Controversial Cricket Story: বল বিকৃতির অভিযোগে কাঠগড়ায় সচিন! উত্তাল হল সংসদ

বল বিকৃতির অভিযোগে সচিনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা ইংরেজ রেফারির! অভিযোগে উত্তাল হল সংসদ। পথে নেমে রেফারি মাইক ডেনিসের কুশপুতুলে আগুন জ্বালালেন ক্ষুব্ধ সমর্থকরা।

Controversial Cricket Story: বল বিকৃতির অভিযোগে কাঠগড়ায় সচিন! উত্তাল হল সংসদ
বিতর্কের ক্রিকেট : ক্রিকেটের বিতর্ক
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 18, 2022 | 6:01 PM

আলো আর অন্ধকার, দুই-ই পা মেলায় ইতিহাসের মিছিলে। উজ্জ্বলতম অতীত যেমন ফিরে আসে স্মৃতিতে, তেমনই চুপিসারে হানা দেয় কলঙ্কও। ক্রিকেট ইতিহাস যেমন রেকর্ড, সাফল্য, নায়কদের খোঁজ দেয়, তুলে ধরে বিতর্কিত ঘটনাও। ক্রিকেট ইতিহাসের মহাবিতর্কিত নানা গল্পের খোঁজ দিল TV9 Banglaতিথিমালা মাজী তুলে ধরলেন পঞ্চম কিস্তি

পোর্ট এলিজাবেথে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা সবে শেষ হয়েছে। টেস্ট ড্র। সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন দুটি দলের ক্রিকেটাররা। কিছুক্ষণের মধ্যেই কে যেন এসে সচিন তেন্ডুলকরকে বলে গেলেন, ম্যাচ অফিশিয়ালরা ৬ জন খেলোয়াড়কে ডেকেছেন। হঠাৎ কেন এই জরুরি তলব? কারণ জিজ্ঞাসা করতেই ওই ব্যক্তি বললেন, ‘বল টেম্পারিং’। চমকে গিয়েছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। চমকের শেষ এখানেই নয়। তলব করা ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন, এটা জেনে হতভম্ব হয়ে যান। বাকি পাঁচজন ছিলেন- অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সেওয়াগ, হরভজন সিং, শিবসুন্দর দাস এবং দীপ দাশগুপ্ত।

২০০১ সালের ১৬-২০ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জ পার্কে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ ছিল ভারতের। টেস্ট চলাকালীন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক এবং সেই টেস্টের রেফারি মাইক ডেনেস ভারতীয় দলের ছয় জন ক্রিকেটারের নানা দোষ খুঁজে পান। ক্রিকেটের আইনে বল বিকৃতি বড় অপরাধ। ডেনেসের দাবি ছিল, ক্যামেরায় একাধিকবার সচিনকে নখ দিয়ে বলের সিম খুঁটতে দেখা গিয়েছে। দুই দশক আগে ডেনেসের এই দাবি হইচই ফেলে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বে। ভারতীয় ক্রিকেটের মুখ সচিন তেন্ডুলকরের দিকে বল বিকৃতির অভিযোগ! সচিন, ক্যাপ্টেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ ছয় ভারতীয় ক্রিকেটারের প্রতি ডেনেসের অভিযোগকে ইংরেজ রেফারির বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের ফল প্রতিবাদে সরব হয়েছিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি। রাগে ফেটে পড়েছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা।

কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল ডেনেসের?

১. সচিন তেন্ডুলকর: বল বিকৃতির অভিযোগ। ১টি ম্যাচে সাসপেন্ড।

২. বীরেন্দ্র সেওয়াগ: অতিরিক্ত আবেদনের জন্য একটি টেস্ট ম্যাচে সাসপেন্ড।

৩. সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: একটি টেস্ট ও দুটি ওয়ান ডে ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা। শাস্তির কারণ হল- অধিনায়ক হয়েও দলের সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।

৪. হরভজন সিং: অতিরিক্ত আবেদনের জন্য একটি টেস্ট ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা।

৫. শিবসুন্দর দাস: অতিরিক্ত আবেদনের জন্য একটি টেস্ট ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা।

৬. দীপ দাশগুপ্ত : অতিরিক্ত আবেদনের জন্য একটি টেস্ট ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা।

ম্যাচ পরবর্তী সাংবাদিক বৈঠকে শাস্তি ঘোষণার সময় এর পুরো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ডেনেস। ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, অতিরিক্ত আবেদনের জন্য যদি শাস্তি পেতেই হয় তাহলে শন পোলক কেন বাদ পড়লেন? এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন? ব্যাখ্যা দিতে অপারগ ছিলেন প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক। ওই সিরিজে ধারাভাষ্যকার হিসেবে ছিলেন রবি শাস্ত্রী। রেগে অগ্নিশর্মা শাস্ত্রী বলেন, “মাইক ডেনেস যদি এই গণ শাস্তির ব্যাখ্যা না দিতে পারেন, তাহলে এখানে কী করছেন? আমরা সকলেই জানি, উনি কেমন দেখতে।”

ভারতীয় সমর্থকদের রোষ নেমে এসেছিল পথে। ডেনেসের কুশপুতুল পুড়িয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। যার আঁচ এসে পৌঁছয় দেশের পার্লামেন্টে। সংবাদমাধ্যমগুলি ডেনেসকে বর্ণবিদ্বেষী এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে এক তৃতীয় বিশ্বের দেশের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। আইসিসি ডেনেসের পক্ষে থাকলেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সমর্থনে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় টেস্টে রেফারি পজিশন থেকে ডেনেসকে সরিয়ে দুটি আনঅফিশিয়াল টেস্ট খেলে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত আইসিসি জানায়, বল বিকৃতি করেননি সচিন।

২৪ বছরের কেরিয়ারে বিতর্ককে সবসময় পাশ কাটিয়ে চলেছেন সচিন তেন্ডুলকর। প্রতিটি ম্যাচে দেশবাসীর প্রত্যাশা ঘাড়ে নিয়ে নামতেন। ব্যাট হাতে দক্ষতার পাশাপাশি সংযমী জীবনযাপন, সততা তাঁকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়েছে। এক ইংরেজের বল বিকৃতির মতো গুরুতর অভিযোগ এনে ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বরের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে চেয়েও পারেননি। শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিতে হয়েছিল।