ধর্মঘটে অনড় মৌরিগ্রাম ট্যাঙ্কার মালিকরা! কলকাতায় পেট্রোল-ডিজেলের জন্য হাহাকার শুরু কি শুধু সময়ের অপেক্ষা?

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই বহু পেট্রোল পাম্পে রিজার্ভার ফাঁকা হতে শুরু করেছে। শনিবার ছবিটা আরও কঠিনই হবে।

ধর্মঘটে অনড় মৌরিগ্রাম ট্যাঙ্কার মালিকরা! কলকাতায় পেট্রোল-ডিজেলের জন্য হাহাকার শুরু কি শুধু সময়ের অপেক্ষা?
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 06, 2021 | 8:27 PM

হাওড়া: দিনভর দফায় দফায় আলোচনাতেও মিলল না সুরাহা। হাওড়ার মৌরিগ্রামের ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশন অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের সিদ্ধান্তেই অনড় রইল। আর তার জেরে প্রভাব পড়া শুরু শহরের ইন্ডিয়ান অয়েল পাম্প গুলিতে। না জানিয়ে ধর্মঘট করায় সমস্যায় পড়েছে পাম্প কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকদিনের মতো শুক্রবার মৌরিগ্রামে তেল আনতে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে পেট্রোলপাম্প কর্মীদের। ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্প গুলিতে তেল ‘রিজার্ভ’ করে রাখার যা ক্ষমতা রয়েছে তাতে কোনওভাবে এদিন চালানো সম্ভব হলেও শনিবার থেকে তেলশূন্য হতে চলেছে ইন্ডিয়ান অয়েলের পেট্রল পাম্পগুলি। স্বভাবতই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে সাধারণ মানুষকে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই তার প্রভাবও টের পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।

কেন এই ধর্মঘট?

মৌরিগ্রামে ইন্ডিয়ান অয়েলের যে ডিপো সেখানে গত ৪ অগস্ট একটি টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। সেই টেন্ডারের একাধিক ইস্যু মানতে নারাজ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশন। তার জেরেই অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ট্যাঙ্কার ধর্মঘট। ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশনের এক কার্যকর্তার কথায়, “এ পরিস্থিতি কতদিন চলবে আমরা জানি না। আমরা যে ভাড়া পেতাম, নতুন টেন্ডারে অস্বাভাবিক হারে তা কমানো হয়েছে। যে গাড়ি চলে তার থেকে ৬০টার মতো গাড়ি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এই অতিমারিতে সমস্ত নথি নিয়ে টেন্ডারে যোগ দেওয়ার সময়ও আমাদের হাতে নেই।”

শুক্রবার পরিস্থিতি সামাল দিতে মৌরিগ্রামে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ট্যাঙ্কার মালিকদের বৈঠক হয়। কিন্তু সেই বৈঠক থেকে কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি বলেই খবর। বৈঠকের পর ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশনের মৌরিগ্রাম ইউনিটের সম্পাদক রাজকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের দাবিগুলি না মানায় তাঁরা আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন।

স্বভাবতই এর জেরে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। পাম্প মালিকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মৌরিগ্রাম ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন এদিন বলেন, “ধর্মঘট চলতে থাকলে কলকাতা, হাওড়া –সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির পাম্পগুলিও শুকিয়ে যাবে। তেলের অভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।” ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, পরিবহনের ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ–সহ কয়েকটি দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘট বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েলের অধীনে থাকা হাওড়ার মৌরিগ্রাম ইউনিটের ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশনের এই ধর্মঘট ভালই প্রভাব ফেলেছে শুক্রবার। কলকাতার একাধিক পেট্রোল পাম্পের মালিকের কথায়, বুধবার সর্বশেষ ট্যাঙ্কারে পেট্রোল ডিজেল এসেছিল। যা ‘স্টক’ রয়েছে তাতে বড় জোর শুক্রবার রাত অবধি চলবে। ডিজেলের ‘স্টক’ খুব বেশি হলে শনিবার পর্যন্ত চালানো যাবে। ধর্মঘট না উঠলে রবিবার থেকে হাহাকার শুরু হবে শহরের পেট্রোল পাম্পগুলিতে।

ট্যাঙ্কার মালিক সংগঠনের বক্তব্য, এখন ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রতিবার যাতায়াতের জন্য তেল পরিবহনে ২৮০০ টাকা দেওয়া হয় ট্যাঙ্কার মালিকদের। সেটা কমিয়ে ২১০০ টাকা করা হচ্ছে। ট্যাঙ্কারের সংখ্যাও মৌরিগ্রাম ইউনিটে ১৯৬ থেকে কমিয়ে ১৩৬ করা হয়েছে। ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশন কোনও ভাবেই এই নয়া নির্দেশিকা মানতে নারাজ।

শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়ার প্রায় ২৫০টি পেট্রোল পাম্প ‘শুখা’। সেগুলি কার্যত বন্ধ করে দিতে হয়। অনেক অ্যাম্বুল্যান্স ও পুলিশের গাড়িও পেট্রোল না পেয়ে ফিরে যায় বলে দাবি ওই পেট্রোল পাম্প মালিকদের। মৌরিগ্রাম থেকে ট্যাঙ্কার না এলে ভরসা দুর্গাপুর। ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশনের ধর্মঘট যদি সর্বাত্মক হয় তবে দুর্গাপুর থেকেও কতটা সুবিধা পাওয়া যাবে তা প্রশ্নের মুখে থেকেই যাচ্ছে। আরও পড়ুন: ‘মেয়েটা আমার বোবা, ঘরে ঢুকে ওই ছেলেটা সর্বনাশের চেষ্টা করল! সাজা মাত্র কান ধরে ১০ বার ওঠবস?…’