Santiniketan: উদাসীনতাই কি দায়ী! বিশ্বভারতী থেকে হারিয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী ‘ঘণ্টাতলা’

Visva-Bharati University: এই ঘণ্টাতলার নিচে ক্লাশ নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও।

Santiniketan: উদাসীনতাই কি দায়ী! বিশ্বভারতী থেকে হারিয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী 'ঘণ্টাতলা'
'ঘণ্টাতলা' (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 07, 2021 | 4:26 PM

আজিজা খাতুন: একটা সময় ছিল যখন শান্তিনিকেতন আশ্রমের আশেপাশে কোনও জনবসতি ছিল না। সেই আশ্রমে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী থাকতেন। পাশাপাশি থাকতেন শিক্ষকরা। ছাত্রছাত্রীরা কোনও বিপদে পড়লে বেজে উঠত ‘ঘণ্টাতলার’ ঘণ্টা। আর সেই আওয়াজ শুনে ছুটে আসতেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। বহু স্মৃতি বিজরিত সেই ঐতিহাসিক সেই ‘ঘণ্টাতলা’ মুছে গেল। এখন নতুন রূপে নির্মিত হতে চলেছে সেটি।

বিশ্বভারতীর ঘন্টাতলাকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস। সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, বিশ্বভারতীর প্রত্যেক পড়ুয়া ও রবীন্দ্র প্রেমীদের অনুরাগ ইতিহাস । এবার ধুয়ে-মুছে পরিস্কার হয়ে গেল সবটাই। পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফ থেকে পুরনো ঘণ্টাতলাকে সরিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি। জানা গিয়েছে, গত বছর ২৬ অগস্ট ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ে শতাব্দীপ্রাচীন একটি বট গাছ। বটগাছটি ভেঙে পড়েছিল ঘন্টা তলার উপর। এরপর প্রায় বছর খানেক ভগ্ন অবস্থায় পড়েছিল গৌর প্রাঙ্গণে পাশে থাকা ‘ঘণ্টাতলা’।

Ghanta ghar

ঘণ্টাতলা ভেঙে ফেলা হচ্ছে(নিজস্ব চিত্র)

এরপর বিশ্বভারতীতে পৌঁছয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকরা। পুরনো ভাস্কর্যগুলির সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। অনুমোদন হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। জানা যাচ্ছে, ‘ঘণ্টাতলাকে’ সংস্কার না করে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।

১৯১৯ সালে ঘন্টাতলাটি নির্মাণ করেছিলেন কবিগুরুর প্রিয় ছাত্রী রানু অধিকারী। তাঁর পাওয়া ছাত্রবৃত্তির ৩০ টাকা শান্তিনিকেতনে দান করেন। সেই স্কলারশিপের টাকা থেকেই তৈরি করা হয়েছিল এই ঘণ্টাতলা। ঘণ্টাতলা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন স্থাপত্যকার সুরেন্দ্রনাথ কর। এই ঘণ্টাতলার নীচে ক্লাশ নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। আবার শান্তিনিকেতনের ছুটির ঘণ্টা বাজত এইখানেই। পরে ঘণ্টাটি চুরি হয়ে যায়। ফের ২০০২ সালে ঘণ্টাতলায় একটি নতুন ঘণ্টা পুনপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। তবে, গত ২৬ অগস্টে ভূমিকম্পের পর ভগ্ন ঘণ্টাতলার পুর্ননির্মাণে হলুদ হয়ে যাওয়া স্মৃতি হারিয়ে গেল ইতিহাস থেকে।

এই ঘণ্টাতলা নির্মাণে প্রশ্ন উঠছে অনেক। ঘণ্টাতলার ওপরে থাকা বটগাছের একটা অংশ নীচের দিকে নেমে আসায় ঘণ্টাতলার পরিকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছিল। তার পরে ২০২০ সালে ঝড়ে বট গাছটি ভেঙে  পড়লে ঘণ্টাতলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। কিন্তু তার আগে রবীন্দ্র-স্মৃতি বিজরিত স্থানটিকে সংরক্ষণ করা গেল না কেন? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভূমিকম্পের আগে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যদি তৎপর হত, তাহলে সংরক্ষণ সম্ভব হতো।

বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকরা সম্পূর্ণ ঘণ্টাতলাটি সরিয়ে দিয়ে নতুন করে পাথর সিমেন্ট দিয়ে ওই একই আদলে তৈরি করছে নতুন  ঘণ্টাতলা। বলা যেতে পারে, শান্তিনিকেতনের ঘণ্টাতলার আদলে নতুন করে হয়ত থাকবে স্থানটি, কিন্তু থাকবে না পুরনো ঘণ্টাতলাকে ঘিরে ঐতিহ্য এবং প্রত্যেকটি বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরাগ আবেগ।

আরও পড়ুন: SSKM হাসপাতালে ‘ক্রিটিক্যাল’ কেলেঙ্কারি! ‘উধাও’ ২০ লক্ষ টাকার যন্ত্র, ঘনীভূত হচ্ছে বাক্স রহস্য়