TV9 বাংলার খবরের জের, পাঁচ বছর পর শিকল খুলল সেলিমের
Malda: পাঁচ বছর ধরে শিকল বাঁধা অবস্থায় ছিল সেলিম। তার শরীর জুড়ে দগদগে ঘা ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছিল।
মালদা: অবশেষে খোলা হল শিকল। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হল মালদার মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে। গত পাঁচ বছর ধরে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়ছিল সেলিম নামে বছর ১৯-এর ওই যুবককে। সম্প্রতি, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে সেই ঘটনা। পরিবারের অভিযোগ ছিল বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে টিভি নাইন বাংলায় সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। আ্যাম্বুলেন্সে ওই যুবককে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হল। এত বছর ছেলের চিকিৎসার সুযোগ মেলায় চোখেে জল চলে আসে বাবার।
বহরমপুরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেলিম আখতার নামে ওই যুবকের। প্রশাসনে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন সেলিমের বাবা জাকির হোসেন। সংবাদমাধ্যমে সেলিমের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সাহায্যের জন্য পাশে এসে দাঁড়ান তৃণমূল নেতা জম্মু রহমান এবং তৃণমূল বিধায়ক তজমুল হোসেন। তড়িঘড়ি প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে জন-প্রতিনিধিরা ভিড় জমাতে শুরু করে জাকির হোসেনের বাড়িতে। সেলিম আখতারের বাবা জাকির হোসেন বলেন, ‘আপনাদের খবরের জেরেই আজ আমার ছেলে পাঁচ বছর পর সুচিকিৎসা পেতে চলেছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আমরা আর্থিক অনটনের কারণে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারিনি। শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমে খবরের পরে আমার ছেলে সুচিকিৎসা পেতে চলেছে। আমরা সংবাদমাধ্যমের কাছে কৃতজ্ঞ।’
এ দিন সেলিমকে দেখতে গিয়ে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান জানান সংবাদমাধ্যমে আমরা সেলিমের এই খবরটি দেখতে পেয়ে, ওর চিকিৎসার সুব্যবস্থা যাতে হয় তার প্রচেষ্টা শুরু করেছি। আজই সরকারি খরচে ওকে প্রথমে মালদা হাসপাতাল ও সেখান থেকে মালদা জেলা শাসকের অফিস এবং মালদা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আজই বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে সেলিমকে।
জরাজীর্ণ মাটির বাড়ির সামনে একটা গাছে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল সেলিমকে। বৃষ্টি হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে ঘরের দাওয়ায়, নচেৎ গাছের নীচেই ঠিকানা। শেকল ক্রমশ শরীরে চেপে বসে তৈরি করে দগদগে ঘা। ধুলো ময়লা, আবর্জনা, মাছি বিষাক্ত করে তুলেছে সেই ঘা।বিষ ছড়িয়ে পড়ছে শরীর জুড়ে। সেলিমের দাদা হারুন রশিদ এবং মা লাইলি বিবিও মানসিক ভারসাম্যহীন। পরিবারে রয়েছেন বাবা জাকির হোসেন, ছোট ভাই আসিফ ও ঠাকুর্দা। লকডাউনে সামান্য রোজগারও যেতে বসেছে তাঁদের।
পরিবারের দাবি, ওঝা থেকে শুরু করে চিকিৎসক সকলের কাছেই ছুটতে ছুটতে আজ কপর্দকহীন তাঁরা। যুবকের বাবাও জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়ে, প্রধানের হাতে পায়ে ধরেও ফল হয়নি। বিধায়ককে বহুবার বলার পরেও ঘুরে তাকাননি কেউ। তৈরি হয়নি যুবকের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট। চিকিৎসার ব্যবস্থা তো দূর অস্ত, সরকারি রেশনটুকুও যথাযথ পায় না পরিবার।মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যবস্থা হয়নি, চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলেও অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর অবশেষে চিকিৎসার ব্যবস্থা হল ওই যুবকের। আরও পড়ুন: অস্বস্তিকর গরমের সঙ্গে ক’দিন চলবে টানা বৃষ্টি? জানাল আবহাওয়া দফতর