Death in Fever: ৩ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পথে টোটোর মধ্যেই মৃত্যু যুবকের!
Unknown Fever: অবস্থার ক্রমেই অবনতি দেখে শুক্রবার, গৌরবকে নিয়ে টোটোতে করে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক আত্মীয়। কিন্তু, হাসপাতালে আর যেতে হল না। তার আগেই টোটোতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন গৌরব।
জলপাইগুড়ি: করোনা আতঙ্ক না কাটতেই মাথাচাড়া দিয়েছে ডেঙ্গু (Dengue)। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যালেরিয়াও। এই পরিস্থিতিতে আচমকাই মাত্র তিনদিনের জ্বরে মৃ্ত্যু (death in Fever) হল এক যুবকের। ঘটনাটি, ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি ১ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের কলোনি পাড়া এলাকার ঘটনা। জানা গিয়েছে মৃতের নাম গৌরব রায়। বয়স আনুমানিক ১৮ বছর।
মৃত গৌরবের পরিবার জানিয়েছে, গত তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ওই যুবক। কিন্তু, ওই দিনগুলিতে বাড়ির কাছেই বাজারের এক ডাক্তারের থেকে ওষুধ নিয়ে গৌরবকে খেতে দেওয়া হয়। সেই ওষুধ খাওয়ার পর তাঁর জ্বর না কমে উল্টে আরও বাড়তে থাকে। শুধু তাই নয়, আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন গৌরব।
অবস্থার ক্রমেই অবনতি দেখে শুক্রবার, গৌরবকে নিয়ে টোটোতে করে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক আত্মীয়। কিন্তু, হাসপাতালে আর যেতে হল না। তার আগেই টোটোতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন গৌরব। এদিকে, গৌরবের এমন মৃত্যুতে কার্যত হতবাক সকলে। কারণ, গৌরবের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু, পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েনি। করোনাতেও আক্রান্ত ছিলেন না গৌরব। তাহলে, কী করে মৃত্যু হল ওই যুবকের তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
মৃতের পরিবারের এক সদস্য তরুণ রায় বলেন, “তিনদিন থেকে ওর জ্বর ছিল। আগে থেকেই ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল। আজকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে টোটো থেকে নামার আগেই মারা যায় গৌরব। খুব যে জ্বর ছিল এমনটা একদমই নয়। তাও কেন মারা গেল তা স্পষ্ট নয়।”
ঘটনায়, ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনদিনের জ্বরে যুবকের এমন মৃত্যুকে কার্যত চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেও। কারণ, কিছুদিন আগেই ধূপগুড়ি পৌরসভা এলাকায় এক ব্যক্তির ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে।
গৌরবের মৃত্যুতে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. সুরজিৎ ঘোষ বলেন, “পরিবার জানিয়েছে চার দিন থেকে জ্বর ছিল। আজ হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মৃত্যু হয়। সময় পেলে হয়তো চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করা সম্ভব হত। এর আগে ওই যুবককে হাসপাতালে আনা হয়নি। যুবকটি প্রতিবন্ধী। তবে তিনদিনের জ্বরে কেন তার মৃত্যু হল তা স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”
প্রসঙ্গত, ক্রমেই খারাপ হচ্ছে রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। দিন কয়েক আগে অজানা জ্বরে কাঁপছিল গোটা বাংলা। নমুনা পরীক্ষা শুরু হতেই আর পাঁচটা রোগের মধ্যে ধরা পড়ছিল ডেঙ্গুও। দিনকে দিন বাড়ছে এই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।
চলতি বছর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯১৬ জন। গত বছর এই একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৯৪ জন।
গত সাতদিনেই রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৭ জন। গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫৬ জন।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, কলকাতায় এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৩ জন। মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৩৬৪ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় এক সপ্তাহে আক্রান্ত ২৫৫ জন। মোট আক্রান্ত ১ হাজার ১৬৭।
হাওড়ায় এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭ জন। মোট আক্রান্ত ৪০১ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫০। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৫ জন। দার্জিলিংয়ে সাতদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন। মোট আক্রান্ত ১৯৯ জন।
শিলিগুড়ির অবস্থাও বেশ শোচনীয়। পাড়ায় পাড়ায় বেড়েছে মশার দাপট। অবস্থা বেশ খারাপ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাদের তথ্য বলছে, বাগডোগরা, নকশালবাড়িতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সুকনাতেও জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, জায়গায় জায়গায় জমা জল বিপদ বাড়াচ্ছে। পুরসভার ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এই সরকার চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ। তার দায় তো মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। কারণ উনিই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কোথাও দেখা যায়নি স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছে।”
শিলিগুড়ির ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে ভাল নয় তা মানছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাও। তৃণমূল নেতা ভোলা গুহের কথায়, “কোনও কোনও জায়গায়, কিছু কিছু জায়গায় গাফিলতি থেকে যাচ্ছে। আমরা যেহেতু মানুষের জন্য কাজ করি, সে দায় আমাদেরও কিছুটা থেকেই যায়।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য বলছেন তাঁরা সজাগ আছেন। দার্জিলিংয়ের সিএমওএইচ প্রলয় আচার্যের কথায়, “যাতে জল জমে মশার লার্ভা না জন্মায় তার জন্য সমস্ত কাজ করা হচ্ছে।” ধূপগুড়িতেও বাড়ছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। ধূপগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার ডেঙ্গু ধরা পরে শনিবার। এর আগে এই ওয়ার্ডেই এক যুবতীর শরীরে ডেঙ্গুর উপস্থিতি মেলে।
উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গে ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, “একটু সতর্ক থাকুন। বাড়ির পাশে সামান্য জলও জমতে দেবেন না। কারণ জমা জল পেলেই ডেঙ্গুর মশা জন্মায়। জ্বর হলেই নমুনা পরীক্ষা করান। চার পাঁচদিনের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত না করা গেলে রোগীর আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।”
অর্থাৎ মানুষের সর্বনাশ করেই মশার পৌষমাস কাটছে। উৎসবের বাংলায় করোনার মাথাচাড়া তো রয়েছেই। একই সঙ্গে আবার গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার ভূমিকায় ডেঙ্গু। এখনও সতর্ক না হলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: ‘নিখোঁজ’ পদ্ম বিধায়ককে খুঁজতে পুলিশের দ্বারস্থ যুব তৃণমূল!