FIFA World Cup 2022: বিতর্কের বাইপাস ভুলে বিশ্বকাপের আলোকমঞ্চে কাতার!

দুবাইয়ের মতো পাশ্চাত্য মনোভাব নেই। আবার সৌদি আরবের মতো রক্ষণশীলও নয় কাতার। শিল্প আর কলার প্রতি ঘোর টান। একটা দিক ঘিরে রয়েছে পারস্য উপসাগর। অসীম নীল জল আর বালিয়াড়ি ঘেরা কাতার ঠিক কতটা বড়?

FIFA World Cup 2022: বিতর্কের বাইপাস ভুলে বিশ্বকাপের আলোকমঞ্চে কাতার!
কালো সোনার দেশে, কাতারে TV9 বাংলা, সঙ্গী অভিষেক সেনগুপ্তImage Credit source: গ্রাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 18, 2022 | 11:34 AM

অভিষেক সেনগুপ্ত, দোহা

সেই এক উগ্র গন্ধ মিলবে বাতাসে! পাতলা মেঘের মতো কুণ্ডলি পাকিয়ে থাকা ধোঁয়ার আস্তরণ। সদ্যজাত ইমারত, কিংবা রাস্তার দু’পাশে থোক থোক কংক্রিটের স্তুপ। মিহি শব্দে সকাল-দুপুর কাটবে রোলস রয়েস, মার্সিডিজ়, বুগাতি দিভো, লামবোর্গিনি ভেনেনো। গনগনে রোদ পিঠ পুড়িয়ে দেবে ঘুমভাঙা সকাল থেকেই। বালিয়াড়ি অনবরত পাঠাবে গরম বাতাস। সন্ধে নামলে আবার দিলখুশ হাওয়া। আর তাতে সামান্য জোলো ভাব। মরসুম বদলের খবর মিলতে পারে! এ সব যদি পান, জানবেন- আপনি কাতারে (Qatar) আছেন!

শহর যত ছোট তার দিনযাপন তত ঢিলেঢালা। দেশ যত ছোট তার স্বপ্ন তত সহজ সরল। নিয়মের কি হেরফের নেই? এই কাতারকেই ধরুন না। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) আয়োজনের দায়িত্ব পেয়ে গিয়েছিল একমুঠো দেশ। আর এই ১২ বছরে একটু একটু করে শহর বেড়েছে বহরে। যৌগিক নিয়মে জনসংখ্যা বাড়ে। ফারাক শুধু, চেহারা বাড়াতে গিয়ে তীব্রতর হয়েছে শূন্যতা। আজিজিয়া, আল ওয়াকরা, রাসবু আবাউদ, লুসেইলে হঠাৎ পা দিলে মনে হবে, খোয়া গিয়েছে সব প্রান্তিক আলো। তিরিশ লাখি দেশের নব্বই শতাংশ ভিনদেশি। বলা যেতে পারে, এই শহর যত্ন করে বানিয়েছেন যাঁরা, তাঁরাই এখন খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক চিলতে ছাদ।

‘খেয়াল কা মতলব পতা হ্যয় আপ কো?’ দোহারা ট্যাক্সি ড্রাইভার হঠাৎই প্রশ্ন করে বসলেন! খেয়াল মানে, যিনি দেখভাল করেন, নজর রাখেন, পাশে থাকেন, এই তো। উত্তর পেয়ে স্মিত হাসলেন বছর পঞ্চান্নর পাকিস্তানি ড্রাইভার। অচেনা শহরের সঙ্গে আলাপ করতে হলে ট্যাক্সি ড্রাইভাররাই সেরা সেতু। আপনার কৌতুহল মেটাবে। আর হাতে গরম হাঁড়ির খবর জানিয়ে দেবে। কিছু শহর থাকে, সন্ধের আগে যার খোঁজই পাওয়া যায় না। পেশোয়ারের খেয়ালউদ্দিন নিচু গলায় বললেন, ‘শহর বদল গ্যয়া হ্যয়। লেকিন জান নেহি হ্যয়! বিশ্বকাপের জন্য এত কিছু হল। কিন্তু যে মানুষগুলো থাকে এখানে, তাদের কথাই তো ভাবা হল না! বিশ্বকাপের পর কি বদলাবে পরিস্থিতি?’ নিজেকেই হয়তো প্রশ্ন করলেন খেয়ালউদ্দিন। নাকি, দেশের জনসংখ্যার ওই নব্বই শতাংশ চাকুরিজীবী, শ্রমিক, ট্যাক্সিচালক, দোকানে কাজ করা কর্মচারী, হোটেল কর্মীর চাপা কন্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি শুনলাম?

