বাড়ির পেছন থেকে পৌঁছে যাচ্ছে চাল-ডাল, ঘেরাওয়ের পরেও নির্বিকার উপাচার্য!

VBU: অভিযোগ,  সেই আপ্ত সহায়কের রাজি হওয়ার পর  তিনদিন কেটে গেলেও দেখা মেলেনি কর্তৃপক্ষের। কথা বলতে আসেননি উপাচার্য

বাড়ির পেছন থেকে পৌঁছে যাচ্ছে চাল-ডাল, ঘেরাওয়ের পরেও নির্বিকার উপাচার্য!
প্রতিবাদে পড়ুয়ারা, ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 29, 2021 | 10:04 PM

বীরভূম: অচল গুরুদেবের ‘সাধের পাঠশালা’। রবিবার পর্যন্ত তিনদিন যাবত্‍ ঘেরাও বিশ্বভারতীর (VBU) উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তী।  বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন পড়ুয়ার বহিষ্কার ও দুই অধ্যাপকের নিলম্বনকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করেন পড়ুয়ারা। তিন দিন কেটে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ।

গত শুক্রবার, বিশ্বভারতীর মূল সেন্ট্রাল অফিস ঘেরাও ব্যাপক বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। সেই বিক্ষোভ তুলতে গেলে কার্যত হাতাহাতি বাধে বিশ্বভারতী নিরাপত্তাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।  বিশ্বভারতী নিরাপত্তারক্ষীরা প্রথমে ছাত্রদের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। তবে এখানেই শেষ নয়, বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিদুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chackrabarty)-এর সিএস বা আপ্ত সহায়কের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান পড়ুয়ারা। তখন তিনি পড়ুয়াদের গাড়ি চাপা দিতে উদ্যত হন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ আন্দোলনরত পড়ুয়াদের। এর পর উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে করেন পড়ুয়ারা।

সেই বিক্ষোভ তুলতে গিয়ে কর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি বাধে ছাত্রদের। তার পর এদিনের এই নজিরবিহীন ঘটনা। পড়ুয়াদের গাড়ি চাপা দিতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ উপাচার্যের আপ্ত সহায়কের বিরুদ্ধে। গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে পড়ুয়াদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘কেন শুনব তোমাদের কথা?’ পরে অবশ্য পড়ুয়াদের নিয়ে অফিসে গিয়ে কথা বলতে রাজি হন তিনি বলে খবর।

অভিযোগ,  সেই আপ্ত সহায়কের রাজি হওয়ার পর  তিনদিন কেটে গেলেও দেখা মেলেনি কর্তৃপক্ষের। কথা বলতে আসেননি উপাচার্য। রবিবার বিক্ষোভরত এক পড়ুয়ার কথায়, “আমরা এখানে ঝড় জল মাথায় করে বসে রয়েছি। কিন্তু উপাচার্যের বা কর্তৃপক্ষের কোনও কিছুই যায় আসে না। তার বাড়ির পেছন দিক থেকে চাল-ডাল-খাবার সবই ঠিকঠাক পৌঁছে যাচ্ছে। যদিও, আমরা পিছু হঠতে রাজি নয়। আমাদের দাবি মানলেই আমরা তবে ঘেরাও তুলব। নয়ত আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।”

রবিবার দেখা যায়, কার্যত  ম্যারাপ খাটিয়ে মঞ্চ তৈরি করে সেখানেই আন্দোলন করছেন পড়ুয়ারা। গানে কবিতায় ভরপুর সেই আন্দোলন। বিশ্বভারতীর সর্বত্র উপাচার্য বিরোধী মন্তব্য লেখা হয়েছে। পড়েছে একাধিক পোস্টার। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আলাপনীর সদস্যরা। যাদবপুর, উত্তরবঙ্গ, কল্যাণী, প্রেসিডেন্সি-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপক সংগঠনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ও পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, ‘‘আমরা মনে করি ছাত্রদের বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রতিহিংসামূলক আচরণ নয়, এর মধ্যে স্বাধীন মুক্ত চিন্তার স্বরকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রও রয়েছে। অবিলম্বে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সমস্ত পড়ুয়াদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ ও ধিক্কার কর্মসূচি পালন করেছে এসএফআই। এদিকে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল নিদান দিয়েছেন উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীকে তিনদিন ঘেরাও করা হবে। থাকবেন অধ্যাপক-পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকবে তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরাও। তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। সূত্রের খবর, অন্য়দিকে উপাচার্যের বাসভবনে আরও বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। বসানো হয়েছে একাধিক সিসিক্যামেরাও। যখন পড়ুয়ারা এভাবে আন্দোলনরত যে গোটা একটা বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, তখন উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। রবিভূমে রাজনীতির এমন ‘বাড়বাড়ন্তের’ জন্য দায়ী কে, প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল। আরও পড়ুন: ভোটপর্বে ঘরছাড়া, ফিরতেই ‘হামলা’, মাথায় ৬টি সেলাই নিয়ে হাসপাতালে বিজেপি কর্মী!