‘বাংলাদেশি-রোহিঙ্গাদের পাট্টা মেলে, আদিবাসীরা মাথা ঠুকে মরে গেলেও পায় না’, পৃথক উত্তরবঙ্গের সুর চড়ালেন বার্লা

John Barla: রাজ্য সরকারের দেওয়া 'চা সুন্দরী' প্রকল্পের ঘরকে ছাগল থাকার ঘরের সাথে তুলনা করে বলেন, "ওই ঘরে একজন লোক একটা ব্যাগ নিয়ে ঢুকলে আর কেউ সেই ঘরে ঢুকতে পারবে না। অথচ একেকটি ঘরের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়। সেই ঘরগুলি থেকেও কাটমানি খেয়ে কোনওভাবে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে সেরে ফেলা হচ্ছে কাজ।''

'বাংলাদেশি-রোহিঙ্গাদের পাট্টা মেলে, আদিবাসীরা মাথা ঠুকে মরে গেলেও পায় না', পৃথক উত্তরবঙ্গের সুর চড়ালেন বার্লা
'রেল-রাজনীতি', ফাইলল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 21, 2021 | 7:05 PM

জলপাইগুড়ি: রাজ্য সরকারের ‘চা সুন্দরী প্রকল্পের ঘর’ আসলে ছাগলে থাকার ঘর। রাজ্যে আদিবাসীরা কষ্টে রয়েছেন। রাজ্য সরকারকে বিঁধে এমনই নানাবিধ অভিযোগ করে পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবিতে সুর চড়ালেেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা (John Barla)।

এদিন বার্লার পাশ বসে তাঁর পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবিকে কার্যত ন্যায়সঙ্গত বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ঈআর এর পরেই গত কয়েক মাস ধরে পৃথক রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয়শাসিত রাজ্যের জিগির তোলা আলিপুরদুয়ারের সাংসদের ঝাঁঝ যেন আরও বাড়ল। বিজেপির শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি যাত্রা উপলক্ষে শুক্রবার রাতেই জলপাইগুড়ি শহরে পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শহরের একটি হোটেলে ছিলেন তিনি। শনিবার সেখানেই তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আনেন তিনি।

বার্লার কথায়, “এই রাজ্যে বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গাদের জমির পাট্টা দেওয়া হয়। আর আদিবাসীরা মাথা ঠুকে মরে গেলেও পাট্টা পায় না।” তিনি আরও বলেন, কোনও ব্যক্তি কোনও জায়গায় ১৫ বছরের বেশি বসবাস করলে স্বাভাবিক ভাবে তিনি ওই জমির পাট্টা পাওয়ার হকদার হয়ে যান। এই রাজ্যে অবশ্য বাংলাদেশি কিংবা রোহিঙ্গাদের পাট্টা দেওয়া হয়। কিন্তু আদিবাসীরা এই রাজ্যে চারপুরুষ ধরে বসবাস করলেও, মাথা ঠুকে মরে গেলেও পাট্টা পায় না।”

বার্লার দাবি করেন তিনিও দীর্ঘদিন ধরে যেই জমিতে বসবাস করে আসছেন সেই জমিতে বাড়ি বানিয়েছেন। তাই তাকেও ওই জমির পাট্টা দিতে হবে। এখানেই থামেননি তিনি। এদিন রাজ্য সরকারের দেওয়া ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পের ঘরকে ছাগল থাকার ঘরের সাথে তুলনা করে বলেন, “ওই ঘরে একজন লোক একটা ব্যাগ নিয়ে ঢুকলে আর কেউ সেই ঘরে ঢুকতে পারবে না। অথচ একেকটি ঘরের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়। সেই ঘরগুলি থেকেও কাটমানি খেয়ে কোনওভাবে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে সেরে ফেলা হচ্ছে কাজ।”

তিনি এও অভিযোগ করেন চা বাগানে থাকা শ্রমিকরা তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড সহ বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর এই ব্যাপারে অভিযোগ জানালে চা বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। উল্টে মালিকেরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। আর শ্রমিকরা চা বাগান ছেড়ে অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে চলে যাচ্ছেন! এই ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রী সম্পূর্ণ উদাসীন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তাঁকে মন্ত্রী করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করে বার্লা বলেন যে, একসময় তিনি ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। গোটা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ময়দানে সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। এবার তাঁকে প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই রাজনৈতিক ময়দানে নতুন করে খেলবেন। এসবের মধ্যেও রাজ্যকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে বলে বার্লার অঙ্গীকার, রাজ্য পাশে থাকলে সংখ্যালঘু, বৌদ্ধ, জৈন-সহ সমস্ত জনজাতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ঝাঁপি উপুড় করে দেবেন তিনি। সেই প্রকল্পের সুবিধা পেলে মানুষ আর রাস্তায় আন্দোলন করতে নামবে না। কিন্তু রাজ্য সরকার তাদের সাথে লাগাতার অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ বার্লার।

জন বার্লাকে পাল্টা তীব্র কটাক্ষ করেছেন জেলার তৃণমূল নেতা সৈকত চ্যাটার্জী। তিনি বলেন, “জন বার্লার পড়াশোনা নেই। টি প্ল্যানটেশন একটি একটি কেন্দ্রীয় আইন। কোনও চা বাগান তার জমি প্ল্যান্টেশন আইন অনুযায়ী পায়। সেখানে কেউ জমির পাট্টা পাবে কি পাবে না তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকে। রাজ্য সরকার সেখানে পঞ্চায়েত, পানীয় জল কিংবা ১০০ দিনের কাজ পৌঁছে দিয়েছে। বনবস্তিগুলিতে রাজ্য সরকার পাট্টার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এনআরসি চালু হলে বাংলায় প্রথম যাঁর নাম বাদ পড়বে তিনি হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক। আর সরকারি জমি দখল করার জন্য যদি কারও জেল হয় তবে সেটা হবে জন বার্লার।” আরও পড়ুন: মানুষের কথা বললেই বিচ্ছিন্নতাবাদী? পৃথক রাজ্যের দাবি অবৈধ নয়: দিলীপ