জগন্নাথদেবকে কেন বলা হয় ঠুঁটো? এর নেপথ্যে রয়েছে রোমাঞ্চকর কাহিনি
TV9 Bangla
Credit - Getty Images
জগন্নাথদেবকে অনেকেই ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ বলেন। কিন্তু কেন? সেই গল্প জানতে হলে যেতে হবে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। তখন প্রায় ৩৬ বছর পরে শবর জাতির জরা নামের এক ব্যাধ হরিণ ভেবে ভুল করে শ্রীকৃষ্ণের পায়ে তির মারেন।
সেই তিরবিদ্ধ হয়ে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়। তারপর তাঁর মৃতদেহ সৎকার করেন জরা। এরপর পিণ্ড অর্পণ করেন সমুদ্রে। সেই পিণ্ড ভাসতে ভাসতে এক উজ্জ্বল নীল রংয়ের পাথরে পরিণত হয়। তা নীল রং হওয়ায় ও শ্রীকৃষ্ণের নাম মাধব হওয়ায় সেই পাথর পরিচিত হয় নীলমাধব নামে।
শবর জাতির রাজা নীলমাধবকে উদ্ধার করেন পুরীর সমুদ্রতীরে। গভীর নিমগাছের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে প্রতিদিন পুজো করতে শুরু করেন। অন্যদিকে অবন্তী সাম্রাজ্য অর্থাৎ এখনকার মধ্যপ্রদেশে বিষ্ণু ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন নীলমাধবের পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান।
ইন্দ্রদ্যুম্ন তাঁর কুল পুরোহিতের ভাই বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের খোঁজ করতে এখনকার ওড়িশায় পাঠান। বিদ্যাপতি সেখানে পৌঁছে শবরদের গ্রামে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে শবররাজ বিশ্ববসুর আস্থাভাজন হয়ে তাঁর মেয়ে ললিতাকে বিয়ে করেন।
স্ত্রী ললিতার মাধ্যমে তিনি তাঁর শ্বশুরের কাছে নীলমাধবের দর্শন পাওয়ার আবদার করেন। বিশ্ববসু এরপর এক শর্তে বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের দর্শন করার কথা জানান। নীলমাধব দর্শন করতে যাওয়ার রাস্তায় চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে।
সেই সময় বিদ্যাপতি গোপনে রাস্তায় সর্ষের বীজ ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে যেতে থাকেন। আর নীলমাধবের দর্শন পাওয়া মাত্র তিনি খবর পাঠান ইন্দ্রদ্যুম্নকে। তিনি পৌঁছে যান ওড়িশায়। পৌঁছে দেখেন নির্দিষ্ট স্থানে নীলমাধব নেই।
এরপর বিষ্ণুকে তুষ্ট করতে ইন্দ্রদ্যুম্ন অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। যজ্ঞের শেষে দৈববাণী হয় যে, পুরীর সমুদ্রতীরে নীলমাধব ভেসে আসবেন নবকলেবরে, এক নিম কাঠের রূপে। সেই কাঠ থেকে মূর্তি তৈরি করতে হবে। কিছুদিন পর সমুদ্র তীরে ভেসে ওঠে এক বিরাট আকৃতির নিমকাঠ।
কিন্তু কাঠ কেটে যোগ্য মূর্তি বানানোর কোনও শিল্পী পাওয়া যায় না। বিষ্ণুর আদেশে মর্তে আসেন ছুতোর রূপে বিশ্বকর্মা মর্তে আসেন। তিনি শর্ত দেন মাত্র ২১ দিনের মধ্যে মূর্তি গড়ে দেবেন। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়া অবধি কেউ তা দেখতে পাবেন না।
এরপর একপক্ষকাল অর্থাৎ ১৪ দিন কাজ করার পর যখন বন্ধ দরজার ভেতর থেকে কাঠের আওয়াজ থেমে যায়। সেই সময় রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ও রানী গুন্ডিচা উৎসুক হয়ে পড়েন। এরপর তাঁরা দরজা খুলতেই অন্তর্হিত হন বিশ্বকর্মা। সেই স্থানে পড়ে থাকে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি।
তাঁদের সেইসময় বড়বড় গোল চোখ, নাক, কান ও পা অসমাপ্ত। ঠিক তখনই দৈববাণী হয় যে অসম্পূর্ণ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর সেই সময় থেকেই পুরীর শ্রী মন্দিরে পুজিত হয়ে আসছেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। জগন্নাথের এই রূপই লোকমুখে ঠুঁটো জগন্নাথ নামে পরিচিত।
বিঃ দ্রঃ - জগন্নাথদেবকে 'ঠুঁটো জগন্নাথ' বলার নেপথ্যে যে রোমাঞ্চকর পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে, তার হদিস পাওয়া যায় স্কন্ধপূরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপূরাণ ও ওড়িয়া মহাভারতে। এ বিষয়ে কোনও দায় নেই TV9 Bangla-র।