১১ দিনের সুইটি কোলে, বাড়ি ফিরতে রাস্তায় নৌকো সওয়ার দম্পতির!

Bengal Flood: ১১ দিনের কন্যাসন্তান সুইটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে রাস্তায় নৌকো চেপে বাড়ি ফিরলেন দম্পতি। কিন্তু জায়গা নেই বাড়িতেও।

১১ দিনের সুইটি কোলে, বাড়ি ফিরতে রাস্তায় নৌকো সওয়ার দম্পতির!
সুইটিকে কোলে নিয়ে দম্পতি, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 04, 2021 | 11:06 PM

পশ্চিমবঙ্গ: নিম্নচাপের জেরে বানভাসি জেলা থেকে শহর। জলের তলায় চলে গিয়েছে একের পর এক গ্রাম, চাষের জমি। ইতিমধ্য়েই বন্যা পরিস্থিতির (Bengal Flood) জেরে রাজ্যে মৃত্য়ু হয়েছে ১৬ জনের। উপায়ান্তর না দেখে রাস্তা দিয়েই নৌকো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। সেরকমই এক মর্মান্তিক ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরের  ঘাটাল মহকুমায়। ১১ দিনের কন্যাসন্তান সুইটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে রাস্তায় নৌকো চেপে বাড়ি ফিরলেন দম্পতি। কিন্তু জায়গা নেই বাড়িতেও। বন্যার তোড়ে আস্ত বাড়িটাই জলের তলায়! অগত্যা লোকের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে দিন গুজরান।

সদ্যোজাত কন্যাসন্তানের মা সুমিত্রা মুলার জানিয়েছেন, প্রসবের আগে যখন ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন বিছানার নীচেই জল জমেছে। কোনওরকমে হাসপাতালের বিছানাতে শুয়ে ছিলেন তিনি। পেটের কাটা সেলাইও শুকোয়নি। তার আগেই জলের দাপটে ছাড়তে হয়েছে হাসপাতাল। রাস্তা দিয়েই নৌকা চালিয়ে প্রতিবেশীর বাড়ির একচিলতে ছাদে আশ্রয়। এভাবেই চলছে দিন। রোজগার তো দূর, অন্নসংস্থানের কোনও ব্যবস্থাই নেই। প্রশাসনও নেই পাশে অভিযোগ দম্পতির।

এদিকে ঘাটালে নতুন করে বৃষ্টি। প্লাবন পরিস্থিতির (Bengal Flood) আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। ইতিমধ্যেই ঘাটাল দাসপুরে বেশ কিছু জায়গায় শিলাবতী নদীর বাঁধ ভাঙা রয়েছে। বৃষ্টির ফলে নদীতে জলস্ফীতি বাড়লে জল যন্ত্রণা আরও বাড়তে পারে বিভিন্ন এলাকায় বলেই মনে করছেন গ্রামবাসী। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, জেলায় জেলায় প্রায় একই প্লাবনের ছবি।

কাটোয়ায় এক টানা ভারী বর্ষণে জলমগ্ন  আদালতের অধিকাংশ চত্বর। ডুবে গেল কাটোয়া আদালতের সেরেস্তা দফতর। এক হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে সেরেস্তা খানায় কাজ করতে হচ্ছে কাটোয়া আদালতের আইনজীবী ও মুহুরীদের। চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসীও। উপযুক্ত জল নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত এই বিপত্তি অভিযোগ আইনজীবীদের।

বাঁকুড়া:

বাঁকুড়ায় টানা বৃষ্টিতে ভেঙ্গে পড়েছে কোতুলপুর-ইন্দাস সংযোগকারী ছোট পাগলা খালের সেতু। চরম সমস্যায় অসংখ্য মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই সেতু ভেঙ্গে পড়ার ফলে মধুবন কলোনী, মহামায়া কলোনী, বেতানরল, ছোট পাগলা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চরম সমস্যায় পড়েছেন।

সেতু ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিজেপি-তৃণমূল রাজনৈতিক তর্জা। স্থানীয় বিজেপি নেতা শিবদাস ঘোষ বলেন, “বাম আমলে এই সেতু মঞ্জুর হয়, কাজ হয় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর। তৃণমূলের ‘দাদা’রা কাটমানি আর সিণ্ডিকেট করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।” পাল্টা, তৃণমূল ব্লক সভাপতি সমীর বাগের দাবি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উপর কারোর হাত থাকে না। খালের পরিসর বেড়েছে। ফলে ঐ সেতু ভেঙেছে। বিজেপি এবিষয়ে কিছু না জেনে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছে বলেই জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা।

হাওড়া:

উদয়নারায়ণপুরের ১১ টি অঞ্চলই জলের তলায়। এই অবস্থায়  আকাশ পথে মুখ্যমন্ত্রীর আসার কথা থাকলেও দুর্যোগ ও খারাপ আবহাওয়ার জেরে উদয়নারায়মপুরে আসতে পারেননি মমতা। মঙ্গলবার, প্লাবন পরিস্থিতিতে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এদিকে, ক্রমেই জল বাড়ছে আমতায়। হাজারে হাজারে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় ত্রাণশিবিরে ও উঁচু এলাকাগুলিতে। আমতা সোহাগড়ি ব্রীজের উপরেও মানুষ ও গবাদি পশু একসঙ্গে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। বুধবার, আমতায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। স্পষ্ট জানান, এই বন্যা ‘ম্যান মেড’। পাশাপাশি ডিভিসি থেকে তিন-চারদিন জল না ছাড়ার আবেদন জানিয়ে রাজ্যের সেচ দফতরের তরফে দেওয়া হয় চিঠিও। আরও পড়ুন: ‘ম্যান মেড’ বন্যা পরিস্থিতিতেই প্রায় ৬০হাজার কিউসেক জল ছাড়ল দুর্গাপুর ব্যারেজ