Balurghat: ডাক্তার বেসরকারি নার্সিংহোমে, মর্গের বাইরে মৃতদেহের অপেক্ষায় সঙ্গী পরিজনরা
Balurghat: ফের সময় মত বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে আসছেন না দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক।
বালুরঘাট: পরিজন হারানোর শোক নিয়ে মর্গের সামনে কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ডাক্তারবাবু না আসায় ময়নাতদন্তের ‘বিলম্ব’ তাই নিত্যদিনের সঙ্গী। কারণটা কী? উত্তরে তাজ্জব হয়ে যায় মৃতের পরিবার। চিকিৎসক নাকি ব্যস্ত বেসরকারি হাসপাতালের ‘ডিউটিতে’। এরই প্রতিবাদে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখালেন ক্ষুব্ধরা। ঘটনাটি ঘটেছে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে।
ফের সময় মত বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে আসছেন না দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক। কখনও কখনও আবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গড়িয়ে গেলেও দেখা মেলে না চিকিৎসকের। ঘটনায় ফের একবার ক্ষোভে ফেটে পড়ল মৃতের পরিবারের লোকেরা। যদিও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার হাসপাতাল সুপারকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। তাই শেষমেশ হাসপাতাল সুপার ও ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন মৃতের পরিবার পরিজনরা৷ বিক্ষোভের মাঝে মারমুখি হয়েও পড়েন মৃতের পরিবার পরিজনরা। দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখানোর পর বিকেল সাড়ে তিনটের পর ঘটনাস্থলে আসে দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক। এরপর স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। যদিও পুরো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বালুরঘাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় একটি মাত্র মর্গ রয়েছে। সেটাই বালুরঘাটে। জেলার যে কোনও প্রান্তে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেই তার ময়নাতদন্তের জন্য দেহ আনা হয় বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে। এই নিয়মে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোট পাঁচটি দেহ ময়নাতদন্তের জন্য আনা হয় ৷ কুমারগঞ্জ, গঙ্গারামপুর ও হরিরামপুর থেকে একটি করে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য আসে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে। এছাড়া বালুরঘাট থানার তরফে দুটি দেহ আনা হয়৷ অভিযোগ, সকাল থেকে মৃতদেহ নিয়ে আসার পরও সময় মত মর্গে আসেন না কোন চিকিৎসক। অভিযোগ, বিকেল সাড়ে তিনটে গড়িয়ে গেলেও দেখা মেলেনি চিকিৎসকের। বিষয়টি নিয়ে কখনও ফোন, আবার কখনও হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার থেকে সুপারের কাছে গিয়ে বললেও কোনও লাভ হয়নি। এরপরই দ্রুত ময়নাতদন্ত করার দাবিতে একাধিক মৃতের পরিবার পরিজনরা বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে সুপারের ও ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। এই বিক্ষোভ প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে চলে। এদিক দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও হাসপাতালের তরফে জানানো হয় তিনি ওটিতে আছেন একটু বাদে যাচ্ছেন। যদিও বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ হাসপাতালে নয়, তিনি আছেন নার্সিংহোমে। সরকারি চিকিৎসক হওয়ার পরেও হাসপাতালে সঠিক দ্বায়িত্ব পালন করছেন না বলেই অভিযোগ। যদিও কিছু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসককে ফোন করেন। তার কিছু পরে মর্গে আসেন চিকিৎসক৷
এছাড়াও ক্ষুব্ধদের আরও অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে নেই কোন স্থায়ী চিকিৎসক। যার ফলে একেক দিন একেক চিকিৎসক ময়নাতদন্তের জন্য আসেন। কোনওদিন সময় মত আসলেও অনেক দিন বিকেল গড়িয়ে গেলেও চিকিৎসক আসে না বলে অভিযোগ। তাই পুলিশ মর্গে স্থায়ী চিকিৎসকের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এবিষয়ে বালুরঘাট পুলিশ মর্গে দেহ নিয়ে আসা সঞ্জিত মাহাতো বলেন, সকাল থেকে তারা বসে আছেন। অথচ কোনও চিকিৎসকের দেখা নেই। দূর দূরান্ত থেকে মৃতদেহ নিয়ে এসেছেন বালুরঘাটে। ঘন্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন তারা। অথচ কোনও চিকিৎসক আসছেন না ৷ এনিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হলে তারাও দীর্ঘক্ষণ ধরে বলছেন চিকিৎসক কিছু বাদে আসবে। এই করতে করতে বিকেল সাড়ে তিনটা বাজলেও চিকিৎসক না আসায় তারা বিক্ষোভ দেখান৷ অবশেষে তার কিছু পরে চিকিৎসক মর্গে আসেন। শুনেছেন এটা শুধু শনিবার বলে নয় প্রায় দিনই ঘটছে। এর স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিৎ। আর এমনটা চিকিৎসকরা করায় এই বদনাম হচ্ছে সরকারের।
এ বিষয়ে আরও এক মৃতের আত্মীয় নিশীথ কর্মকার বলেন, ২৪ ঘণ্টা আগে বালুরঘাট হাসপাতালে তাদের আত্মীয় মারা গেছে। অথচ মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি এখনও৷ হাসপাতালের চিকিৎসকরা নার্সিংহোম নিয়েই ব্যস্ত৷ যার ফলে সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালের পুলিশ মর্গে বিশাল পরিমান টাকা চাওয়া হচ্ছে৷ যেটা পুরোপুরি অন্যায়।
অন্যদিকে এবিষয়ে বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার কৃষেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, ওই চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের কাজে ব্যস্ত ছিল। বিষয়টি জানার পরে তাকে বলা হয়। এরপরে ওই চিকিৎসক মর্গে আসেন।