HS Result 2022: সামনে উচ্চ-মাধ্যমিক বলেই বাসন মাজার কাজ বন্ধ করেছিল, আর তাতেই সপ্তম শিলিগুড়ির রিতা

WBCHSE 12th Class Results 2022: মেয়ের সাফল্য চোখে জল এনেছে রিতার বাবা-মার। রিতার মা গীতা হালদার পরিচারিকার কাজ করেন। লোকের বাড়ি থেকে কাজ করে ফিরেই জানতে পারেন মেয়ের চোখধাঁধানো সাফল্যের খবর।

HS Result 2022: সামনে উচ্চ-মাধ্যমিক বলেই বাসন মাজার কাজ বন্ধ করেছিল, আর তাতেই সপ্তম শিলিগুড়ির রিতা
মায়ের পাশে রিতা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 10, 2022 | 4:25 PM

শিলিগুড়ি: বাবা-মা কেউ কখনও স্কুলে যাননি। বাবা ভোর হলেই বেরিয়ে যান মাছ বিক্রি করতে। আর একটু সকাল হলেই মাকে বেরিয়ে যেতে হয় লোকের বাড়ি কাজ করতে। এ রকম পরিবারেই বড় হয়েছেন শিলিগুড়ির রিতা হালদার। বছর খানেক আগেও পরিচারিকার কাজে মাকে সাহায্য করেছেন তিনি। লোকের বাড়ি গিয়ে মেজেছেন বাসন। সেই রিতাই এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন। শুক্রবার ফল প্রকাশের পর থেকেই তাঁর বাড়ির সামনে সংবাদমাধ্যমের ভিড়। যাঁরা এতদিন বাঁকা চোখে দেখতেন, আজ তাঁদের থেকেই আসছে শুভেচ্ছা বার্তা। তার পরও অদ্ভুতভাবে শান্ত রিতা। সাফল্য যে আসবে সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে জানিয়েছেন মেধাতালিকার অন্যতম চমক শিলিগুড়ির রিতা।

মেধাতালিকায় সপ্তম তালিকায় থাকা রিতা পেয়েছেন ৪৯২ নম্বর। শিলিগুড়ির বুদ্ধভারতী হাই স্কুলে কলাবিভাগে পড়তেন তিনি। মাধ্যমিকেও বুদ্ধভারতী হাইস্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর ছিল রিতারই। তার পরই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রামকৃষ্ণ মিশন। স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক আর্থিক সাহায্য করেছিলেন তাঁকে। যার ফলে পরিবারের অভাব থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন তিনি। তাঁর উপর ভরসা রেখে শিক্ষকরা যে ভুল করেনি, উচ্চমাধ্যমিকে রিতার ফলই তাঁর প্রমাণ। ফল প্রকাশের পর স্কুলেও তারকা সম্মান পাচ্ছেন রিতা। সহপাঠীরা তাঁরে ঘিরেই মেতেছেন উৎসবে। রিতার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্কুলের শিক্ষকরাও। হবে নাই বা কেন। এই প্রথম তাঁদের স্কুলের কোনও পড়ুয়া জায়গা করে নিল রাজ্যের মেধাতালিকায়। সেই নজির তৈরি হল রিতার হাত ধরে। এ নিয়ে বু্দ্ধভারতী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য কুমার মিশ্র বলেছেন, “এই প্রথমবার আমাদের স্কুলের কোনও ছাত্রী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। আমাদের সব আক্ষেপ মুছে দিল রিতা। আমরা জানতাম ও ভাল ফল করবে। আগামী দিনেও রিতার পাশে থাকবে বুদ্ধভারতী স্কুল।“

মেয়ের সাফল্য চোখে জল এনেছে রিতার বাবা-মার। রিতার মা গীতা হালদার পরিচারিকার কাজ করেন। লোকের বাড়ি থেকে কাজ করে ফিরেই জানতে পারেন মেয়ের চোখধাঁধানো সাফল্যের খবর। অভাবের সংসারে এই সাফল্য চোখে জল এনেছে গীতার। চোখের কোণে চিকচিক করা জল মুছে তিনি বলেছেন, “আমরা মুর্খ মানুষ। মেয়েই আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।” রিতার বাবা ধীরেন হালদারও রোজদিনের মতো শুক্রবারও টুকরি কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন মাছ বিক্রি করতে। বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে মাছ বিক্রি ছেড়েই ছুটে আসেন বাড়িতে। ফেরার পথে নিয়ে আসেন মিষ্টি। এসে জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে। কিন্তু চোখের জল বাঁধ মানছে না। এ রকম চোখের জল কতটা প্রশান্তির তা বিলক্ষণ অনুভব করেছেন সে সময় রিতার পাড়া প্রতিবেশীরা।

ফল প্রকাশের পর থেকেই রিতার বাড়ির সামনে সংবাদমাধ্যমের ভিড়। মেয়র গৌতম দেবও এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে। বাড়িতে এত  ‘বড় মানুষের’ ভিড় দেখে তৃপ্তির হাসি রিতার ঠোঁটে। ফল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী রিতা বলেছেন, “আমি জানতাম এ বার সাফল্য আসবে। তবে আগামী দিনে আরও সাফল্য চাই।”