Murshidabad: বিপদের নাম গঙ্গা! সামশেরগঞ্জে জলের তলায় আস্ত শবদাহ ঘাট

Landslide: স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ আচমকা গঙ্গার জলে তলিয়ে গেল প্রতাপগঞ্জ মহেশতলার  শবদাহ ঘাট। প্রায় ১৫ টি গ্রাম এই শবদাহ ঘাটের উপর নির্ভরশীল।

Murshidabad: বিপদের নাম গঙ্গা! সামশেরগঞ্জে জলের তলায় আস্ত শবদাহ ঘাট
গঙ্গায় ডুবেছে জমি-বাড়ি, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 24, 2021 | 2:38 PM

মুর্শিদাবাদ: অপ্রতিরোধ্য গঙ্গা ভাঙন। কিছুতেই যেন থামানো যাচ্ছে না। গঙ্গা গিলেই চলেছে একের পর এক বাড়ি। নদীগর্ভে আশ্রয় দিচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে যেন সব কিছু। রাজ্যে যেদিন থেকে বর্ষার আগমন ঘটেছে, সেদিন থেকে ক্রমেই বেড়ে চলেছে নদীর তেজ। বৃষ্টিবাদলের দুর্যোগ বিদায় নিলেও গঙ্গায় অব্যাহত ভাঙন (Landslide)। রবিবার সকালেও  নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে একাধিক জমি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ আচমকা গঙ্গার জলে তলিয়ে গেল প্রতাপগঞ্জ মহেশতলার  শবদাহ ঘাট। প্রায় ১৫ টি গ্রাম এই শবদাহ ঘাটের উপর নির্ভরশীল। দিন কয়েক আগে থেকেই গঙ্গায় জলস্তর কমলেও নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। সেই ভাঙন ঠেকাতে কয়েকদিন আগেই শবদাহ ঘাটে বালির বস্তা ফেলা হয়। কিন্তু, রোখা যায়নি ভাঙন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এইভাবে শবদাহ ঘাটের ভাঙনে  কার্যত এরপর গ্রামগুলিও তলিয়ে যেতে পারে গঙ্গায় এমনটাই আশঙ্কা।

স্থানীয়  এক বাসিন্দা বলেন, “আজ যেভাবে চোখের সামনে জমি-ঘাট জলের তলায় চলে গেল তা আর বলার নয়। আমরা রাতের বেলা চমকে চমকে উঠছি। এই বোধহয় বাড়িটাও জলের তলের গেল! আমাদের এখানকার প্রাচীন মন্দির সব জলের তলায় চলে গিয়েছে। শ্মশানঘাট জলের তলায় চলে গিয়েছে। জানি না এভাবে আর কতদিন চলবে!”

অন্য এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার কথা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককে বলা হয়েছে। এছাড়া বিধায়ককেও লিখিত দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করা যাবে না। কোনওরকমে ঠেকনা দেওয়াই কেবল  সম্ভব। এইভাবে বেশিদিন টানা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের আবেদন, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার দ্রুত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করুন।

গঙ্গা ভাঙনে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে মালদা (Malda), মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলায়। একের পর গ্রামের চাষের জমি চলে গিয়েছে নদী বক্ষে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন বহু মানুষ। এরপরও রক্ষে নেই। ক্ষিদে যেন মিটছেই না নদীর। গত রবিবারও সন্ধে নাগাদ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভাঙন শুরু হয়। প্রচণ্ড ভাঙন হওয়ায় এলকার মানুষ এখনও আতঙ্কে রয়েছেন। বারবার তারা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন যেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়। কারণ এই ভাঙন ঠিকমতো প্রতিরোধ করা না হলে ঘর-বাড়ি জমি সব গঙ্গায় তলিয়ে যেতে শুরু করবে। নিঃস্ব হয়ে যাবেন তাঁরা।

তারআগেও, একই ছবি ছিল জেলায়। নতুন করে গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল ৮টি বাড়ি। সামশেরগঞ্জ ব্লকের ধুলিয়ান পৌরসভার ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের লালপুর গ্রামে প্রায় এক মাস থেকে অব্যাহত রয়েছে এই ভাঙন। ফলে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সামশেরগঞ্জের শিবপুর এলাকায়। আতঙ্ক ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী ধানঘরা হিরানন্দপুর এলাকাতেও।  ইতিমধ্যে অভিযোগের আঙুল উঠেছে প্রশাসনের দিকে। লালপুর এলাকার স্থানীয়রা জানাচ্ছেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়াই হয়নি গঙ্গার পাড় বাঁধানোর। প্রায় এক মাস ধরে গঙ্গা ভাঙন চলছে কিন্তু কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা তাঁরা পাননি। দ্রুত পাড় বাঁধানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন,”আমাদের বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। জমি তলিয়ে যাচ্ছে। বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ বানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্ত তাও কতটা চলবে জানিনা। সরকারের কাছে আর্জি দ্রুত বাঁধ তৈরি হোক। যাতে সন্তান নিয়ে আমরা নিরাপদে থাকতে পারি।” এক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে প্রায় আটটি বাড়ি। তলিয়ে গিয়েছে রাস্তা। প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে মালদায় গঙ্গার তীব্র ভাঙনে বালুটোলা গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ৫০০-র বেশি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছিলেন প্রায় ৭০ মতো পরিবার। কিছুদিন আগে সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন গোপালপুরের ভাঙন পরিস্থিতি দেখে যান। কিন্তু  গৃহহারাদের পুনর্বাসন বা ত্রাণের কোনও ব্যবস্থাও করা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয় গোপালপুরের। দিনের পর দিন চোখের সামনে সর্বস্ব নদী গর্ভে তলিয়ে যেতে দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন গোপালপুরের বাসিন্দারা। বিক্ষোভে সামিল হন দেখান দুর্গতরা। কাজ শুরু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলে তাঁরা।

আরও পড়ুন: TMC: আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে উঠল তৃণমূল নেতার পরিত্যক্ত বাড়ি! ফের ‘কুরুক্ষেত্র’ কালিয়াচক