Inspirational Story: দিনমজুরি খেটে করেছেন এমএ! চাকরির অভাব ‘লটারিওয়ালা’ বানিয়েছে মুর্শিদাবাদের যুবককে

Lottery Seller: সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মারা যায় তন্ময়ের। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে সাইকেল দোকানে কাজ নেন কিশোর তন্ময়।

Inspirational Story: দিনমজুরি খেটে করেছেন এমএ! চাকরির অভাব ‘লটারিওয়ালা’ বানিয়েছে মুর্শিদাবাদের যুবককে
তন্ময় চুনারি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 17, 2022 | 10:00 AM

নওদা: রাস্তার ধারে ছোট লটারির টেবিল। সার দিয়ে লটারি সাজানো রয়েছে সেই টেবিলে। লাল টেবিলের সামনে বড় বড় করে লেখা ‘MA পাশ লটারীওয়ালা TANMOY’। বাজারের করতে আসা মানুষজনের চোখ আটকাচ্ছে এই চারচি শব্দতেই। মুর্শিদাবাদের নওদার আমতলা বাজারে রয়েছে এমনই লটারির দোকান। তন্ময় চুনারি নামের এক যুবক সেখানে বসে লটারি বিক্রি করেন। লটারি বিক্রির টাকাতেই কোনওমতে চলে চার জনের সংসার। ছোট থেকেই বাড়িতে অভাব ছিল তন্ময়ের। অনেক লড়াই করেই স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন তিনি। বেশ কিছু পরীক্ষায় পাশ করলেও মেলেনি চাকরি। দাদা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার এসেছে তাঁর কাঁধে। তাই দাদার লটারির দোকানকেই নতুন করে সাজিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তন্ময় বলেছেন, “অনেক দুঃখের করেই নামটা লিখেছি। এমএ পাশ করার পরও আজ আমাকে লটারি বিক্রি করতে হচ্ছে।”

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মারা যায় তন্ময়ের। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে সাইকেল দোকানে কাজ নেন কিশোর তন্ময়। পরে এক প্রকার স্কুলছুট হয়ে পড়েন। সংসারের হাল ধরতে তাঁর দাদা জয়দেব চুনারি আমতলা বাজার এলাকায় টেবিল পেতে লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করেন। ফের স্কুলে ভর্তি হন তন্ময়। ২০১১ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। তার পর সংসারের খরচ জোগাতে কখনও রাজমিস্ত্রি, কখনও রংমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ, কখনও অন্যের জমিতে দিনমজুরিও করতে হয়েছে তাঁকে। এ ভাবে ২০১৮ সালে আমতলা যতীন্দ্র রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয় থেকে বিএ এবং গত বছর দূরশিক্ষায় বাংলা নিয়ে এমএ পাশ করেন তিনি। কিন্তু দাদার মৃত্যু হতেই ফের আর্থিক অনটন শুরু হয় সংসারে। তার পরই তন্ময়কে হতে হয় ‘এমএ পাশ লটারিওয়ালা’।

নিজের জীবন সংগ্রাম নিয়ে তন্ময় বলেছেন, “সারাদিনে ৪০০ টিকিট বিক্রি করতে পারলে ১৬০ টাকা কমিশন পাই। এ দিয়ে তো সংসার চলে না। টিউশনও পড়াই। এ ভাবেই দিন কাটছে।” তন্ময় জানিয়েছেন তাঁর অসুস্থ মায়ের জন্য মাসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে। সেই সঙ্গে রয়েছে সংসারের বাকি খরচা। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও লড়াই ছাড়েননি নওদার এই যুবক। নিজের রোজকার দিনলিপি নিয়ে তিনি বলেছেন, “ভোর সাড়ে তিনটেই উঠি। তার পর হাইস্কুলের মাঠে দৌড়তে যাই। বাকিদের দৌড় প্র্যাকটিস করাই। তার পর সকাল ৬টায় টিউশন পড়াই। নিজেও পড়াশোনা করি। ৮টায় দোকান খুলতে হয়।”

কষ্ট করেই বিএ, এমএ পাশ করেছেন তন্ময়। আশা ছিল চাকরি হবে। সংসারের হাল ধরবেন। ইচ্ছে ছিল চাকরি করবেন পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে। বেশ কিছু পরীক্ষাতেও বসেছিলেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। তাই জীবন সংগ্রামে লড়াইয়ে লটারি বিক্রি করাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। ভাগ্য যাচাই করতে অনেক লোকই লটারি কেনে তাঁর থেকে। সেই টেবিলে বসেই নিজের ভাগ্য গড়ার লড়াই চালাচ্ছেন এই লটারিওয়ালা।