দুবাইয়ের মতো পাশ্চাত্য মনোভাব নেই। আবার সৌদি আরবের মতো রক্ষণশীলও নয় কাতার। শিল্প আর কলার প্রতি ঘোর টান। একটা দিক ঘিরে রয়েছে পারস্য উপসাগর। অসীম নীল জল আর বালিয়াড়ি ঘেরা কাতার ঠিক কতটা বড়? ২০১১ সালে যখন এশিয়ান কাপ কভার করতে পা রেখেছিলাম, তখন ছিল বাঁশদ্রোণী টু ব্যারাকপুর। আর এখন? এখন, বাঁশদ্রোণী টু বর্ধমান বলা যেতে পারে। জনসংখ্যায় কলকাতার আট ভাগের এক ভাগ! হঠাৎ মুখ বদলের রাস্তায় হাঁটা সব দেশেই কি এমন হয়? কাতারের মতো ছোট দেশ হলে হতেই পারে! কিন্তু ওই যে বললাম, স্বপ্নপূরণের ঝোঁকে এখন শুধু আলোতেই থাকছে কাতার। বিশ্বকাপ বলে কথা। অন্ধকার কে আর খুঁজবে!

বালাদিয়া মানে কী জানেন? বাংলায় জেলা বলা যেতে পারে। এই কাতার ৮টা জেলায় বিভক্ত। রাজধানী দোহা দেশের অন্যতম বড় শহর। কাতারের শহর বলতে হলে, আল রায়ান, আল খোর, আল ওয়াকরা, রাস লাফান, দুখান। মজার কথা হল, সবই দোহা থেকে তিরিশ মিনিটের মধ্যে। বলা যেতে পারে, বিশ্ব দরবারে এই কাতারের উত্থান খেলাকে আঁকড়ে ধরেই। ২০০৬ সালের এশিয়ান গেমস দিয়ে আয়োজক হিসেবে হাতেখড়ি হয়েছিল। তারপর দুটো এশিয়ান কাপ আয়োজন করে ফেলেছে। ২০৩০ সালের এশিয়ান গেমসও হবে কাতারেই। তার আগেই এই বিশ্বকাপ।

আয়োজক কাতার যতই ছোট হোক না কেন, বিশ্বকাপ নিয়ে কোনও কার্পণ্য নেই। নীল-সাদা, সবুজ-হলুদ, মেরুন, কমলা, সাদা, কালোয় আকন্ঠ ডুবে গিয়েছে দোহা। বিশ্বকাপে এমনই হয়। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর— প্রায় একমাস সারা বিশ্বকে জড়িয়ে ধরে বিশ্বকাপ উদযাপন করবে কাতার। বছরখানেক আগেও ফিফা চিন্তায় ছিল। কিন্তু এই চারদিন আগের কাতার আর তার আটটা ঝাঁ চকচকে স্টেডিয়াম, গায়ে গায়ে লেগে থাকা সার দেওয়া সাদা বাড়ির লাইন দেখে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা স্বস্তিতে। এই একটা মাস উতরে দেওয়া যাবে।

আর বিতর্ক? ছোটি ছোটি দেশোঁ মে এইসি বড়ি বড়ি বাতেঁ হোতি ব়্যহতি হ্যয়!