PELE Best Moments: ‘আমরা যতদিন বেঁচে থাকব, কৈশোরের দিনগুলি কখনোই ভুলতে পারব না…’

King Of Football: পেলে জানতেন যুদ্ধ চলছে। স্যান্টোস ক্লাবের বিজনেস ম্যানেজার অবাক হয়ে পেলেকে বলেছিলেন, সেখানে যাওয়ার চিন্তা সরিয়ে দিতে। জবাবে পেলে বলেছিলেন, 'আপনি চিন্তা করবেন না, ওরা যুদ্ধ থামিয়ে দেবে। এটা কোনও সমস্যাই নয়।' যুদ্ধ বিরতি হয়েছিল, লাগোসে পেলের স্যান্টোস ক্লাব ম্যাচও খেলেছিল।

PELE Best Moments: 'আমরা যতদিন বেঁচে থাকব, কৈশোরের দিনগুলি কখনোই ভুলতে পারব না...'
Image Credit source: OWN Photograph
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 30, 2022 | 6:30 AM

কলকাতা: আত্মজীবনীতে এমনটাই লিখেছেন ফুটবল সম্র্রাট পেলে। শুধু তিনিই কেন, কেউ কি ভুলতে পারে তাঁর কৈশোরের দিনগুলি? তেমনই ফুটবল প্রেমীদের কাছে চির-অমর পেলের প্রতিটা মুহূর্ত। যে বয়সেই দেখে থাকুন না কেন…। ঠিক কোন মুহূর্তগুলো বেশি করে মনে থাকবে! আলাদা করে বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। তাঁর আগেও অনেক ফুটবলার এসেছেন, তাঁর পরেও। কিন্তু সম্রাটের আসন তাঁর দখলেই। সেটা তাঁরই থাকবে। বর্তমান প্রজন্মের ফুটবলারদের মধ্য়ে পেলের ছায়া খোঁজার চেষ্টা করলে আসতে পারে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের নাম। যদিও সেই তুলনা অর্থহীন। তিনটি বিশ্বকাপ যাঁর ঝুলিতে, গোলের বন্যা যাঁর পায়ে, আদৌ কি তাঁর সঙ্গে কাউকে তুলনায় আনা যায়! বিশেষ কিছু মুহূর্ত তুলে ধরল TV9Bangla

পেলের কিছু মুহূর্তে নজর রাখা যাক…

১৯৫৬ সাল, ৭ সেপ্টেম্বর। সিনিয়র দলে পেলের প্রথম ম্য়াচ ও প্রথম গোল… ‘আমি কিছু আয় করলেই, মায়ের জন্য বাড়ি বানাব।’ তাঁর বয়স সবে ১৫। বাবার কাছে এমন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পেলে। কথা রেখেছিলেন। তার আগে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছিল নিজেকে। ১৬ বছরের জন্মদিনের আগেই স্যান্টোস ক্লাবের সিনিয়র দলের হয়ে খেলার সুযোগ। করিন্থিয়াসের বিরুদ্ধে ম্যাচ। পেশাদার কেরিয়ারের অভিষেক ম্যাচেই গোল করেন পেলে। যদিও প্রথম একাদশে খেলেননি। দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নেমেছিলেন পেলে। সতীর্থ পেপের শট আটকে গেলেও ফিরতি বলে জালে বল জড়ান পেলে।

১৯৬২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। কোপা লিবের্তোদসের প্লে-অফ ম্যাচ। প্রতিপক্ষ পেনারোল। স্য়ান্টোস ক্লাবের অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ফাইনালে খেলছে তারা। পেলে এই ক্লাবের হয়ে বেশ কিছু ট্রফি জিতে ফেলেছেন। অধরা ছিল কন্টিনেন্টাল কোনও ট্রফি। বুয়েনস আইরেসের নিরপেক্ষ ভেন্যুতে উরুগুয়ের শক্তিশালী ক্লাবের বিরুদ্ধে ফাইনাল। পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন পেলে। ১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্যান্টোস। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর সঙ্গেই পেলের গোল। নির্ধারিত সময়ের আগের মুহূর্তেই জোড়া গোল পূর্ণ করেন পেলে। এই প্রতিযোগিতা জেতার ফলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী ক্লাব এবং ইউরোপ সেরা বেনফিকার বিরুদ্ধে নামে স্য়ান্টোস। দুই লেগ মিলিয়ে ৮-৪ ব্যবধানে জেতে স্য়ান্টোস। ৮টির মধ্যে পাঁচটি গোলই পেলের।

