Case Of Chicken Pox12

02nd March, 2024

জলবসন্ত হলে ‘মায়ের দয়া’ হয়েছে, কেন বলা হয়?

credit: Pinterest

TV9 Bangla

image
Case Of Chicken Pox11

 চিকেন পক্স হলে শরীরে যে গুটি গুটি দেখা যায়, তরল পদার্থ ভরা ওই ভ্যাসিকুলার র‍্যাশগুলি প্রচণ্ড চুলকায় এবং অনেক সময় জ্বরও আসে। 

Case Of Chicken Pox10

চিকেন পক্স সেরে গেলেও এর দাগ দীর্ঘদিন পর্যন্ত থেকে যায়। তবে গ্রামবাংলায় এখনও চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হলে দেবী শীতলার পুজো দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

Case Of Chicken Pox9

নমামি শীতলাং দেবীং রাসভস্থাং দিগম্বরীং মার্জ্জনীকলসোপেতাং সূর্পালঙ্কৃতমস্তকাম্‌।।

এই সংস্কৃত শ্লোকের অর্থ হল, সেই দিগম্বরী শীতলা দেবীকে প্রণাম জানাই যিনি গাধার উপর বসে থাকেন, যিনি ঝাঁটা ও কলস শোভিতা, যাঁর মাথার অলংকার হল কুলো।

হিন্দুর ‘শীতলা’, মুসলমানের ‘বুড়াবুবু’, বৌদ্ধের পর্ণ শর্বরীর সঙ্গে বিরাজিতা ‘হারিতী’, আদিবাসীদের ‘বসন্তবুড়ি’, উত্তরভারতের পার্বতী, দক্ষিণের শীতলাম্মা ও বাংলাসাহিত্যের শীতলামঙ্গলে বহু চর্চিতা লৌকিক দেবী।

ছোটবেলায় বাড়ির কাজের লোকেদের বলতে শুনেছি বসন্ত রোগকে বাংলা আবহমান কালে ‘মায়ের দয়া’র দাগ । এই ‘মা’ হলেন দেবী শীতলা। আমাদের দেশের এক প্রাচীন লৌকিক দেবী।

 স্কন্দপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে শীতলাদেবীর উল্লেখ আছে। সেখানে তিনি গুটিবসন্তের ত্রাণকর্ত্রী। তিনি যজ্ঞাগ্নি সম্ভূতা। ব্রহ্মা কেবল তাঁকে নয়, তাঁর সহচর জ্বরাসুরকেও পুজো করার জন্য মানবজাতিকে উপদেশ দিয়েছিলেন।

শবর গোষ্ঠীরাই নাকি শীতলার পুজো চালু করেন। পরে সকল সম্প্রদায়ের কাছেই তিনি বসন্ত রোগের দেবী রূপে পূজিতা হন।বসন্তে পৃথিবী পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। 

ভক্তদের বিশ্বাস, এই সময় দেবী নিজে গঙ্গায় স্নান করে নিজে যেমন শীতল হন তেমনই পৃথিবীর মাটিকেও শীতল বা ঠাণ্ডা করেন। মনে করা হয়, তিনি শীতলার করুণা ভিক্ষা করলে দেবীর মন গলে, বিরাটরাজ্য রোগমুক্ত হয়।

ব্রহ্মার কন্যা এবং কার্ত্তিকেয়ের স্ত্রী নাকি এই শীতলাকে। পুরাণ ছাড়াও এই দেবী আছেন সহজ সরল লোককথায়, যেমন শীতলামঙ্গল কাব্যে।

দেবতাদের অধিকার থাকবে কিন্তু মেয়েদের দেবী হবার অধিকার লাভের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে যুগে যুগে। শীতলা তাই বুঝি স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমেছিলেন এলোচুলে, মারণরোগ ছড়িয়ে, অনুচর জ্বরাসুরকে নিয়ে। 

মানুষের দেহে জ্বর হয়ে প্রবেশ করে শিবভক্ত রাজা চন্দ্রকেতুর রাজ্যে ছড়িয়ে দিলেন সেই রোগ। নিজে রূপ নিলেন বৃদ্ধার। রাজ্যের সবাই মুখ ঘোরালো তার থেকে।

তাতে আরও রেগে যান তিনি। সমাজের আনাচেকানাচে আবাল-বৃদ্ধবনিতার মধ্যে ছড়াতে লাগলেন সেই রোগ, হাতে লাঠি, কাঁধে চৌষট্টি বসন্তের ঝুলি নিয়ে।