ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ এ জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে,এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্যযুগে।
মালবদেশের সূর্যবংশীয় পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণুর জগন্নাথরূপী মূর্তি নির্মাণ করেন এবং রথযাত্রারও স্বপ্নাদেশ পান। পরবর্তীতে তাঁর হাত ধরেই পুরীতে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রার প্রচলন শুরু হয়।
কথিত রয়েছে , পুরীর রথযাত্রায় যিনি একবার রথের রশি ছুঁয়ে নেন, তাঁর সমস্ত ইচ্ছা পুরণ হয়। আর সেই থেকে রথের দড়ি ছোঁয়া ও টানবার পরম্পরা চালু হয়েছে। প্রতি বছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা।
রাজপরিবারের নিয়ম অনুসারে, যিনি রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন, তিনিই পুরীর রাজা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর পর পর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন।
সোনার ঝাড়ু ও সুগন্ধী জল দিয়ে রথের সম্মুখভাগ ঝাঁট দেন। তারপরই পুরীর রথের রশিতে টান পড়ে। শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।
অন্য সব জায়গায় রথযাত্রায় একটা রথ দেখা গেলেও এখানে তিনটে রথ দেখা যায়। সারা বছর পুরীর মন্দিরে জগন্নাথদেব পূজিত হলেও সেখানে সকলের প্রবেশাধিকার ছিল না।
জগন্নাথদেবের রথের প্রতিটি অংশই অতি পবিত্র, কারণ তিনটি রথেই বিরাজ করেন তেত্রিশ কোটি দেবতা। রথ তিনটির চাকার ব্যাস সাত ফুট। প্রতি রথেই ৩৪টি অংশ — চাকা, আরা, ডাণ্ডিয়া, বেকি, হংসপট, কানি, শঙ্খদ্বার, জালি, গইপট, সিংহাসন, রুশিপট ইত্যাদি।
রথের চূড়ায় কলস ও সুদর্শন চক্র এবং সবার উপরে ধ্বজা। কয়েক টন ওজনের এই রথ তিনটি টানতে যে খুব শক্তপোক্ত রশি বা দৌড়ি লাগে। তাতে সন্দেহ নেই।
তিনটি আলাদা রথে চড়ে সওয়ার হন পুরীর জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা। এই তিনটি আলাদা রথের আলাদা আলারা নাম রয়েছে। রথযাত্রা উৎসবের মূল দর্শনীয় দিকটিও হল এই রথ তিনটি।
প্রতি বছর উল্টোরথের পর রথ তিনটি ভেঙ্গে ফেললেও রথের পার্শ্বদেবদেবীর মূর্তি, সারথি ও ঘোড়াগুলিকে সযত্নে তুলে রাখা হয়।