শিকেয় করোনা বিধি! নববর্ষের সকালে ‘অরক্ষিত’ পুজো-পরব বাংলা জুড়ে

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৩৯ জন। এটিই ভারতে সর্বকালের সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যাও ফের হাজারের গণ্ডি পার করেছে। একদিনেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জন। বর্তমানে ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৪। দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৭। মোট মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ১২৩। বাংলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৯২ জন।

শিকেয় করোনা বিধি! নববর্ষের সকালে 'অরক্ষিত' পুজো-পরব বাংলা জুড়ে
শিকেয় কোভিড প্রোটোকল, মাস্ক ছাড়াই চলছে জমায়েত, অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Apr 15, 2021 | 1:30 PM

পশ্চিমবঙ্গ: রাজ্যে বেলাগাম করোনা। হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। কিন্তু, সচেতনতা, কোভিড বিধি (COVID protocol) সমস্ত রসাতলে দিয়েই চলছে জমায়েত।  ভোটমুখী বঙ্গে বাধা নেই প্রচারেও। নববর্ষের সকালে, জেলা জুড়ে ‘অরক্ষিত’ পরব পালনের ছবি বাংলা জুড়ে। গত বছরে নতুন বাংলা বর্ষে দেশ জুড়ে চলেছিল লকডাউন। হালখাতা থেকে পুজো পার্বণ, বাদ গিয়েছিল প্রায় সবই। এ বার, লকডাউন নেই। কিন্তু, আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তা সত্ত্বেও, কোভিড প্রোটোকল শিকেয় তুলে সকাল থেকে বিভিন্ন মন্দির ভিড় করেছেন পুণ্য়ার্থীরা।

মুখ্য়মন্ত্রীর নামে পুজো কালীমন্দিরে

বীরভূম: সকালে ভিড় জমেছে কঙ্কালিতলা সতীপীঠে। পুণ্যার্থীদের অনেকে মাস্ক পরলেও বেশিরভাগ মুখই অরক্ষিত। জনসমাগমের দাপটে মানা যাচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব বিধিও। যদিও মন্দির চত্বরে বিতরণ করা হচ্ছে মাস্ক (Mask), স্যানিটাইজার (sanitiser)। কিন্তু কোভিড প্রোটকলের বাড়বাড়ন্ত নেই বললেই চলে।

অন্যদিকে, রামপুরহাটে, মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঙ্গল কামনা করে কালীমন্দিরে পুজো দিলেন তৃণমূল প্রার্থী আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা বিধি মেনেই বৃহস্পতিবার সকালে পুজো দেন প্রার্থী। জানান, আগামী দিনে যাতে মা-মাটি-মানুষের সরকার গঠন হয় সেই জন্যেই পুজো দিয়েছেন তিনি।

তারকেশ্বরে মাস্ক বিলি করলেন পুর প্রশাসক

হুগলি: করোনা সংক্রমণ (Corona) রুখতে গত মঙ্গলবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে তারকেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল মন্দির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বর্ষবরণের সকালে চেনা ছবিটাই দেখা গেল তারকেশ্বরে। গর্ভগৃহে প্রবেশ না করতে পারলেও মন্দির চত্বরে লোকের অভাব নেই।  শিকেয় সামাজিক  দূরত্ব বিধি (Physical Distance)। মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। তাই আসরে নেমেছে পুরপ্রশাসন। এ দিন, মন্দির চত্বরে উপস্থিত থাকলেন খোদ  পুরপ্রশাসক স্বপন সামন্ত। মাস্কবিহীন ভক্তদের হাতে হাতে মাস্ক বিলি করলেন স্বপনবাবু। করোনার ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সতর্কও করলেন মানুষকে। ইতিমধ্যেই তারকেশ্বর ব্লকে নতুন করে ছয় জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সংখ্যা যাতে আর না বাড়ে তার চেষ্টাই করছে পুরসভা এমনটাই দাবি পুরপ্রশাসকের।

কোভিড প্রোটোকল মেনে লাইনে দাঁড়ালে তবেই প্রবেশাধিকার মন্দিরে

পশ্চিম মেদিনীপুর: বর্ষবরণে যখন শিকেয় উঠেছে বিধিনিষেধ, তখন সম্পূর্ণ অন্য ছবি দেখা গেল বটতলা মন্দিরে। নিয়ম মেনেই চলছে পুজো। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, নিয়ম মেনে দশজন করে মন্দিরে প্রবেশ করে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। সেই দশজন বেরিয়ে গেলেই তবেই সুযোগ পাবেন পরের দশজন। মন্দির চত্বরে বিতরণ করা হচ্ছে মাস্ক ও স্যানিটাইজার।

‘মাস্ক পকেটে, পরতে ইচ্ছে করছে না’!

