Dairy Sector: বকেয়া কোটি কোটি টাকা! মাথায় হাত দুধ ব্যবসায়ীদের

Dairy Farm: যাঁরা সরবরাহকারী, তাঁরা পড়েছেন এখন মহা ফ্যাসাদে। সাধারণ দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা চাপ দিচ্ছেন তাঁদের উপর। গ্রামবাসীরা চড়াও হচ্ছেন তাঁদের বাড়িতে।

Dairy Sector: বকেয়া কোটি কোটি টাকা! মাথায় হাত দুধ ব্যবসায়ীদের
দুধের টাকা গায়েব
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 03, 2023 | 7:42 PM

বেথুয়াডহরি: নদিয়ার বেথুয়াডহরি। এখানকার গ্রামের মানুষদের জীবন ধারণের অন্যতম হাতিয়ার দুধ শিল্প। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ একটি সংস্থার কাছে দুধ সরবরাহ করেন তাঁরা। রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা দেখে অনেক আশা ভরসা নিয়ে এই দুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন অনেক মানুষ। কিন্তু দুই বছর গড়াতে না গড়াতেই তাঁরা এখন পথে বসতে চলেছেন। প্রায় কয়েক কোটি টাকা পাওনা। বাড়ি থেকে পালিয়ে, জমি-গবাদি পশু বিক্রি করেও টাকা মেটাতে পারছেন না অনেকে। এই দুগ্ধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি বলছেন, ‘এই এক কোটি টাকা আমার নয়, এই টাকা প্রায় কয়েকশো লোকের। সবাইকে এই টাকা ভাগ করে দিতে হবে, এটা তাঁদের টাকা। আজ প্রায় চার মাস হল বাড়ি ছাড়া। পরিবারকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। ছেলে-মেয়ের স্কুল কলেজ বন্ধ। আমি এখন আত্মহত্যা করব না কাউকে খুন করে দেব, নিজেই বুঝতে পারছি না।’ রাজ্য সরকারের কাছে হাতজোড় করে তাঁর কাতর মিনতি, ‘আমাদের বাঁচান।’

কীভাবে হল এত টাকার পাওনা? কীভাবে কাজ করে বেথুয়াডহরির এই দুধ শিল্প? সহজ হিসেবে বলতে গেলে, সাধারণ গ্রামবাসীদের থেকে দুধ কেনেন দুধ সরবরাহকারীরা। পরিবার পিছু আনুমানিক ১-৫ লিটার পর্যন্ত দুধ কেনেন তাঁরা। গ্রামের অনেকগুলি পরিবার মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫০-৩০০ লিটার দুধ কেনেন এক এক জন সরবরাহকারী। তারপর সেই দুধ পৌঁছে যায় ব্লক স্তরের দুগ্ধ সংগ্রহকেন্দ্রে। সেখানে গড়ে প্রায় ৪ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ হয় প্রতিদিন। এমন একাধিক দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে দুধ পৌঁছে যায় প্লান্টে। সেখানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার লিটার দুধ কেনা হয়। অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে, এই দুধ শিল্পের উপর কতগুলি পরিবারের জীবন জীবিকা নির্ভর করে রয়েছে। সংখ্যাটা আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার। টিভি নাইন বাংলার হাতে যে ওয়ার্ক অর্ডারের কপি এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রতি লিটার দুধ প্লান্ট ২৭ টাকা কেজি দরে কেনে। মাসের পর মাস টাকা না মেটালে এই টাকার অঙ্ক কোটি টাকায় পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। লাগেওনি। জানা যাচ্ছে, গত প্রায় এক বছর ধরে সেই টাকা বকেয়া রেখে দিয়েছে সংস্থা। আর তার জেরে দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। এলাকাবাসীরা বলছেন, মোট চারটি প্ল্যান্ট মিলিয়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা দেনা।

যাঁরা সরবরাহকারী, তাঁরা পড়েছেন এখন মহা ফ্যাসাদে। সাধারণ দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা চাপ দিচ্ছেন তাঁদের উপর। গ্রামবাসীরা চড়াও হচ্ছেন তাঁদের বাড়িতে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই সরকারের নজর এনেছেন দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা চিঠি দিয়েছেন রাজ্য প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল। গত বছরের জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের থেকে প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

দুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষরা বলছেন, যে সংস্থার রাজ্য সরকারের চুক্তি হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ ছিল জয়েন্ট ভেঞ্চারের কথা। অর্থাৎ, রাজ্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। সরকারের সঙ্গে চুক্তি দেখে ভরসা পেয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। আর এখন তাঁরা বাঁচার রাস্তা খুঁজছেন। যে বেসরকারি সংস্থা এই প্ল্যান্ট চালাচ্ছিল, সেখানেও পৌঁছে গিয়েছিল টিভি নাইন বাংলা। সেটি বর্ধমানে। গিয়ে দেখা গেল, প্ল্যান্ট তালাবন্ধ। জানা যাচ্ছে, প্রায় চার-পাঁচ হল এভাবেই তালাবন্ধ রয়েছে প্ল্যান্ট। ওই সংস্থার অফিস কলকাতার আলিপুরে। সেখানেও গিয়েছিল টিভি নাইন বাংলা। সমস্যা ও তার সম্ভব্য সমাধানের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও কোনও উত্তর মিলল না। আইনি জটিলতার কথা বলে দেখা করলেন না সংস্থার ডিরেক্টর।

প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রে খবর, ওই সংস্থার টাকা বকেয়া রয়েছে। তবে পুরো টাকা যে বকেয়া রয়েছে, এমন নয়। খানিক টাকা তিনি পেয়েছেন, এবং সেই টাকা ওই সংস্থা দিতে পারেন, এমন অবস্থায় রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘টাকা না পাওয়ার কোনও কারণ নেই। টাকা দিতে গেলে, তার বকেয়া টাকা… ইত্যাদি তো দেখতে হবে। আমরা যে ইনসেনটিভ দিয়েছিলাম, সেটা সবাই পেয়েছে কি না, সেটা যাচাই করে দেখতে বলা হয়েছিল।’