Kolkata Derby Retro Story: ‘ডে স্লিপের অত্যাচারেই নুন শো দেখা শুরু করি’

আমার ওই একটাই সিস্টেম চালু ছিল--- নুন শো দেখে, খেয়ে খেলতে যেতাম।

Kolkata Derby Retro Story: 'ডে স্লিপের অত্যাচারেই নুন শো দেখা শুরু করি'
Image Credit source: OWN Photograph
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 16, 2022 | 6:00 PM

ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস সেই কবে থেকে ময়দানের জার্সি পরে বসে রয়েছে। নতুন শতাব্দীতে পা দিয়েও ময়দান ঘিরেই পায়ে পায়ে এগিয়ে রয়েছে ইতিহাস। কত গল্প উপহার দিয়েছে এই ময়দান। আরও ভালো করে বললে, কলকাতা ডার্বি (Kolkata Derby) ঘিরে কত উত্তেজনা, কত উত্তাপ। তিন বছর পর আবার ডার্বি ফিরছে কলকাতায়। সেই চিরকালীন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান (East Bengal vs Mohun Bagan) ডার্বির নানা গল্প নিয়েই টিভি নাইন বাংলার এই ধারাবাহিক— ডার্বির হারিয়ে যাওয়া গল্প। আজ অতীতে ফিরলেন সমরেশ চৌধুরি (Samaresh Chowdhury)।

ইস্টবেঙ্গলে আট বছর খেলেছি। প্রত্যেকটা ডার্বি ম্যাচে বরাবর সেরাটা দিয়েছি। তাই একটা ডার্বি ম্যাচ নিয়ে আলাদা করে বলা কঠিন। ৭৮ পর্যন্ত সব ডার্বি ম্যাচে জিতেছি। মোহনবাগানে এক বছরের জন্য গিয়েছিলাম। ১৯৭৬ সালে। সবুজ-মেরুন জার্সিতে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ হারিয়েছিলাম। আবার ১৯৭৭ সালে দারুণ শক্তিশালী মোহনবাগানকেও হারিয়েছি। ফিরে যখন দেখি, তখন ৭৭ সালের এই ম্যাচটাই আমার স্পেশাল ডার্বি বলে মনে হয়। সে সময় সুধীর, গৌতম, হাবিব, আকবর, শ্যামরা মোহনবাগানে। কোচ প্রদীপদা। ইস্টবেঙ্গল সেই তুলনায় দুর্বল টিম। অধিকাংশই নতুন ফুটবলার। ভাস্কর, মনাদের মতো উঠতিরা। ওদের নিয়েই ২-০ গোলে বড় ম্যাচ জিতেছিলাম। ওই ম্যাচটা দেখে কাগজে চুনী গোস্বামী লিখেছিলেন, পিন্টু যে টিমে খেলে, তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়।

বড় ম্যাচ হোক আর সাধারণ কোনও ম্যাচ, চাপ কখনওই নিতাম না। সে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্য়াচ হোক, কোরিয়ার পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ। সব ম্যাচের আগেই নুন শো-য়ে সিনেমা দেখতাম। নিউ মার্কেটে সরস্বতী কেবিন নামে একটা রেস্তোরাঁ ছিল। নুন শোতে সিনেমা দেখে, ওখানে পাউরুটি-স্টু খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাঠে চলে যেতাম। এটাই ছিল আমার রুটিন। চারটে নাগাদ বাকিরা ড্রেস পরে প্রস্তুত। আমি চারটে নাগাদ মাঠে ঢুকতাম। সিনেমাটা বড় হলে কখনও আর একটু দেরি হত। তখন ৪.১৫ থেকে খেলা শুরু হত লিগের ম্যাচ। শঙ্কর মালি ড্রেস, বুট সব রেডি রাখত। আমি ঝটাঝট ড্রেস বদলে রেডি হয়ে নিতাম। দেখতাম, টিম প্রেয়ার তখন আরম্ভ হবে-হবে করছে। প্রদীপদা ঠিক দেখতে পেতেন আমাকে। কিন্তু কিছু বলতেন না। আমি গিয়ে সবার পেছনে দাঁড়িতে পড়তাম।

পরিবেশটাও তখন অন্যরকম ছিল। ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দেখার জন্য আমার সঙ্গে সমর্থকরাও হাঁটত। অনেকেই জিজ্ঞেস করত, ‘পিন্টু দা আজ কী হবে?’ আমিও বলতাম, কী আর হবে, মাঠে যাই, ২, ৩ গোলে জিতব। এরকমই একটা ক্যাজুয়াল মনোভাব ছিল। সত্যি বলতে কী, মাঠের নামার আগে পর্যন্ত আমার মধ্যে কোনও সিরিয়াসনেস থাকত না। আমি চাপ কমানোর জন্য সিনেমা দেখতাম, তা কিন্তু নয়। একটা বিশেষ কারণে সিনেমা দেখা শুরু করি। অনেকেই তখন বাড়িতে হাজির হত, ডে স্লিপ নেওয়ার জন্য। ডে স্লিপ দিয়ে খেলা দেখা যেত। তখন আমি ব্যাঙ্কে চাকরি করি। অনেকে ব্যাঙ্ক পর্যন্ত হানা দিত। দিনকে দিন সেটা বাড়ছিল। কী করি, ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন হঠাৎই মাথায় এল প্ল্যানটা। তাতে কেউ আমার টিকিটাও খুঁজে পাবে না। আমি নিস্তার পাব। আমার অফিসের একটা ছেলে সিনেমার টিকিট কেটে রাখত। ব্যালকনির কোণের সিটে বসে আয়েস করে সিনেমা দেখতাম। আর ওই ছেলেটা মাসাজ করে দিত। এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। তার আগে এমনও হয়েছে যে, আমার নামেই তিনশো-চারশো ডে স্লিপ জমা পড়েছে! পল্টুদা একদিন ডেকে বললেন, ‘এগুলা তুমি কী করতাসো! এত ডে স্লিপ দিলে তো মেম্বাররা খেলা দেখতে পাবে না।’

এখন শুনি এই আছে, ওই আছে। তখনও কিছু প্লেয়ার ছিল, যারা আগে ক্লাবে এসে রেস্ট নিত। আমার ওই একটাই সিস্টেম চালু ছিল— নুন শো দেখে, খেয়ে খেলতে যেতাম। মনুমেন্টের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতাম। সাপোর্টাররাও যাচ্ছে, আকাশবাণীর উল্টোদিকের সেই রাস্তা দিয়ে, সবাই তাকিয়ে দেখে আমাকে। কেউ আবার জিজ্ঞেসও করত, ‘কী ব্যাপার! আজ কি খেলবে না? আমি মজা করে উত্তর দিতাম, কেন খেলব না! এই তো যাচ্ছি।’

টিমের অন্য প্লেয়াররা ততক্ষণে ওয়ার্মআপ শুরু করে দিত। আমি তখনও রাস্তায়। তাই বোধহয় জিজ্ঞেস করত ওরা। কেন জানি না, মাঠে নেমে একটু দৌড়লেই ওয়ার্ম আপ হয়ে যেত। আসলে আমার ধরণটাই ছিল অন্যরকম।

(অনুলিখন ভিত্তিক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দীপঙ্কর ঘোষাল)