শিলিগুড়ি: মন্দিরে গেটের বাইরে লেখা রয়েছে ‘মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ’। কিন্তু থোড়াই কেয়ার করছেন ভক্তরা। করোনা বিধি অগ্রাহ্য করেই মন্দির চত্বরে চলছে পুজোপাঠ। ভক্তদের মুখে নেই মাস্ক। সব দেখে শুনেও নীরব মন্দির কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ বলছেন, ‘মাস্ক পকেটে রয়েছে। পরতে ইচ্ছে করছে না।’

মন্দিরে সম্বল মাস্কই 

পশ্চিম বর্ধমান: মাস্ক ছাড়া মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। থাকতে হবে স্যানিটাইজারও। নিয়ম মেনেই ঘাগর বুড়ি চণ্ডী মন্দিরে পুজো দিলেন আসানসোলবাসী। হল হালখাতাও। তবে সবই বিধি মেনে। মন্দির চত্বরে বিতরণ করা হল মাস্ক ও স্যানিটাইজার।

মাস্ক পরলে দমবন্ধ লাগে!

উত্তর ২৪ পরগনা: করোনা সংক্রমণ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। পয়লা বৈশাখে ভয় ধরাল দক্ষিণেশ্বর চত্বর। মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন ভক্তরা। কেউ বলছেন, ‘মাস্ক পরলে দমবন্ধ লাগে’ তো কেউ বলছেন, ‘মন্দির থেকে বেরিয়ে মাস্ক পরব।’ অন্যান্যবারের মতো লাখো মানুষের ঢল জমেনি মন্দির চত্বরে।  দেখা যায়নি দীর্ঘ লাইনও। করোনাকালে, অরক্ষিত মুখ গুলি ভয় ধরাতে বাধ্য। মন্দিরে ঢুকলে কর্তৃপক্ষের নিয়ম মানতে বাধ্য় থাকছেন অনেকে। কিন্তু, এর বাইরে শিকেয় কোভিড প্রোটোকল।

প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই মন্দিরে মন্দিরে চলছে জমায়েত

বাঁকুড়া: ১৪২৮-এর বরণে কোনও খামতি নেই। বর্ষবরণে ভিড় জমেছে মন্দিরে মন্দিরে। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভৈরবী মন্দির, ছিন্নমস্তা মন্দির সর্বত্র ঢল নেমেছে মানুষের। উপচে পড়া ভিড়ে নেই সামাজিক দূরত্ব। বরং রয়েছে অরক্ষিত একাধিক মুখ। বালাই নেই স্যানিটাইজেশনের।

প্রসঙ্গত, গোটা রাজ্য জুড়ে যখন ত্রাস সঞ্চার করোনার নতুন মিউট্যান্ট স্টেইন, জোরকদমে চলছে টিকাকরণ, তখন হুজুগেই মাতোয়ারা আম জনতা। সংক্রমণের ভয় তো নেইই, মহামারিতে মৃত্য়ু নিয়ে বিশেষ ভাবিত নয় সাধারণ মানুষ এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অথচ, এই নতুন স্টেইনের সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য়মন্ত্রকের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, একলাখের গণ্ডি পার করে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এ বার দুই লাখে প্রবেশ করল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭৩৯ জন। এটিই ভারতে সর্বকালের সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যাও ফের হাজারের গণ্ডি পার করেছে। একদিনেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জন। বর্তমানে ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৪। দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৭। মোট মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ১২৩। বাংলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৯২ জন। কলকাতায় আক্রান্ত ১৬০১ জন, উত্তর ২৪ পরগনা ১২৭৭ জন, হাওড়ায় ৩৩০ জন, বাংলায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৪।