Kolkata Derby Retro Story: কৃষ্ণেন্দু রায় আমাদের শরীরের উপর দিয়ে যাবে…

ময়দানের প্রতিটা ঘাস জানে ফুটবলের মানে। সময়ের সঙ্গে রূপ পাল্টেছে ময়দান। আধুনিক হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঘটনা, দুর্ঘটনা, নানা মজার কাহিনি, সুখ-দুঃখের খতিয়ান আজও অমলীন। আলাদা করে কোনও বিশেষ মুহূর্তের কথা ভাবতে বললে সমস্যায় পড়ারই কথা।

Kolkata Derby Retro Story: কৃষ্ণেন্দু রায় আমাদের শরীরের উপর দিয়ে যাবে...
Kolkata Derby Retro Story: কৃষ্ণেন্দু রায় আমাদের শরীরের উপর দিয়ে যাবে...
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 18, 2022 | 10:00 PM

ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস সেই কবে থেকে ময়দানের জার্সি পরে বসে রয়েছে। নতুন শতাব্দীতে পা দিয়েও ময়দান ঘিরেই পায়ে পায়ে এগিয়ে রয়েছে ইতিহাস। কত গল্প উপহার দিয়েছে এই ময়দান। আরও ভালো করে বলতে গেলে, কলকাতা ডার্বি ঘিরে কত উত্তেজনা, কত উত্তাপ। তিন বছর পর আবার ডার্বি (Kolkata Derby) ফিরছে কলকাতায়। সেই চিরকালীন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান (East Bengal vs Mohun Bagan) ডার্বির নানা গল্প নিয়েই TV9 Bangla এই ধারাবাহিক — ডার্বির হারিয়ে যাওয়া গল্প। আজ অতীতে ফিরলেন কৃষ্ণেন্দু রায়।

ময়দানের প্রতিটা ঘাস জানে ফুটবলের মানে। সময়ের সঙ্গে রূপ পাল্টেছে ময়দান। আধুনিক হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঘটনা, দুর্ঘটনা, নানা মজার কাহিনি, সুখ-দুঃখের খতিয়ান আজও অমলীন। আলাদা করে কোনও বিশেষ মুহূর্তের কথা ভাবতে বললে সমস্যায় পড়ারই কথা। এত স্মৃতি হাতরে একটা বিশেষ কাহিনি খোঁজা, শিশির বিন্দুর মতোই। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা আলাদা নয়। তিন প্রধানে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কলকাতা ময়দানে আমার পরিচিতি ‘বান্টু’ নামেই। কলকাতা ফুটবল হোক বা ভারতীয় ফুটবল। বড় ম্যাচের গুরুত্ব সবসময়ই আলাদা। সেটা যে প্রতিযোগিতাতেই হোক না কেন। আর গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, বড় ম্যাচের জন্যই আমি কৃষ্ণেন্দু রায়। এটুকু জোর গলায় বলছি। বড় ম্যাচ না থাকলে আমাকে হয়তো কেউ এত গুরুত্ব দিত না।

সামনেই আরও একটা কলকাতা ডার্বি। আমার পছন্দের বড় ম্যাচ আলাদা করে বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। শুধুমাত্র ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান মিলিয়ে খেলেছি ১৩ বছর। এর মধ্যে মোহনবাগানেই ৯ বছর খেলেছি। আলাদা করে কোন ম্যাচ বাছা কঠিন। বেশ কিছু বড় ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। যেমন দিল্লিতে ১৯৮৭ সালে ইস্টবেঙ্গলকে ৩ গোলে হারানো ম্যাচটার কথা বলতে হবে। সেই ম্যাচে পাঁচ গোলের প্রতিশোধ নিতে পারতাম। দেবাশিস রায়, বাবুমণি একটা করে গোল মিস করে। না হলে পাঁচ গোল হয়ে যেত। যদি আলাদা করে একটা ম্যাচের কথা বলতে হয়, আমার কাছে ইডেনের ম্যাচটা সেরা। তখন আমি মোহনবাগানে খেলি। ম্যাচটা ০-১ হেরে গিয়েছিলাম।

হেরে যাওয়া ম্যাচকে সেরা বলছি, এটা হয়তো অনেককেই অবাক করবে। তার কারণ রয়েছে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে খারাপ খেলেছি, মনে করতে পারছি না। মনে পড়ার কথাও না। হেরে যাওয়া ম্যাচেও তৃপ্তি দিয়েছিল সমর্থকদের কিছু কথা। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান মানেই তো ঘটনা বহুল ডার্বি। প্রচুর ভালো ম্যাচ খেলেছি। ৮২ সালে ইডেনে বড় ম্যাচ হয়েছিল। তখনও ইডেনেই বড় ম্যাচ হত। লিগের ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে জামশিদ গোল করেছিল। ১ গোলে হেরেছিলাম ম্যাচটা। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মতো সমর্থকরাও প্রচণ্ড হতাশ ছিলেন। ফুটবলারদের উপর ক্ষুব্ধও ছিলেন।

আমার অবশ্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। মোহনবাগান সাপোর্টাররা বলছে, কাউকে ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হবে না, একমাত্র কৃষ্ণেন্দু রায়কে ছাড়া। দুর্ধর্ষ খেলেছিলাম ম্যাচটায়। ইডেন থেকে মোহনবাগান মাঠ কতটুকু আর পথ। তাও ক্লাব থেকে বাসে করে খেলতে যেতাম আমরা। ক্লাবের সামনে সে দিন ভিড় জমে গিয়েছিল। বাস থেকে কাউকে নামতে দিচ্ছিল না সমর্থকরা। বারবার বলে যাচ্ছিল, যদি কেউ যায়, তা হলে একমাত্র কৃষ্ণেন্দু রায় ক্লাবের ভিতরে যাবে। ও আমাদের শরীরের উপর দিয়ে হেঁটে যাবে। পরে অবশ্য ক্রতাদের বোঝানোয় ক্ষোভ কমেছিল সদস্য-সমর্থকদের। সকলেই ক্লাবে ঢুকেছিল।

আর একটা কথা না বললে হয়তো বড় ম্যাচের স্মৃতি পূর্ণতা পাবে না। তখনও বড় ম্যাচ হত, এখনও হয়। কিন্তু যুগের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছে। কোনও তুলনায় যাচ্ছি না। শুধুমাত্র সমর্থকদের মধ্যেই নয়, আমাদের সময় খেলোয়াড়দের মধ্যেও বড় ম্যাচ ঘিরে বাড়তি একটা উন্মাদনা ছিল। দুই ক্লাবেই ঘরে ছেলে বেশি। ফলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের আবেগটা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। হারের জ্বালা যেমন দীর্ঘমেয়াদী হত, তেমনই জয়ের উচ্ছ্বাসও।

(দীপঙ্কর ঘোষালের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুলিখন)