পিকের টিম হতবাক তাঁর বাড়ি দেখে! কে এই ফাইভ পাশ তৃণমূল নেতা?

Malda: আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের গল্পকেও টেক্কা দিয়ে আজ সেই তিনিই থাকেন প্রাসাদে। যাকে বাড়ি বলা ভুল হবে।

পিকের টিম হতবাক তাঁর বাড়ি দেখে! কে এই ফাইভ পাশ তৃণমূল নেতা?
তৃণমূল নেতার বাড়ি (গ্রাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 10, 2022 | 6:44 PM

এই ধরুন পাঁচ বছর আগের কথা। একটি ছোট্ট ঝুপড়ি আর তাতেই কোনও মতে মাথা গুঁজে পরিবার নিয়ে থাকতেন। কারণ অভাবের সংসার। বাজারে ফল বিক্রি করে যেটুকু আয় হয় তা দিয়েই চালাতে হত পরিবার। কিন্তু আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের গল্পকেও টেক্কা দিয়ে আজ সেই তিনিই থাকেন প্রাসাদে। যাকে বাড়ি বলা ভুল হবে। মালদার ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রামপঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রামের সেই প্রাসাদ দেখলে সকলেরই চোখ আটকে যায়। সেই প্রাদাদের মালিক মাইনুল শেখ। ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। তাঁর এই প্রাসাদ দেখে এখন ঈর্ষান্বিত হয় দলেরই অনেকে। কেউ-কেউ তো আবার পিঠপিছে বলেই ফেলেন, ‘কোনও জাদুকাঠির ছোঁয়াতেই এই পরিবর্তন সম্ভব। নচেৎ নয়!’

মালদা জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি প্রকাশ্যে বললেন, ‘ব্যবসা করে কেউ বাড়ি বানাতেই পারে। ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি তিনি করতেই পারেন।’ কিন্তু তাই বলে এত দ্রুত উন্নতি? পাঁচ বছরেই এই জায়গায়? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মুচকি হেসে রহিম বক্সির উত্তর, ‘সেটা তো উনিই ভাল বলতে পারবেন।’

মইনুলের বাড়ি দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন টিম পিকে-র সদস্যরাও। তবে লক্ষ্মীপুর গ্রামে কান পাতলেই শোনা যাবে সামান্য ফল বিক্রেতা থেকে মাইনুলের ‘রাজকীয়’ বাড়ির মালিক হওয়ার অনেক কাহিনি। যদিও নেতার স্বয়ং দাবি, দলের নাম ভাঙিয়ে নয়, কষ্টের মধ্যে ব্যবসা করেই বানিয়েছেন ‘স্বপ্নের’ বাড়ি। তাঁর আক্ষেপ, ‘ভাল বাড়ি বানিয়ে সবার নজরে পড়ে গিয়েছি।’

মইনুলের বৈভব

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রাম বর্ধিষ্ণু এলাকা। এখানে যেমন ঝুপড়ি রয়েছে, তেমন রয়েছে বেশ কিছু পাকা বাড়িও। তবে মহল্লার সেরা বাড়িটি মাইনুলের। বাড়ির চত্বরে ঢুকতে হবে বিশাল তোরণ পেরিয়ে। ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই মাঠের মতো কংক্রিটের উঠোন। তার শেষে পরপর দোতলা ও তিনতলা দু’টি বাড়ি একই চৌহদ্দির মধ্যে। বাড়ির ভিতরে একাধিক বাতানুকূল যন্ত্র আরও কত্ত কিছু! গ্যারেজে এসইউভি গাড়ি, দু’টি মোটর সাইকেল। বাড়ির পাশেই মাইনুলের রড, বালি, সিমেন্টের দোকানও রয়েছে। সেখানে আবার একটি ট্রাক্টরও আছে।

তৃণমূল নেতার অতীত

গ্রামের লোকজনের কাছে খোঁজ করলেই জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে নাকি এখানেই পূর্ত দফতরের জমিতে ছিল একাধিক ঝুপড়ি। এমনই এক ঝুপড়িতে থাকতেন মাইনুলও। তাঁর বাবা সুবিরুদ্দিন শেখ ফেরিওয়ালার কাজ করতেন বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে মাইনুলই বড়। টাকার অভাবে পঞ্চম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা হয়নি বলে জানালেন মাইনুল নিজেও। এক সময় তিনি বাজারে ফলও বেচতেন।

মইনুলের কথায়, ‘ফল বিক্রির সময়ই আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তখন আমের ব্যবসা করতাম। সেখান থেকেই জমি কেনাবেচার কাজে সহযোগিতা করতে শুরু করি। এখন জমি কেনাবেচার পাশাপাশি নিজের দোকানও আছে।’ ব্যবসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও উন্নতি দ্রুত হয়েছে তাঁর। মইনুল বলেন, ‘২০১৩ সালে তৃণমূলে কর্মী হিসেবে যোগদান। আর ২০১৮ সালেই দল পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দেয়। মানুষের আশীর্বাদে ভোটেও জিতি।’

কী কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?

তবে তাঁর এই চোখে লাগা উন্নতি নিয়ে সমালোচনা কিছু হয় না। জমি দখল থেকে পুকুর ভরাটের মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের হাত আছে তাঁর মাথার উপরে। এমনকী বহু প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা, বেশ কয়েক জন পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গেও নাকি মাইনুলের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

বিজেপির দক্ষিণ মালদহের সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ অবশ্য সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, ‘মানুষের টাকা লুট করেই তৃণমূলের নেতারা নিজেদের সম্পত্তি বাড়িয়ে চলেছেন। ফুলেফেঁপে ঢোল হচ্ছেন।’

যদিও মাইনুল এইসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে, বরং মানুষের পাশে থাকা, দরিদ্রদের উপকারে আসার চেষ্টা করেন তিনি এমনই দাবি তাঁর। মইনুল বলেন, “লকডাউনে চালই বিলি করেছি পাঁচ লক্ষ টাকার। এই ইদ উপলক্ষে এখনো নিয়ম করে পোশাক বিলি করছি। মানুষের টাকা লুটের কোনও প্রশ্নই নেই।”