লুচি ছাড়া বাঙালি অসম্পূর্ণ। সে রবিবারের সকালে শুকনো আলুর দম দিয়ে হোক বা অনুষ্ঠান বাড়ির জলখাবারে সাদা আলু চচ্চড়ির সঙ্গে। কিংবা বাড়িতে অতিথি এলে লম্বা বেগুন ভাজা আর পাঁঠার মাংস সহযোগে। লুচি বাঙালির আরেক আবেগও বটে।
লুচির ইতিবৃত্তান্ত
এই লুচির জন্ম হল কী ভাবে? লুচি কি আদৌ এই দেশীয় খাবার? ইতিহাস কিন্তু বলছে একদম অন্য কথা। লুচি বা রুটি কোনওটাই কিন্তু বাঙালিদের নিজস্ব খাবার নয়। আসলে এই সবই গম জাত খাদ্য দ্রব্য যা বাংলায় উৎপাদন শুরু হয়েছে অনেক পরে।
জন্ম ইতিহাস
গম উৎপাদনের মূল ক্ষেত্র উত্তর ভারত। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি। হরপ্পা সভ্যতার সময় গম চাষ শিখেছিল ভারত। পরবর্তী ৫০০ বছর ধরে গঙ্গা-যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলে এসে পৌঁছোয় গম। আসি লুচির কথায়।
জন্মভূমি
প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে লুচির উল্লেখ খুঁজে পাওয়া যায় না। সংস্কৃতি সাহিত্যে ২৮০০ বছর আগে শুশ্রুতের একটি বইতে 'শোষকুলি' নামক এক খাবারের উল্লেখ আছে। যার বিবরণ মিলে যায় বাঙালির প্রাণের ঘিয়ে ভাজা সাদা ময়দার লুচির সঙ্গে।
লুচি ও সাহিত্য
পরবর্তীতে আরও ১০০০ বছর পরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসক চক্রপাণী দত্তের বইতেও এই শোষকুলির কথা পাওয়া যায়। চক্রপাণী ছিলেন পাল বংশের দ্বাদশ পাল রাজার সভাসদ। আর তাঁর বাবা ছিলেন পাল রাজাদের রাজ রন্ধনশালার উপদেষ্টা।
লুচির পূর্বপুরুষ
শোষকুলির চল আম বাঙালির পাতে খুব একটা ছিল না। লুচি নাম হল কী করে? কেউ বলেন হিন্দিতে একটি কথা আছে 'লুচ লুচিয়া'। যার অর্থ পিচ্ছিল। এর থেকেই লুচির উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে। লুচি তিন প্রকার- সাপ্তা, খাস্তা, পুরি।
বাঙালির লুচি আবিষ্কার
ময়দা ময়েন দিয়ে মাখলে খাস্তা মুচমুচে, জল দিয়ে মাখলে সাপ্তা। আর আটার লুচি হলে পুরি। লুচির সঙ্গে আভিজাত্যের একটা যোগ আছে। সময়ের সঙ্গে রাজাদের হেঁশেল থেকে কলকাতার গোড়া পত্তনের পরে জমিদার বাড়িতে ক্রমে জনপ্রিয় হয় ওঠে এই পদ।
লুচির রকমফের
শোনা যায়, লুচি আগে ছিল রুটির মতোই বড়। তবে বাঙালিদের লুচির সঙ্গে থাকত আরও নানা পদ। তাই সবের সঙ্গে খাওয়ার জন্য গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে ছোট হতে থাকে তার আকারও। এইভাবেই আবিষ্কার হয় আজকের লুচির।