'রায়বাঘিনী ননদিনী'- রায়বাঘিনী আসলে কে জানেন? তাঁর ভয়ে কাঁপত মোঘল সম্রাটও?
credit:TV9
TV9 Bangla
'রায়বাঘিনী ননদিনী', কারও ননদ খুব জাঁদরেল স্বভাবের হলে তাঁকে ঠাট্টা করে এমনটা বলা হয়। কিন্তু রায়বাহিনীটি আসলে কে? কোথা থেকে এল এই উপাধী?
রায়বাঘিনীর ইতিহাস সেই মোঘল আমলের। হাওড়া এবং হুগলি অন্তর্গত স্বাধীন রাজ্য ছিল ভুরিশ্রেষ্ঠ। কালক্রমে যা অপভ্রংশ হয়ে নাম হয় ভুরশুট। এখানকার রাজা ছিলেন রুদ্রনারায়ণ রায় মুখোটি। সেখানকার জমিদার দীননাথ চৌধুরির কন্যা ভবশঙ্করী চৌধুরির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিয়ে করেন।
ছোট থেকে বাবার কাছে অস্ত্রশিক্ষা, ঘোড়াচালনা সব শিখেছিলেন তিনি। কয়েক বছর পর অকাল মৃত্যু হয় রুদ্রনারায়ণের। রাজপাঠ সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে ভবশঙ্করীর কাঁধে। অন্যদিকে মোঘল সম্রাট আকবরের কাছে যুদ্ধে হেরে উড়িষ্যার কাছে লুকিয়ে ছিল পাঠান সেনা।
পাঠান সর্দার মোঘলদের উপর প্রত্যাঘাত করতে রানির শরণাপন্ন হন। কিন্তু রানি অসম্মত হলে ভুরশুট আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় ওসমান খান। পাঠান সেনা হিন্দু সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে রাজ্যে প্রবেশ করে। ভুরশুটের প্রধান সেনাপতি চতুর্ভূজ চক্রবর্তী বিশ্বাসঘাতকতা করে সঙ্গ দেয় পাঠানদের।
সেই খবর পৌঁছে যায় ভবশঙ্করীর কাছে। তৎক্ষণাৎ নিজেকে সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন ভবশঙ্করী। সেনাকে রণ সাজে সজ্জিত হয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে বলেন তিনি। নিজে কয়েকজন বিশ্বস্ত মহিলা সৈন্যকে নিয়ে রণসজ্জার উপরে সাদা কাপড় জড়িয়ে দেবী চণ্ডীর পুজোয় বসেন।
রাতের অন্ধকারে ব্যবসায়ী, ফকির, পর্যটক, সন্ন্যাসী বেশ ছেড়ে পাঠান সৈন্য রাজ্য আক্রমণ করলে রণমূর্তি ধরেন ভবশঙ্করী। তাঁর বাঘের মতো ক্ষিপ্র তরোয়ালের আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যায় পাঠান সেনা। হার মানেন ওসমান খান। মন্দিরে শেষ হয় ওসমান খানের দল।
কিছু দূরে থাকা পাঠানদের আরেকটি দল গ্রামে শৈব সাধুদের আখড়া আক্রমণ করে। সেখানেও তাঁদের অপেক্ষায় ছিল ভবশঙ্করীর বাহিনী। রানির যুদ্ধের কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে।
আকবর নিজের সেনাপতি মানসিংকে পাঠিয়ে ভুরশুট রাজ্যের সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি করেন। পাশাপাশি রানি ভবশঙ্করীকে দেন রায়বাঘিনী উপাধি। কেউ কেউ বলেন এই কীর্তি একটু ভয় পেয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই লোকমুখে ডাকাবুকো মহিলাকে রায়বাঘিনী বলার চল শুরু হয়।