Cricket Love Story: বাতাসেই যদি ভালোবাসা থাকে, দু-দেশের সীমান্ত কি বাধা হয়ে দাঁড়ায় কখনও?
Sania Mirza and Shoaib Malik Love Story: একটা সময় ভারতীয় টেনিসের গ্ল্যামার গার্লের পেশাদার কেরিয়ারে খরা চলছিল। অন্য দিকে, ক্রিকেট কেরিয়ারে কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছিলেন শোয়েব মালিকও। তারপর... রূপম ইসলামের সেই গানের মতো-'তোমার ক্ষত, আমার মতো, এসো আমরা বন্ধু হই।'
প্রেমের চেয়ে সুন্দর আর কিছু হয় না। আবার প্রেমের মতো ঝুঁকি আর কিছুতে নেই। মিয়াঁ-বিবি রাজি হলেও এতে হুমকি থাকে। চোখরাঙানি থাকে। কথা না শুনলে বেদম প্রহারও জোটে অনেক সময়। ঘরবন্দি, ফোন কেড়ে নেওয়া, পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে দাদ্দারা— আরও কত কত কী! প্রেমের জয় বোধহয় এখানেই। প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ঠেলে, অসংখ্য বিনিদ্র রজনী পেরিয়ে প্রেম ঠিক আলোয় এসে পা দেয়। প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে মিয়াঁ-বিবি হয়ে যান তাঁরা। কিন্তু ভুলে যান কি প্রেমের সেই যন্ত্রণাময় দিনগুলো? ভরা ফ্রেব্রুয়ারি মানে হীমেল বাতাসে প্রেমের গন্ধ। বসন্ত এসে গ্যাছে! আর এই বসন্তে বাছাই কিছু প্রেমের গল্প তুলে ধরল TV9 Bangla। তৃতীয় কিস্তিতে সানিয়া মির্জার (Sania Mirza) মারকাটারি প্রেমকাহিনি।
ভালোবাসা…প্রেম…। শব্দগুলো শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কত ছবি। এমন হতে পারে কিংবা হতে পারত! কল্পনার জগতে ভাসতে ভালো লাগে। আচ্ছা সানিয়া মির্জা এবং শোয়েব মালিকেরও (Shoaib Malik) এরকম মুহূর্ত এসেছিল? ভালোবাসার মাসে, তাঁদের প্রেম-ভালোবাসা নিয়েই একটু কথা হোক না। বলিউডের ‘রিফিউজি’ সিনেমার সেই গান মনে পড়ে? একটা লাইন রয়েছে, বাংলায়-সীমান্ত শুধু মানুষের জন্য, পাখি-নদী কিংবা হাওয়ার জন্য় নয়। তেমনই আমাদের একটা বহুল প্রচলিত বাক্য, ‘লাভ ইজ ইন দ্য এয়ার’! বাতাসেই যদি ভালোবাসা থাকে দুই দেশের সীমান্ত কি বাধা হয়ে দাঁড়ায় কখনও?
ভালোবাসা অনেকটা জলের মতো। কখন… কোথায়…কোন আকারে ধরা দেবে, বলা কঠিন। এমনই একটা মুহূর্ত, যেখানে টেনিস মিলেছিল ক্রিকেটের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, যেখানে ‘বীর-জারার’ মতো ভালোবাসার কাছে আবছা হয়ে গিয়েছিল ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত। ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। কে প্রথম ভালোবাসার আতর গায়ে মেখেছিল, তার উত্তর নাই বা খোঁজা হল…। তাদের প্রথম সামনা সামনি সাক্ষাৎ অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে।
আত্মজীবনীতে সানিয়া মির্জা তাঁদের ভালোবাসার শুরুয়াত থেকে বিয়ের সম্পর্কে অনেক কিছুই লিখেছেন। ক্রিকেট এবং টেনিস বরাবরই একে অপরের পরিপূরক। তাই নয় কী! ক্রিকেট ও টেনিসের সম্পর্কের নানা উদাহরণ দেওয়া যায়। তা সে খেলার ধরণের দিক থেকেই হোক কিংবা সরঞ্জামে। একটা সময় ভারতীয় টেনিসের গ্ল্যামার গার্লের পেশাদার কেরিয়ারে খরা চলছিল। অন্য দিকে, ক্রিকেট কেরিয়ারে কঠিন সময়ের মধ্যে যাচ্ছিলেন শোয়েব মালিকও। তারপর… রূপম ইসলামের সেই গানের মতো-‘তোমার ক্ষত, আমার মতো, এসো আমরা বন্ধু হই।’
