পাঁচ বছর ধরে শিকলে বাঁধা যুবক, শরীরে দগদগে ঘা, ফিরেও তাকায়না প্রশাসন!

বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। দাবি এই যুবকের বাবার।

পাঁচ বছর ধরে শিকলে বাঁধা যুবক, শরীরে দগদগে ঘা, ফিরেও তাকায়না প্রশাসন!
শিকল দিয়ে বাঁধা যুবক (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 02, 2021 | 3:01 PM

মালদা: গত পাঁচ বছর ধরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। হাতে দগদগে ঘা। তাকে মুক্তি করে দেওয়া হলে এলাকায় মানুষের ক্ষতি করতে পারে, এই ভয়েই দিনের পর দিন তাকে এ ভাবেই বেঁধে রেখেছে তার পরিবারের সদস্যরাই। মালদার ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের ইকবালপুরের ঘটনা। সন্তানের চিকিৎসা করা্নো তো দূর, ঠিক মতো আবার জোটানোই দায় ওই পরিবারের। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে দাবি যুবকের বাবার। যুবকের মা ও এক ভাইও মানসিক ভাসাম্যহীন। তৃণমূল বিধায়কের দাবি, এমন অভিযোগ তিনি এই প্রথমবার শুনছেন।

সেলিম আখতার নামে ওই যুবকের বয়স ১৯। জরাজীর্ণ মাটির বাড়ির সামনে একটা গাছে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় তাকে। বৃষ্টি হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলে ঘরের দাওয়ায়, নচেৎ গাছের নীচেই ঠিকানা। শেকল ক্রমশ শরীরে চেপে বসে তৈরি করেছে দগদগে ঘা। ধুলো ময়লা, আবর্জনা,  মাছি বিষাক্ত করে তুলেছে সেই ঘা।বিষ ছড়িয়ে পড়ছে শরীর জুড়ে। সেলিমের দাদা হারুন রশিদ এবং মা লাইলি বিবিও মানসিক ভারসাম্যহীন। ঘর ছাড়া তাঁরা। পরিবারে রয়েছে বাবা জাকির হোসেন, ছোট ভাই আসিফ ও ঠাকুর্দা। লকডাউনে সামান্য রোজগারও যেতে বসেছে।

পরিবারের দাবি, ওঝা থেকে শুরু করে চিকিৎসক সকলের কাছেই ছুটতে ছুটতে আজ কপর্দকহীন তাঁরা। ঘরের বাইরে ওই যুবককে শেকল বেঁধে রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই। যুবকের বাবা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়ে, প্রধানের হাতে পায়ে ধরেও ফল হয়নি। বিধায়ককে বহুবার বলার পরেও ঘুরে তাকাননি কেউ। তৈরি হয়নি যুবকের প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট। চিকিৎসার ব্যবস্থা তো দূর অস্ত, সরকারি রেশনটুকুও যথাযথ পায় না পরিবার। ২০১৭ সালে বন্যায় সব হারিয়েছিল এই পরিবার। কিন্তু, তাতেও মেলেনি সরকারি সাহায্য। পরিবারের অভিযোগ, আবাস যোজনায় নাম তোলার আবেদন করতে গেলেও মুখ ফিরিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য থেকে প্রশাসনের আধিকারিকরা। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যবস্থা হয়নি, চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলেও অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় বিজেপির তরফ থেকে কিষাণ কেডিয়া বলেন, প্রশাসনের কোনও দায়িত্ব নেই। ওই যুবকের পরিবারের তরফ থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, বিধায়কের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি। যুবকের ওই অবস্থা দেখেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন, এই বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। তিনি ওই যুবকের বাড়ি গিয়ে কথা বলবেন ও সাহায্যের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এইমাত্র বিষয়টা জানতে পারলাম। আমি যাব। তৃণমূলের তরফ থেকে ওই পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হবে।’ আরও পড়ুন: দুর্নীতিতে অভিযুক্তের আইনজীবীর সঙ্গে হাইকোর্টের বিচারপতির দিল্লিতে সাক্ষাৎ, বিস্ফোরক দাবি শুভেন্দুর