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২১ জুন, প্রতিপক্ষ ইতালি। বিশ্বকাপে সেরা দল নামানোর সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। মেক্সিকোয় বিশ্বকাপ। দলে অভিজ্ঞ ফুটবলার পেলে (২৯ বছর)। প্রথম ম্যাচেই অনবদ্য ফুটবল সম্রাট। চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে জয় সূচক গোল পেলের। এক সপ্তাহ পরই রোমানিয়ার বিরুদ্ধ ম্যাচে দলের ৩-২ জয়ে শেষ দুটি গোল পেলের। সেখান থেকে রিভেলিনো, তোস্তাও, জাইরজিনোর মতো বাকিরাও ব্রাজিলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। নকআউট পর্বে পরপর ম্যাচে হতাশ করেন পেলে। তারপর এল সেই ফাইনাল। আজুরিদের বিরুদ্ধে ম্যাচের ১৮ মিনিটে ব্রাজিলের গোলের খাতা খোলেন পেলে। রিভেলিনোর ক্রসে পেলের অনবদ্য হেড, বাঁচাতে পারেননি আজুরি গোলকিপার এনরিকো আলবের্তোসি। ৪-১ ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।

১৯৫৮ বিশ্বকাপ, ২৯ জুন। সুইডেনের বিরুদ্ধে ফাইনাল। পুরো টুর্নামেন্টে নজর ছিল মাত্র ১৭ বছরের এক উঠতি প্রতিভা পেলের দিকে। গোতেনবার্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ১৫ জুন মাঠে নামেন সেই উঠতি প্রতিভা। চার দিনের ব্য়বধান। কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের বিরুদ্ধে ১-০ জেতে ব্রাজিল। একমাত্র গোলটি করেন পেলে। তার পাঁচ দিন পর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ৫-২ ব্য়বধানে জেতে ব্রাজিল। হ্য়াটট্রিক করেন তরুণ স্ট্রাইকার পেলে। ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে ৫৬ মিনিটে ২-১ এগিয়ে ব্রাজিল। তারপরই মুগ্ধকর একটি গোল। পেলে নিজেই যে ভাবে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেই গোলের- ‘দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিট বাকি থাকতে স্কোরলাইন ৩-১ করি। নিল্টনকে চেঁচিয়ে বলেছিলাম লম্বা সেন্টার দিতে। বল আসতে বুকে নামাই। ডিফেন্ডার গুস্তাভসন আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। তার মাথার উপর দিয়ে বল ফ্লিপ করে এগিয়ে যাই এবং ভলিতে গোল করি।’ সে বারই প্রথম বিশ্বকাপ জেতে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।

১৯৬৯ সালের নাইজেরিয়া সফর। স্যান্টোস ক্লাবের হয়ে সে বছর নাইজেরিয়ায় যান পেলে। পরিস্থিতি মোটেও সুখকর ছিল না। নাইজেরিয়ায় প্রায় দু-বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। চারিদিকে নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ২৬ জানুয়ারি সতীর্থদের সঙ্গে লাগোসে পা রাখেন পেলে। নাইজেরিয়া-বায়াফ্রা ৪৮ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল পেলের ফুটবল ম্যাচের জন্য। তার আগে অনেক বারই স্যান্টোস ক্লাব নাইজেরিয়ায় গিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের সময়! পেলে জানতেন যুদ্ধ চলছে। স্যান্টোস ক্লাবের বিজনেস ম্যানেজার অবাক হয়ে পেলেকে বলেছিলেন, সেখানে যাওয়ার চিন্তা সরিয়ে দিতে। জবাবে পেলে বলেছিলেন, ‘আপনি চিন্তা করবেন না, ওরা যুদ্ধ থামিয়ে দেবে। এটা কোনও সমস্যাই নয়।’ যুদ্ধ বিরতি হয়েছিল, লাগোসে পেলের স্যান্টোস ক্লাব ম্যাচও খেলেছিল। ম্যাচটি শেষ হয় ২-২ স্কোরে। ম্যাচের পর পেলে লিখেছিলেন- ‘আমার সতীর্থরা এখনও সে দিনের কথা মনে রেখেছে। চারিদিকে সাদা পতাকা এবং প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল পেলের ম্যাচ দেখতে শান্তি বজায় রাখার বার্তা।’