Anubrata Mondal: রাখির দিনেই ‘হাতকড়া’! কেষ্টর গ্রেফতারে ‘অন্য বোলপুর’ দেখল বাংলা
Anubrata Mondal: যে নেতাকে খুব কাছ থেকে দেখেন অনুগামীরা, আজ রাখির দিনে তাঁর বাড়িতেই বিপর্যয়। বাহুবলীর এই পরিণতি যে তাঁদের দেখতে হবে, সেটা নিজেদেরও বিশ্বাস করাতে পারছেন না অনুগামীরা।
বোলপুর: সকাল সাড়ে ন’টার কিছুটা। পরপর গাড়ি এসে দাঁড়ায় নীল রঙা বাড়িটার সামনে। প্রাসাদপম বাড়ির চতুর্দিকে ছয়লাপ হয়ে গেল বন্দুকধারী সিআরপিএফ জওয়ানরা। গোটা বাড়িটা ঘিরে ফেলা হয়। কমলা রঙা লোহার গেটের সামনে দাঁড়ান জনা চারেক সিআরপিএফ জওয়ান। গোটা চত্বরেই দু’হাত ছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। গোটা দৃশ্যটা ভীষণভাবেই অপরিচিত ও অনাকাঙ্খিত ছিল বোলপুরবাসীর জন্য যে তাবড় নেতার ভয়ে এলাকায় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, তাঁর বাড়ির সামনেই এত জওয়ানের ভিড়! তবে কি আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে? সাতসকালে বাজার করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা, পড়শি, মুদি-চা দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাদের চোখেমুখে তখন বিস্ময়ের ছাপ! এ দৃশ্য যেন তাঁদের কাছে অকল্পনীয়। অনুব্রতর বাড়িতে সিবিআই, ঘিরে ফেলা হয়েছে বাড়ি… এসব খবর তখন উল্কাগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বীরভূম জুড়ে।
অনুব্রতর প্রাসাদপম বাড়ির সামনে তখন লাখো মানুষের ভিড়! অত্যুৎসাহী মানুষের জটলা আর সাংবাদিক দেখলেই নিজেদের আড়াল করার আপ্রাণ প্রয়াস। সকাল ১০টা বেজে কিছু মিনিট। সাংবাদিকদের নজর তখন অনুব্রতর বাড়ির প্রত্যেকটি গেটে। তার কিছুটা আগেই এক সিবিআই আধিকারিক গ্যারেজের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকেছেন। হাঠৎই ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ বা কারা বলে উঠলেন ‘জয় শ্রী রাম…’ স্পষ্ট হল, সেই ভিড়ের মধ্যে মিশে রয়েছেন বিরোধীরাও।
যে নেতাকে খুব কাছ থেকে দেখেন অনুগামীরা, আজ রাখির দিনে তাঁর বাড়িতেই বিপর্যয়। বাহুবলীর এই পরিণতি যে তাঁদের দেখতে হবে, সেটা নিজেদেরও বিশ্বাস করাতে পারছেন না অনুগামীরা। ভিড়ে মিশে ছিলেন তাঁরাও। তবে এদিন তাঁরা নির্বাক, মুখে কুলুপ। কিছুটা হয়তো নিজেদের মাটি হারানোর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তাঁরা।
বেলা পৌনে বারোটা। অনুব্রত মণ্ডলকে বগলদবা করে গ্যারেজের গেট দিয়েই বের হলেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিআরপিএফ জওয়ানরা ঘিরে রেখেছেন তাঁকে। সাংবাদিকদের ভিড়, ফ্ল্যাশ লাইনের ঝলকানি, হাজারো তীক্ষ্ণ প্রশ্ন ভেদ করেই ফের কানে এল আরও একটি শব্দ বন্ধ… ভিড়ের মাঝ থেকেই কেউ বলে উঠলেন ‘আমাদের দুঃখের দিন…’ ক্যামেরা ঘুরিয়ে ততক্ষণে তাঁকে আমাদের প্রতিনিধি প্রশ্ন করেছেন, ‘কেন দুঃখের দিন দাদা আপনাদের…’ আর উত্তর দেননি তিনি। আড়াল করেছেন নিজেকে।
কেবল তিনিই নয়, তাঁর মতো এমন অনুগামী হাজারো মিশে সেই ভিড়ে। রাখির দিনেই বোলপুরের ‘বাহুবলী’র হাতে হাতকড়া! মেনে নিতে পারছেন না কেউ, কেউবা হাসছেন অন্তরালে!