলার খুঁজতে হয়, মহম্মদ রফিক, হীরা মণ্ডল, থংখোসেইম হাওকিপকে বাদ দিলে আর কাউকে পাওয়া যাবে না। মিস পাসের বন্যা, মাঝমাঠে বল ধরার অক্ষমতা, ভঙ্গুর ডিফেন্স, কাউন্টার অ্যাটাকহীন ফুটবল— এ সব ছড়িয়ে ম্যাচের প্রতিটা মিনিটে।
ডার্বির পরের ম্যাচ যে কোনও টিমের কাছেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের। জিতলে যেমন, হারলেও। এটিকে-মোহনবাগানের কাছে ০-৩ হারা ইস্টবেঙ্গল ঘুরে দাঁড়াবে কিনা, দেখার অপেক্ষাতে ছিল ফুটবলমহল। ১৩ মিনিটে দুরন্ত গোলে কিন্তু টিমকে এগিয়েই দিয়েছিলেন ড্যারেন সিডওয়েল। রাজুর লম্বা থ্রো-ইনটা ওডিশার ডিফেন্স ক্লিয়ার করলেও বক্সের মাথায় পেয়ে যান সিডওয়েল। সেখান থেকেই দুরন্ত শটে ১-০ করেন। প্রবল চাপে থাকা কোনও টিম, আত্মবিশ্বাস তলানিতে চলে যাওয়া একটা টিম সব সময় এই রকম একটা গোলের প্রত্যাশায় থাকে। সেখান থেকেই ছন্দটা খুঁজে নেয় তারা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ব্যতিক্রম। ডিফেন্সের যদি এই হাল হয়, স্ট্রাইকাররা ১০-১২ গোল দিলেও হারতে হবে। ১-০ থেকেই বিরতির ঠিক আগে ১-৩ হয়ে গেল দিয়াজের টিম। ওডিশার সেটপিসেই চুরমার হয়ে গেল তারা।
বিরতির পর আবার জাভির পরিবর্ত হিসেবে নামা আরিদাই সুয়ারেস জোড়া গোল করে গেলেন। সোনালি চুলের ফুটবলারের যা স্কিল, আইএসএলে অন্য টিমগুলোকেও চাপে রাখবেন তিনি। ৭১ মিনিটে তাঁর ফ্রি কিক থেকেই ৪-১। ম্যাচের ইনজুরি টাইমে দ্বিতীয় গোল তাঁর পা থেকে। ওডিশার ৬-৪-ও। আরিদাইয়ের আগে, ৮২ মিনিটে অবশ্য ৫-২ করেছিলেন তরুণ ফুটবলার ইসাকা।
প্রথমার্ধ এবং দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিট ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে গেলেও কিছুটা হলেও খেলা ধরার চেষ্টা করেছিলেন রফিকরা। হাওকিপ গোল তারই ফসল। ৮০ মিনিটে বাঁ দিক থেকে তোলা রফিকের সেন্টার থেকে হেডে গোল হাওকিপের। ৬-২ হওয়ার পরও ড্যানিয়েল চিমার জোড়া গোলে স্কোরলাইন কিছু ভদ্রস্ত হল। কিন্তু এতে কি সম্মান বাঁচল দিয়াজের?
ইস্টবেঙ্গল: শুভম, লরেন্সো (আদিল ৭২), রাজু, পর্চে (মার্সেলা ৫৯), হীরা, নাওরেম, ডের্ভিসেভিচ (অমরজিৎ ৫৯), রফিক, বিকাশ, সিডওয়েল (চিমা ৫৯), পেরসেভিচ (সিম্বোই ৭২)।
আরও পড়ুন : Mohun Bagan Club: ‘ব্যক্তিগত কারণে’ মোহন-সচিব পদ থেকে হঠাৎ পদত্যাগ সৃঞ্জয়ের