‘তিনদিন ধরে ঘেরাও করব ওঁকে, পাগলামি ছাড়িয়ে ছাড়ব’, উপাচার্যকে হুঁশিয়ারি অনুব্রতর!

Anubrata Mondal: সম্প্রতি, বিশ্বভারতীর সাসপেন্ড হওয়া তিন পড়ুয়া  ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ এবং রূপা চক্রবর্তীকে তিনবছরের জন্য বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

'তিনদিন ধরে ঘেরাও করব ওঁকে, পাগলামি ছাড়িয়ে ছাড়ব', উপাচার্যকে হুঁশিয়ারি অনুব্রতর!
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 25, 2021 | 3:36 PM

বীরভূম: বারবার বিতর্কে জড়িয়েছে গুরুদেবের ‘সাধের শিক্ষাঙ্গন’। ইতিমধ্যেই, রবিভূমে-রাজনীতির (Visva Bharati University) অনুপ্রবেশও ঘটেছে। সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তিন পড়ুয়াকে তিন বছরের জন্য বরখাস্ত ও দুই অধ্যাপককে নিলম্বন করার অভিযোগে সরব হয়েছেন বিশ্বভারতীর অধ্য়াপক ও পড়ুয়ারা। ঘটনায় বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ও ছাত্র সংগঠন। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্য়মের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) উপাচার্যকে ঘেরাও করার নিদান দিলেন ‘কেষ্ট’ মণ্ডল (Anubrata Mondal)।

বুধবার, সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রত স্পষ্ট বলেন, “বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁরা পাগল উপাচার্যকে ঘেরাও করুক। টানা তিনদিন ঘেরাও করে রাখব। তৃণমূল কংগ্রেস অধ্যাপকদের পাশে রয়েছে। বিশ্বভারতীকে পুরো নষ্ট করে দিয়েছে ওই পাগল উপাচার্য। চতুর্দিকে ময়লা, নোংরা। ওঁকে ঘেরাও করা হবে। ওঁর পাগলামি তো! সব পাগলামি ছাড়িয়ে ছাড়ব। আমার জানা রয়েছে এর ওষুধ কী! ওই পাগল উপাচার্যের ব্যবস্থা হবে। যে পারে আটকে দেখাক!”

সম্প্রতি, বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) সাসপেন্ড হওয়া তিন পড়ুয়া  ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ এবং রূপা চক্রবর্তীকে তিনবছরের জন্য বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, পদার্থবিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক পীযুষকান্তি ঘোষ ও অরণি চক্রবর্তীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাসপেন্ড করেছে বিশ্বভারতী। আচমকা এই সাসপেনশন ও পড়ুয়াদের বরখাস্তের নোটিসে কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অন্য় পড়ুয়া ও অধ্য়াপকরা। বিশ্বভারতীর ছাত্র ও অধ্যাপক সংগঠন VBUFA বুধবার এই মর্মে তৃণমূলের জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অনুব্রত জানিয়েছেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর জেলা সফরে আসতে পারেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চলে যাওয়ার পর ২ সেপ্টেম্বর থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যেতে পারে। তারপরেই, উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীকে ঘেরাও করার নিদান দেন অনুব্রত।

প্রশ্ন উঠছে, যে বিশ্বভারতীর অভ্য়ন্তরে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘিরে এত বিতর্ক সেখানে খোদ অধ্যাপকেরাই একটি বিশেষ দলের সমর্থন চাইলেন কেন? এ প্রসঙ্গে, বিশ্বভারতীর ছাত্র ও অধ্যাপক সংগঠন VBUFA-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপাচার্যের স্বৈরতন্ত্র রুখতে কোনও রাজনৈতিক দলের সাহায্য নেওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সংগঠনের এক ছাত্রনেতার কথায়, “আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। যে স্বৈরতন্ত্র উপাচার্য চালু করেছেন তা বন্ধ হওয়া দরকার। সেই জন্য বাধ্য় হয়েই আমরা রাজনৈতিক দলের সাহায্য নিয়েছি।”

উল্লেখ্য, অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সোমনাথ-ফাল্গুনীরা। ফলস্বরূপ, অভিযুক্তদের তিনমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু তিনমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের ক্লাস করতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তরফে ‘ভুয়ো মেইল’ করে সাসপেনশন (suspension) আরও তিনমাস বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন পড়ুয়ারা। সেইসময় থেকেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। পরে,  ইউজিসির কাছেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। ইউজিসির তরফ থেকে পাল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিস দিয়ে সাসপেনশনের কারণ জানতে চাওয়া হয়। তারপরেই তড়িঘড়ি বেশ কিছু সিদ্ধান্তে বদল কর্তৃপক্ষ বদল আনলেও ফাল্গুনীদের সাসপেনশন রদ হয়নি।

গুরুদেবের শিক্ষাঙ্গনে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে, একাধিকবার বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছে রবি ঠাকুরের ‘সাধের পাঠশালা’। সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী শিবিরের দলীয় কর্মসূচি পালনকে ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। কিন্তু, কখনওই পড়ুয়া বা অধ্যাপকেরা সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে মুখ খোলেননি। সেখানে সরাসরি শাসক দলের শরণাপন্ন হওয়া ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদদের অংশ। যদিও, তৃণমূল নেতার সঙ্গে উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীর এই বিরোধ নতুন নয়। আগেও একাধিকবার উপাচার্যের বিরুদ্ধে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করেছেন কেষ্ট মণ্ডল। তবে, ববরাবরেই মতোই বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আরও পড়ুন: ‘ওঁর বউ ইনজেকশন দিয়ে শান্ত করায়’, ‘কেষ্টর’ কুমন্তব্য, দিলীপও দিলেন পাল্টা