Silicosis Disease: ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে ফুসফুস, মারণ রোগে আক্রান্ত বাংলার একটা আস্ত গ্রাম!
Silicosis Disease: অসুখের নাম সিলিকোসিস। পাথরের গুঁড়ো ফুসফুসের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। একটা আস্তরণ পড়ে যায় ফুসফুসে। তার জেরে প্রবল শ্বাসকষ্ট হয়।
মিনাখাঁ: মারণ রোগে আক্রান্ত এ রাজ্যের একটা গোটা গ্রাম। রোগের নাম সিলিকোসিস। সেই রোগ ধরা পড়ার পর আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। তবুও মৃত্যুর আশঙ্কা থেকেই যায়। তেমন কোনও চিকিৎসাই নেই। গ্রামবাসীরা নাকি এখন নিজেরাই লক্ষণ দেখে বলে দেন, কার আয়ু আর কতদিন! কেন হল এই রোগ? কারণ, গ্রামে রোজগার ছিল না। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েই দেহে বাসা বেঁধেছে এই রোগ। রয়েছে আবাস যোজনা, রয়েছে ১০০ দিনের কাজ। গ্রামীণ রোজগারের নানা প্রকল্পও রয়েছে। আক্রান্ত-মৃতদের জন্য রয়েছে সরকারি ক্ষতিপূরণ নীতিও। তাতে কী অবস্থা বদলেছে? মিনাখাঁর গোয়ালদহ গ্রামের মানুষ কিন্তু তা বলছেন না।
১৩ বছর আগে ঘূর্ণিঝড় আয়লার দাপটে নদীবাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় এই গ্রামের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। মিনাখাঁর গোয়ালদহ গ্রামের ২০০-র বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরই ভিন রাজ্য বা ভিন জেলায় পাথর খাদানে কাজে গিয়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
বছর তিনেক পরে তাঁদের মধ্যে অনেকেই ফিরলেন ফুসফুসের অসুখ নিয়ে। অসুখের নাম সিলিকোসিস। পাথরের গুঁড়ো ফুসফুসের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। একটা আস্তরণ পড়ে যায় ফুসফুসে। তার জেরে প্রবল শ্বাসকষ্ট হয়। শারীরিক দুর্বলতা থেকে মৃত্যুর দিন গোনাই এই রোগে আক্রান্তদের ভবিতব্য।
আলিমুন নেছা নামে এক গ্রামবাসী জানান, তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য ৪ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে বাকি দুই ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। জমিজমা যা ছিল সে সবও বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
শারীরিক দুর্বলতায় সিলিকোসিসে আক্রান্তেরা আর কাজ করতে পারেন না। বাড়ির মহিলারা জরির কাজ করে কোনও ক্রমে সংসার চালান। রোজ গড়ে আয় ৪০ টাকার কাছাকাছি। এই আয়ে খিদের জ্বালা মেটে না।
২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য দফতরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিলিকোসিস রোধ কর্মসূচি। দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের পরে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আক্রান্তদের দু’লক্ষ টাকা, মৃতদের চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাস্তব ছবি কী, তা প্রশাসনের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। স্বাস্থ্য ভবনের দাবি, বসিরহাট, বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, রামপুরহাটের ২৭টি ব্লকে ২০১৯-২২ সালের মধ্যে সিলিকোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জন। মিনাখাঁর বিডিও বলছেন, শুধু তাঁর ব্লকেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩, মৃত ১৩।
শ্রবণ ক্ষমতা কমে এসেছে দেবীতলার বাসিন্দা অনন্ত সর্দারের। তাঁর প্রেসক্রিপশনে সিলিকোসিসের উপসর্গ জ্বলজ্বল করছে। সরকারি শিবিরের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রেসক্রিপশনে সিলিকোসিসের উল্লেখ নেই, অথচ যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে সেটাও সিলিকোসিসের।
সিলিকোসিস অধিকার রক্ষা কমিটির সম্পাদক সইদুল পাইকের দাবি, ২০১৯ সাল থেকে এক্স-রে রিপোর্ট না আসায় ক্ষতিপূরণ পেতে অসুবিধা হচ্ছে।