সফরটা শুরু হয়েছিল অবশ্য় বিতর্কে। সেলিব্রিটি গসিপ কি! হয়তো না, আবার হয়তো হ্য়াঁ। দীর্ঘ দিনের সম্পর্ককে নাম দিতে বাগদান সারেন শোয়েব-সানিয়া। এরপরই প্রকাশ্যে আসে, হায়দরাবাদের আয়েষা সিদ্দিকিকে আগেই বিয়ে করেছিলেন শোয়েব মালিক! হায়দরাবাদের আয়েষা সিদ্দিকি এমনটাই দাবি করেছিলেন। পরবর্তীতে শোয়েব মালিকও সে কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। যে বছর বিয়ে হয়, একই বছর আয়েষার সঙ্গে ডিভোর্সও হয় শোয়েবের। এটা গেল কয়েনের একটা দিক। সানিয়া সম্পর্কেও শোনা গিয়েছিল, বন্ধু সোহরাব মির্জার সঙ্গে সম্পর্কটা ‘ফ্রেন্ড-জোন’ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সোহরাব-সানিয়ার এনগেজমেন্টও হয়েছিল। কিন্তু পরিণতি পায়নি। আয়েষা কিংবা সোহরাব, নিজেদের মতো করে একলা হয়ে পড়েছিলেন। আমি থেকে আমরা হয়ে উঠেছিলেন সানিয়া মির্জা-শোয়েব মালিক। সালটা ২০১০। হায়দরাবাদের এক পাঁচতারা হোটেল। জাকজমক এক অনুষ্ঠানে বিয়ের পর্ব সম্পন্ন হয় সানিয়া-শোয়েবের। ভালোবাসার পরিণতি বোধ হয় এটাই। তাই নয় কি?
বিয়ের আগে সে ভাবে মুখোমুখি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ হত না সানিয়া-শোয়েবের। ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক সম্পর্ক কারও অজানা নয়। এই দু-জনকে নিয়েও কম প্রশ্ন ওঠেনি। তাই যেন পার্সিয়ান কবি, ফিলোসফার ‘রুমি’র সেই বিখ্য়াত উক্তিকে পাথেয় করেছিলেন সানিয়া-শোয়েব। ‘এখান থেকে অনেক দূরে, ঠিক এবং ভুলের পর যে স্থান রয়েছে, আমি তোমার সঙ্গে সেখানে দেখা করব…’। সানিয়া এবং শোয়েবের কাছে সেই স্থান দুবাই। পেশাদার জীবনের মাঝে সময় বের করে, তাঁদের দেখা হত সেখানেই। তাঁদের সম্পর্ক চারা থেকে গাছের আকার নিয়েছিল কার্যত দুবাই থেকেই। পরবর্তীতে সেখানেই সংসার পাতে এই জুটি। আর ২০১৮ সালে তাঁদের ভালো বাসার গাছে প্রথম ফুল ফোঁটে। পুত্র সন্তান ইজহানের জন্ম হয় ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর।
সানিয়া-শোয়েবের জীবনে অন্যতম কঠিন সময় আসে কোভিডের কারণে। ভ্রমণ সম্পর্কিত নানা বিধি নিষেধ। শোয়েব পাকিস্তানে, সানিয়া ভারতে। ভালোবাসার বাঁধন কোনও দিন ছিঁড়ে যায় কী না, তর্কের প্রশ্ন। বাঁধন আলগা হয়, এটুকু নিশ্চিত। সন্তানের জন্মদিন শেষ বার দুবাইতে এক সঙ্গে দেখা যায় এই জুটিকে। এরপর থেকে আবার সানিয়া হায়দরাবাদে, শোয়েব পাকিস্তানে। মাঝে এমনও শোনা গিয়েছিল, তাঁদের সেপারেশন চলছে, পাকাপাকি বিচ্ছেদ শুধু ঘোষণা হওয়া বাকি। সানিয়ার কিছু সোশ্য়াল মিডিয়া পোস্টেও তেমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে তা অবশ্য় থিঁতিয়ে গিয়েছে। হয়তো মাঝের ‘আলগা’ বাঁধন ঠিক হয়ে গিয়েছে!
তবে আয়েষা সিদ্দিকি ও সোহরাবের সেই ঘটনা থেকে প্রশ্ন জাগে, সানিয়ার সঙ্গে শোয়েবের ভালোবাসা কি প্রতারণায় শুরু হয়েছিল? সানিয়া কি আগে কিছু জানতেন না? শোয়েব কি সবটা জানিয়ে সানিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিলেন? ঠিক একই ভাবে, সানিয়াও কি শোয়েবের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন তাঁর সমস্ত অতীত?
এত প্রশ্ন তোলা থাক। এই বসন্তে তাঁরা ভালো-বাসায়, ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকুক। বাঁধন হোক আরও দৃঢ়। ইজহান মা-বাবার ভালোবাসায় বেড়ে উঠুক…।