লকডাউনে কাজই নেই, চিকিৎসার খরচ পাবেন কোথায়? গলার নলিটাই কেটে ফেললেন জীবন

Lockdown: বাড়িতে চরম আর্থিক অনটন। এদিকে করোনা আর লকডাউনের মধ্যে কাজ খুইয়েছেন। দু'বেলা খাবার যোগাতেই হিমশিম। তার পর আবার কঠিন অসুখ। মানসিক অবসাদে নিজের গলার নলি কেটে ফেললেন এক প্রৌঢ়।

লকডাউনে কাজই নেই, চিকিৎসার খরচ পাবেন কোথায়? গলার নলিটাই কেটে ফেললেন জীবন
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 23, 2021 | 10:54 PM

জলপাইগুড়ি: বাড়িতে চরম আর্থিক অনটন। এদিকে করোনা আর লকডাউনের মধ্যে কাজ খুইয়েছেন। দু’বেলা খাবার যোগাতেই হিমশিম। তার পর আবার কঠিন অসুখ। মানসিক অবসাদে নিজের গলার নলি কেটে ফেললেন এক প্রৌঢ়। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাহাড়পুরে।

জলপাইগুড়ি পাতকাটা কলোনী এলাকার বাসিন্দা বছর ৬৫-এর জীবন দাস। দিনমজুরির কাজ করে কোনওক্রমে সংসার চালাতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই কাজই বা কোথায়? প্রায় বছর খানেকের বেশি সময় ধরে তেমনভাবে কাজ পাচ্ছিলেন না। যেটুকু কাজের সুযোগ মেলে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিন চালানো দুষ্কর। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। আর জীবনের উপার্জন যেন ব্যস্তানুপাতিক হারে কমছে। কীভাবে চালাবেন সংসার, এই ভেবে ভেবেই দিন কাবার হত। মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বেশ কিছুদিন।

এদিকে কিছুদিন আগেই স্ট্রোক হয় তাঁর। ভাল চিকিৎসা করাতে হবে। এত চাপ আর সহ্য হয়নি। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন জীবন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি নিজের গলা নিজে কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামীকে দেখে চিৎকার শুরু করেন স্ত্রী। ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। এরপর জীবকে নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। এদিকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছেলেরা টাকা যোগাড় করতে গ্রামে ছুটেছেন বলে জানা গিয়েছে।

জীবনের স্ত্রী মিনু দাসের বয়ান অনুযায়ী, লকডাউনের পর থেকে তাঁর স্বামীর তেমন ভাবে কাজ নেই। তার উপর গত কয়েকমাস আগে স্ট্রোক হয়েছিল। তারপর থেকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন জীবন। খিটখিটে হয়ে গিয়েছিলেন। যখন তখন রেগে গিয়ে হাত তুলতেন। দুই ছেলে আছেন। তাঁরা টোটো রিকশা চালান। গত কয়েকমাস ধরে তার ছেলেরাই সংসার চালাচ্ছে। কিন্তু বাড়ির হাল ফেরেনি। আর এদিন এই কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন স্বামী।

জীবনের পুত্রবধূ সোনিয়া দাস জানান সম্প্রতি তার শ্বশুরের মাথায় রক্ত জমেছিল। ফলে তিনি চাইতেন তার সুচিকিৎসা হোক। কিন্তু বাড়িতে আর্থিক অনটনের ফলে তাঁর ভাল চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। দিনকে দিন খিটখিটে হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রাগ করে শাশুড়ি তো এেকবার বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আর এদিনই তিনি কিছু টাকা নিয়ে ফিরলে তাঁর হাত থেকে টাকা ছিনিয়ে নেন শ্বশুর মশাই। স্ত্রীকে আবার মারধর করতে থাকেন। এরপর নিজেই নিজের গলা কেটে ফেলেন।

পাহাড়পুর অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান অনিতা রাউত বলেন, “আমি কিছুক্ষণ আগেই বিষয়টি জানতে পারি। পরিবারে অভাব রয়েছে। আমাদের এখানে প্রচুর গরিব মানুষ রয়েছেন। তার মধ্যেও এই পরিবারকে গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করা যায় করছি।” আরও পড়ুন: ‘আমরা আর দুয়ারে সরকারে কাজ করব না,’ বিডিও-র বিরাশি শিক্কার চড়ে চোখ ছলছল কর্মীর