T20 World Cup 2022: বিশ্বকাপ শেষ, দেশে ফিরেই রুটিরুজির লড়াই শুরু ডাচ-জিম্বাবুইয়ানদের

এবার বাড়ি ফেরার পালা সিকন্দর রাজা, পল ভ্যান মিকেরনদের। দিন পনেরোর 'সুখের সময়' কাটিয়ে সবাই নিজ নিজ জগতে ঢুকে পড়বেন। শুরু হবে ফের রুটিরুজির লড়াই।

T20 World Cup 2022: বিশ্বকাপ শেষ, দেশে ফিরেই রুটিরুজির লড়াই শুরু ডাচ-জিম্বাবুইয়ানদের
Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 07, 2022 | 9:45 AM

কলকাতা: টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup 2022) মঞ্চে ছাপ ফেলেছে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবোয়ে (Zimbabwe)। পাকিস্তানকে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল জিম্বাবোয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়ে চমক আইসিসি-র সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসের(Netherlands) । এটুকুই পাওনা। সেমিফাইনালে টিকিট জোগাড় করতে পারেনি দুটো দলই। এবার বাড়ি ফেরার পালা সিকন্দর রাজা, পল ভ্যান মিকেরনদের। দিন পনেরোর ‘সুখের সময়’ কাটিয়ে সবাই নিজ নিজ জগতে ঢুকে পড়বেন। শুরু হবে ফের রুটিরুজির লড়াই। কারও দশটা-পাঁচটার অফিস, কারও কাজ সারাদিন ধরে দোরে দোরে খাবার পৌঁছে দেওয়া। কেউ গুটিগুটি পায়ে গিয়ে পৌঁছাবেন গ্যারাজে। পুরনো কালিঝুলি মাখা জামাটা পরেই গাড়ি পরিষ্কার কাজে লেগে পড়বেন কেউ! ফের শুরু হবে অনিশ্চয়তার জীবন।

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মানেই কোটিপতি, এমন ভাবনা ভাবতে পারে ভারত সহ কয়েকটি দেশ। নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবোয়ের ক্রিকেটারদের কাছে যা বহু দূরের স্বপ্ন। অ্যাডিলেড ওভালে রবিবার প্রোটিয়া ‘বধ’ করা নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে। অফিস থেকে কাজে যোগ দিতে বলায় দলের ম্যানেজার টুর্নামেন্টের মাঝপথেই ফিরে গিয়েছেন দেশে। নেদারল্যান্ডসের পেসার পল ভ্যান মিকেরন বলেছেন, “আমাদের ম্যানেজাররা টাকা পান না। তাঁদের মধ্যে একজনকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে টুর্নামেন্টে মাঝপথেই। তাই তড়িঘড়ি অন্য একজন ম্যানেজারের ব্যবস্থা করতে হয়। দলের সদস্য স্টিফেন মাবুর্গ এবং এন তেজা একটি কনসালটেন্সি কোম্পানিতে কাজ করে। ছুটি নিয়ে ওরা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে। এই কয়েকদিনের টাকা ওদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। টুর্নামেন্ট শেষ হতেই ওরা কাজে ফিরবে।”

অস্ট্রেলিয়ার পাঁচতারা হোটেলে থাকা, খাওয়া, অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে জিম্বাবোয়ের ক্রিকেটারদের। দেশে ফিরলেই ফিরে যেতে হবে পুরনো জীবনে। যে জীবনে আছে শুধু সংগ্রাম। সংসার চালানোর, পেটের ভাত জোগাড় করার লড়াই। গত সপ্তাহে শেষ বলের থ্রিলারে ওরা পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মাঠের বাইরের জীবনে কোনও পরিবর্তন নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জিম্বাবোয়ের ক্রিকেটার বলেছেন, “নাম নিতে চাই না। আমার এক সতীর্থ গাড়ি ধোয়ার কাজ করেন। একজন ডেলিভারি বয়। অন্য একজন ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রি অর্থাৎ সেলসম্যানের কাজে নিযুক্ত।” পরে কখন সিরিজ খেলা হবে, কেউ জানে না। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলার কথা রয়েছে বছরের শেষদিকে। সেই সময় বিভিন্ন টি-২০ লিগে খেলতে ব্যস্ত থাকবেন আফগান ক্রিকেটাররা। তাই সিরিজ অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তা জিম্বাবোয়ে ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আইসিসি নির্বাসনের মুখে পড়েছিল জিম্বাবোয়ে ক্রিকেট বোর্ড। প্রথম সারির ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলি পূর্ণ শক্তির দল খুব কমই পাঠায়। মিডিয়া রাইটস থেকে জিম্বাবোয়ে বোর্ডের আয় সীমিত। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক চলতি বছরে ভারতের জিম্বাবোয়ে সফর। ছয়বছর পর জিম্বাবোয়ে সফরে যাওয়া ভারতীয় দলে ছিলেন না রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির মতো ক্রিকেটাররা। পুরনো দিনগুলির কথা স্মরণ করে এক সাপোর্ট স্টাফ বললেন, “ক্রিকেটাররা বেতন চেয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আগের কথা মনে পড়ছে। অনুশীলনের জন্য ক্রিকেটারদের বল বা জল কোনওটাই দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না জিম্বাবোয়ে ক্রিকেট বোর্ডের। ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফিজ দেওয়ার জন্য অন্যদের কাছে হাত পাততে হত।”

নেদারল্যান্ডস দলের বেশিরভাগ তরুণ খেলোয়াড়। দলের ২৮ বছরের বেশি কারও বয়স নয়। কারণ ভালো চাকরি পেয়ে গেলে জাতীয় দলের হয়ে আর কেউ ক্রিকেট খেলে না। নতুন মুখ আসে। তারাও একসময় চাকরি পেয়ে চলে যায়। পার্টটাইম সেলসম্যান বা উবর ইটসের ডেলিভারি বয়ের কাজ করেছেন পল ভ্যান মিকেরন। খেলা না থাকলে এখনও সেই কাজ করেন।