
আসানসোল: একটা-দু’টো টাকা নয়। একেবারে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। আসানসোলের বুকে উঠল বিরাট বড় অভিযোগ। জুড়ে গেল তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য কমিটির সদস্যের ছেলের নাম। আসরে নামলেন খোদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর এই সমস্ত অভিযোগ প্রকাশ্যে এল একটা এফআইআর-র পর। ওই তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন এক অবসরপ্রাপ্ত জওয়ান।
অবসরপ্রাপ্ত ওই বিএসএফ অফিসারের অভিযোগ, তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদের পুত্র তহসিন আহমেদ বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষকে লুটছেন। বেশি টাকা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ইতিমধ্যেই কোটি কোটি আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ওই অবসরপ্রাপ্ত জওয়ানের কথায়, ‘প্রথমে ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। ভাল রিটার্ন পেয়েছিলাম। তারপর ৪১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর কোনও সুদ আসে না। যাঁরা আমার কথা শুনে টাকা ঢেলেছিলেন, তাঁদের টাকাও আটকে রেখেছে।’
একই অভিযোগ আসানসোলের মহিশীল কলোনির বটতলা এলাকার বাসিন্দা মৌটুসী দত্তেরও। এদিন তিনি বলেন, ‘সোনার গয়না বন্ধক রেখে ২০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। কয়েক মাস সুদ পেয়েছি। কিন্তু এখন সব বন্ধ। আসলটাও ফেরত দিচ্ছে না।’
ইতিমধ্য়েই তহসিন আহমেদ-সহ তাঁর বেশ কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে আসানসোল উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। পরিস্থিতি সম্পর্কে আসানসোল উত্তর বিধানসভার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটককে অবহিত করানোর জন্য বৃহস্পতিবারই তাঁর কাছে দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রতারিতরা। প্রশাসন আইনতভাবে তাঁদের সব রকমের সাহায্য় করবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আসানসোলের আর্থিক তছরুপের ঘটনায় তৃণমূল নেতার ছেলের নাম জড়াতেই নিজের সমাজমাধ্য়মে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আসানসোল জুড়ে তিন হাজারের বেশি পরিবারকে ঠকিয়ে তৃণমূল নেতার ছেলে সাড়ে তিনশো কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা করেছেন বলেই অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এদিন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তহসিনের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে গোটা ঘটনায় সেবি ও ইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু।
SCAM ALERT – A Massive ₹350 Crore Chit Fund Scam Rocks Asansol – Handiwork Of A TMC Bigwig’s Son
For 3 long years, Tahsin Ahmed; son of Shakil Ahmed alias Master Shakil, Co-President of TMC’s Minority Wing in Paschim Bardhaman district has been looting over 3,000 innocent… pic.twitter.com/csNKBZZgfx
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) October 23, 2025
অবশ্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতার এই পোস্ট ‘বাজার গরম’ করার জন্য বলেই দাবি করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘উনি তো সব সময় সিবিআই-ইডি তদন্তের দাবি করেন। ওনার কাছে যদি সমস্ত নথি প্রমাণ থাকে, তা হলে উনি সেগুলো তাঁদের হাতে তুলে দিক।’ অন্য দিকে তৃণমূলের আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৈয়দ মাহফুজুল হাসান বলেন, ‘শাকিল আহমেদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। উনি আমাদের পার্টির সহ-সভাপতি ছিলেন, কিন্তু এখন কোনও পদে নেই। একটাই কথা প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে, প্রতারিতরা তাঁদের কাছে যান।’
অন্যদিকে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে জবাব দিতে হবে। আমরা সারদা দেখেছিলাম। রোজ ভ্যালি দেখেছি। এবার আমাদের ছোট শহর আসানসোলও দেখলাম। সাধারণ মানুষের থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা চুরি করেছে তৃণমূল নেতা ও তাঁর ছেলে।’