‘ভুয়ো আধার কার্ড, ডকুমেন্ট ধরা পড়তেই…’ রূপশ্রী জালিয়াতিকাণ্ডে তড়িঘড়ি বদলি আধিকারিকের

Rupasree Prakalpa Scam: মোথাবাড়ির ব্লক আধিকারিক অনির্বাণ সেনগুপ্তের অভিযোগ, রূপশ্রী নিয়ে জালিয়াতির মাত্রা ছাড়িয়েছে। এর পেছনে একটি বড় চক্র কাজ করছে।

'ভুয়ো আধার কার্ড, ডকুমেন্ট ধরা পড়তেই...' রূপশ্রী জালিয়াতিকাণ্ডে তড়িঘড়ি বদলি আধিকারিকের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 07, 2021 | 3:07 PM

মালদা: বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে সরকারি খাতে দুর্নীতি রুখতে একাধিক কড়া পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাটমানির দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোরহস্ত হতে শুরু করে রাজ্য সরকার। কিন্তু, তারপরেও, সরকারি নজর এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প ‘রূপশ্রী’ (Rupasree) নিয়েও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে দুটি জেলায়। মালদায় অভিযোগ পেয়েই তদন্ত নামে প্রশাসন। কিন্তু তদন্ত শুরু হতেই বদলির নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হল সরকারি আধিকারিকের হাতে।

মোথাবাড়ির ব্লক আধিকারিক অনির্বাণ সেনগুপ্তের অভিযোগ, রূপশ্রী নিয়ে জালিয়াতির মাত্রা ছাড়িয়েছে। এর পেছনে একটি বড় চক্র কাজ করছে। শুধু তাই নয়, এই চক্রের পেছনে শাসক শিবিরের পরোক্ষ যোগ থাকার সম্ভাবনাও ঠারে-ঠোরে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন অনির্বাণবাবু। তদন্তের গতি বাড়াতে বিশেষ কমিটি তৈরি করা হয়। সেই কমিটিতে ছিলেন খোদ জেলাশাসকও। রূপশ্রী প্রকল্পে যাঁরা বেনিয়মে টাকা পেয়েছেন তাঁদের সকলের সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি যাচাই করা হয়। গরমিল ধরা পড়তেই সেই পরিবারগুলিকে ডেকে পাঠানো হয় ব্লক অফিসে। তারপরেই বদলির চিঠি পান অনির্বাণ। মাত্র পাঁচমাসের মধ্যে এইভাবে ব্লক আধিকারিকের বদলি কার্যত নজিরবিহীন। প্রশ্ন উঠছে সরকারি প্রকল্পের জালিয়াতিকাণ্ডে তদন্তের জন্যই কি এই বদলির নির্দেশ?

বিডিও অনির্বাণ সেনগুপ্তের কথায়, “মোথাবাড়ি সুলতানপুর থেকে যে দুটি পরিবার রূপশ্রীতে বেনিয়মে টাকা পেয়েছিল তাদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, তাঁরা কীভাবে টাকা পেয়েছিলেন সে নিয়েও বিশেষ কিছু জানতেন না বলেই দাবী করেছে ওই দুটি পরিবার। আমরা সমস্ত নথি খুঁটিয়ে দেখেছি। আধার কার্ড, বিয়ের সার্টিফিকেট সবটাই জাল। যাঁরা টাকা পেয়েছিলেন তাঁরা টিপসই দিয়েছেন ওই জাল সার্টিফিকেটগুলিতে। স্পষ্টত, তাঁদের কোনটা আসল কোনটা নকল বোঝা সম্ভব নয়। এর পেছনে যে বড় একটি চক্র কাজ করছে তা আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না।”

অনির্বাণবাবু আরও জানিয়েছেন, যাঁরা যাঁরা রূপশ্রী প্রকল্পে টাকা পেয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকে প্রাপ্ত টাকা ফেরত দিয়ে গিয়েছেন। এমনকী, স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে লিখিত জমা দিয়ে জানিয়েছেন তাঁরা এই টাকা পাওনার কথা জানতেন না। অনির্বাণবাবুর আরও অনুমান, জালিয়াতরা নিজেদের বাঁচাতে গ্রামের কিছু মহিলাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে। তদন্তের এই গতির জন্যই কি বদলির নোটিস দেওয়া হল? এ প্রসঙ্গে যদিও বিশেষ মুখ খোলেননি বিডিও অনির্বাণ সেনগুপ্ত। জানা গিয়েছে তাঁকে মেদিনীপুরে বদলি করা হয়েছে। এ হেন বিডিও বদলে প্রশ্ন উঠছে, কাকতালীয়ভাবেই কি এই বদলি নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে  এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে জেলাপ্রশাসন।  নীরব স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি, অভিযোগ ওঠে, বিবাহিত মহিলারা এমনকী সন্তানবতী মায়েরারও রূপশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু, রূপশ্রীর (Rupasree Prakalpa) জন্য কোনওদিনই তাঁরা আবেদন করেননি। তবু এসে পৌঁছেছে টাকা। কিন্তু সেই টাকার পুরোটা পাচ্ছেন না গ্রহীতারা। কিছু টাকা হাতে এসে বাকিটা চলে যাচ্ছে প্রতারকদের হাতে। অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করেছিলেন অনির্বাণবাবু। যদিও, পঞ্চায়েত প্রধান রিজিয়া বিবি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিলেন। বুধবার, রূপশ্রী জালিয়াতির তদন্তভার কালিয়াচক পুলিশের হাতে তুলে দেন ব্লক আধিকারিক।

আরও পড়ুন: না চাইতেই অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার! ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে বিবাহিত মহিলারাও পাচ্ছেন টাকা, নেপথ্যে কারা?