রোভারের নিখুঁত অবতরণের পর কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে বসেছিলাম: ডক্টর স্বাতী মোহন

অনেকদিন ধরেই মঙ্গলগ্রহে প্রাণ ও জলের হদিশ চালাচ্ছিল নাসা। সেই জন্যই পাঠানো হয়েছে এই রোভার।

রোভারের নিখুঁত অবতরণের পর কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে বসেছিলাম: ডক্টর স্বাতী মোহন
মাত্র এক বছর বয়সেই দেশ ছেড়ে মা-বাবার সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন স্বাতী।
Follow Us:
| Updated on: Feb 20, 2021 | 4:06 PM

মঙ্গল গ্রহে সফলভাবে ল্যান্ড করেছে নাসার রোভার ‘পারসিভের‍্যান্স’। রোভারের নিখুঁত অবতরণের পর থেকেই চলছে উৎসব। এই মহাযজ্ঞের অন্যতম পুরোধা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ডক্টর স্বাতী মোহন। নাসার রোভার যে সফলভাবে মঙ্গলের মাটি ছুঁয়েছে এ খবর প্রথম ঘোষণা করেছিলেন স্বাতীই। তাঁর কথায়, ‘ইট ওয়াজ এ ওয়ার্ল্ড রাইড’।

বিগত প্রায় দেড় দিন ধরে সংবাদ শিরোনামে রয়েছেন স্বাতী। এমনকি টুইটারে ট্রেন্ডিং রয়েছে তাঁর কপালের টিপ সম্পর্কিত নানা আলোচনা। যতই তিনি আমেরিকা নিবাসী হন না কেন, ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত দেশবাসী। রোভারের নিখুঁত অবতরণের খবর ঘোষণা করতে পেরে উচ্ছ্বসিত স্বাতী নিজেও। তিনি বলছেন, “নাসার এই মিশনের ঘোষক হতে পেরে আমি গর্বিত।”

কেমন ছিল রোভার অবতরণের আগের মুহূর্তগুলো

ডক্টর স্বাতী মোহনের কথায়, “নিজের কাজের প্রতি একাগ্র ছিলাম আমি। দলের সকলেই মারাত্মক পরিশ্রম করেছেন। রোভার পারসিভের‍্যান্স যখন মঙ্গলের মাটি ছুঁয়েছিল তখন আমিই ঘোষণা করেছিলাম। চারপাশ থেকে সবাই চিৎকার করে উঠেছিল। উদযাপনে মেতেছিল। আমি অবশ্য কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে নিজের চেয়ারে বসেছিলাম। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। তারপর বুঝলাম যে, সত্যিই ব্যাপারটা সম্ভব হয়েছে। এরপরে উদযাপনে যোগ দিয়েছিলাম আমিও।”

আতঙ্ক-উত্তেজনা সব মিলিয়ে কেমন ছিল অভিজ্ঞতা

যেহেতু স্বাতী ছিলেন নাসার এই মিশনের ঘোষক, তাই প্রতিটি মুহূর্ত নখদর্পণে রাখতে হচ্ছিল তাঁকে। তাঁর কথায়, “মনিটরের নীচে কাগজ রাখা ছিল। কিছু এ দিক-ও দিক হলে কী বলব সব লেখা ছিল সেখানে। সবাই খুব উত্তেজিত ছিলাম। সব ব্যাপারে ভাল ভাবে নিশ্চিত না হলে টিমকে কিছু বলতে পারতাম না। যে কোনও মুহূর্তে যা কিছু ঘটতে পারত। তবে এ যাত্রায় রোভারের সফল অবতরণ হয়েছে।”

মাত্র এক বছর বয়সেই দেশ ছেড়ে মা-বাবার সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন স্বাতী। প্রথমে থাকতেন পেনসিলভ্যানিয়ায়। তারপর ওয়াশিংটন ডিসি-র স্থায়ী বাসিন্দা হন স্বাতী। ছোট থেকেই পড়াশোনার ক্ষেত্রে মনযোগী ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যরাও পড়াশোনার ব্যাপারে চিরকাল উৎসাহ দিয়েছিলেন স্বাতীকে। তাঁর কথায়, “বাড়ির লোকেদের কাছে পড়াশোনা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি যা করতে চেয়েছি সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন ওঁরা। সকলেই বলতেন, তুমি পারবেই, এগিয়ে যাও। কঠোর পরিশ্রম করো।”

যুব সম্প্রদায়ের জন্যও বার্তা দিয়েছেন ডক্টর মোহন। স্বাতী বলেছেন, “হাল ছেড়ো না। বরং নিজের প্যাশনকে ফলো করো। সাফল্য হোক বা ব্যর্থতা, সব অভিজ্ঞতাই জরুরি। কী শিখছ সেটাই বড় কথা।”

নাসার এই মিশনের মূল লক্ষ্য

অনেকদিন ধরেই মঙ্গলগ্রহে প্রাণ ও জলের হদিশ চালাচ্ছিল নাসা। সেই জন্যই পাঠানো হয়েছে এই রোভার। এই রোভারের ডিজাইনের ক্ষেত্রে মোট চারটি বিষয় মাথায় রাখা হয়েছিল।

১। রোভারে কী কী যন্ত্রাংশ (ইন্সট্রুমেন্ট) থাকবে।

২। রোভার কোথায় যাবে।

৩। কী কী পরিমাপ থাকবে।

৪। রোভার কী কী স্যাম্পেল সংগ্রহ করবে।

এই অভিযানে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রোভারের ল্যান্ডিং বা নিখুঁত অবতরণ হওয়া। কারণ মঙ্গল পৃষ্ঠে সঠিকভাবে রোভার অবতরণ করলে তবেই স্যাম্পেল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। রোভারের নিখুঁত অবতরণ এবং সঠিকভাবে স্যাম্পেল সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে আসা, এই গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, তবেই সফল হবে অভিযান।