Snake in Mid Day Meal : অ্যাসবেসটস ফুটো, বৃষ্টির জল পড়ে চালের ড্রামে, জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়িতে তালা গ্রামবাসীদের

Snake in Mid Day Meal : বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ভাবিয়ে তুলেছে এলাকাবাসীদের। দীর্ঘদিনের পুরোনো দেওয়াল। মাথার উপর অ্যাসবেসটসের ছাদ। তাও আবার বিভিন্ন জায়গায় ফুটো।

Snake in Mid Day Meal : অ্যাসবেসটস ফুটো, বৃষ্টির জল পড়ে চালের ড্রামে, জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়িতে তালা গ্রামবাসীদের
বেহাল দশা জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 09, 2022 | 9:55 PM

জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান) : মিড ডে মিলে সাপ। বিষয়টি নজরে আসার পর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বাগকালাপাহাড় গ্রামে। ক্ষোভে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দিলেন গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি অভিযুক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বদলির দাবি জানান। এসবের মাঝে প্রশ্ন উঠছে, যেখানে শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য রান্না হয়, সেখানে এই অবহেলা কেন? আজও ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা হয়। কিন্তু ভয়ে ও আতঙ্কে অনেকেই রান্না করা খাবার নিতে যাননি। অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করলেও কাজের কাজ হয়নি। উল্টে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তালা ঝুলিয়ে দেন সেন্টারের গেটে।

বুধবার বাগকালাপাহাড় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়। বেলা ১০টার মধ্যে রান্না শেষ হলে শিশু ও গর্ভবতীরা সেই খিচুড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে যান । ঘরে খিচুড়ি খেতে গিয়ে এক শিশুর অভিভাবকের চোখ কপালে ওঠে। তিনি দেখেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া গরম খিচুড়ির মধ্যে একটি ‘মরা সাপের বাচ্চা’ রয়েছে। এমনটা দেখেই ওই শিশু ও তাঁর পরিবারের লোকজন আঁতকে ওঠেন । তাঁরাই ছুটে গিয়ে গ্রামের অন্য শিশুর পরিবার ও গর্ভবতীদের বিষয়টি জানান। খিচুড়ি না খাওয়ার জন্যে তাঁদের বলেন। ততক্ষণে যে যে শিশুরা খিচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল, তাদের অভিভাবকরা ঘটনার কথা জেনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ভয়ে, আতঙ্কে শিশুরা অসুস্থতা অনুভব করলে দুপুরে তাঁদের জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় । চিকিৎসকরা শিশুদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে বেশ কিছু সময় তাদের পর্যবেক্ষণে রাখেন। তাদের রাতে ছুটি দেওয়া হয়।

শিশু ও গর্ভবতী মিলিয়ে ওই গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিদায়ক খাবার পাওয়ার জন্য ৫৪ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। তাঁরা মূলত খোরদোপলাশি, কাঠালডাঙা ও বাগকালাপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই সেন্টারে খাবারের মান খুব খারাপ। এই নিয়ে তাঁরা অভিযোগ করলেও কিছু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মধুমিতা মুর্মু বলেন, “এখানে নোংরা চালের খিচুড়ি রান্না করা হয়। চালে ইঁদুর ও আরশোলার পায়খানা পড়ে থাকে। কিন্তু সেন্টারের কর্মী ওই চালেই প্রতিদিন খিচুড়ি রান্না করে।”

বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ভাবিয়ে তুলেছে এলাকাবাসীদের। দীর্ঘদিনের পুরোনো দেওয়াল। মাথার উপর অ্যাসবেসটসের ছাদ। তাও আবার বিভিন্ন জায়গায় ফুটো। এই কেন্দ্রের সহায়িকা শিখা মালিক বলেন, “অ্যাসবেসটসের ছাদ ফুটো। বৃষ্টিতে বাচ্চাদের বসাতে পারি না। চালের ড্রাম, ডালের ড্রামে জল পড়ে।” কেন্দ্রে একটি মাত্র কল, তাও আবার সেই কল থেকে গ্রামবাসীরা খাবার জল নেওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত কাজ করে থাকে। এককথায় শিশুদের ক্লাস করানো এবং খাবার রান্না করার মতো পরিস্থিতি যে নেই সেটা তাঁর কথায় স্পষ্ট। যেখানে এতগুলি বাচ্চা পড়াশোনা করে। শিশু ও মায়েদের খাবার রান্না হয়, সেখানকার এই হাল কেন? সহায়িকার কথায়, অঙ্গনওয়াড়ির চাল মেরামত করার জন্য পারাতল ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মারিয়া বেগমের কাছে তিনি নিজে ৬ বার দরখাস্ত দিয়েছেন। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি।

পারাতল ২-এর তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি শম্ভু ঘোষ বলেন, “এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি মেরামত করার জন্য প্রধানকে অনেকবার বলা সত্ত্বেও তিনি কর্ণপাত করেননি। দীর্ঘদিন ধরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন গ্রামবাসীরা। দিদিমণিরাও বেশ কয়েকবার পঞ্চায়েতে দরখাস্ত দিয়েছেন কেন্দ্রটি সংস্কারের জন্য। কিন্তু প্রধান ফান্ড না থাকার অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টিতে কর্ণপাত করেননি। বাচ্চা ও মায়েদের খাবার পরিবেশ এই কেন্দ্রে নেই। প্রধানের এই গাছাড়া মনোভাবের ফলে সমস্যা বাড়ছে । উনি কোনও বিষয়ের গুরুত্ব বোঝেন না। যার ফলে দলকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়েছে জেলায়। ঘটনার কারণ দর্শানোর নির্দেশ এসেছে বিডিও-র তরফে। এই ঘটনায় উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছে বিজেপি। শুধুমাত্র শোকজ করে ছেড়ে দিলেই হবে না। এই ঘটনা থেকে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় কে নেবে? প্রশ্ন বিজেপির। বিজেপির জামালপুর ব্লকের নেতা তথা জেলা বিজেপির সহ সভাপতি রামকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় দাবি তুলেছেন বিভাগীয় তদন্তের। তিনি বলেন, কারও অসাবধানতার কারণে নাকি অন্য কিছু তা বিভাগীয় তদন্ত হলেই প্রকাশ্যে আসবে।

এতকিছুর পরও পারাতল ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মারিয়া বেগমের অবশ্য যুক্তি, ভুলবশত কিছু একটা হয়েছিল। এখন মিটে গিয়েছে। বেশ কয়েকবার কেন্দ্রটি মেরামতের আবেদন এলেও পঞ্চায়েত থেকে কেন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে কোনও উত্তর দিতে চাননি তিনি। পাশাপাশি এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি নিয়ে পঞ্চায়েত কিছু ভাবছে কি না তা নিয়ে কিছু স্পষ্ট করেননি প্রধান।

জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত কর্মীকে শোকজ করা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী জ্যোৎস্না ঘোষ ও অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা শিখা মালিক, এই দু’জনকেই শোকজ করা হয়েছে বলে জানান বিডিও। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে।

আজ সকালেও এই অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে রান্না হয়েছিল। দিদিমণি জ্যোৎস্না ঘোষ সেন্টারের শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার নিয়ে আসার কথা বলেন। সকলেই বলেছিলেন খাবার নিতে আসবেন। কিন্তু ৫৪ জনের মধ্যে মাত্র ১৫ জন খাবার সংগ্রহ করেন। শেষমেশ ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সেন্টারে তালা ঝুলিয়েছেন। এতকিছুর পরও প্রশ্ন উঠছে, যেখানে বাচ্চা ও গর্ভবতীদের জন্য রান্না হয়, সেখানকার পরিবেশ কেন এত অপরিচ্ছন্ন হবে ?