Bardhaman School: ১০ হাজার টাকা তোলা চেয়েছিলেন, না পেয়েই স্কুলের কল বসানো বন্ধের অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে

Jamalpur: জানা গিয়েছে, জামালপুরের চিকনহাটি গ্রামের ব্লকের ভিলেজ রিসোর্স পারসন (ভিআরই )পদে কর্মরত  অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার নাম বিশ্বজিৎ ঘোষ।

Bardhaman School: ১০ হাজার টাকা তোলা চেয়েছিলেন, না পেয়েই স্কুলের কল বসানো বন্ধের অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে
তোলার টাকা না পেয়ে কল বসানো বন্ধ করে দিলেন তৃণমূল নেতা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 26, 2022 | 11:47 AM

বর্ধমান: সদ্যই ঝাড়গ্রামে কর্মী সভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি তৃণমূল কর্মীদের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তোলা আদায় নিয়ে। কিন্তু এত সবের পরও কি বদলেছে কিছু? মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরেও ‘তোলা’ আদায় যে বন্ধ হয়নি তা বাস্তবে প্রমাণ মিলল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। মোটা টাকা তোলা না পেয়ে স্কুলের টিউবওয়েল বসানো বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।

জানা গিয়েছে, জামালপুরের চিকনহাটি গ্রামের ব্লকের ভিলেজ রিসোর্স পারসন (ভিআরই )পদে কর্মরত  অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার নাম বিশ্বজিৎ ঘোষ। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছে একটি ঠিকাদার সংস্থা। ওই সংস্থার অভিযোগ, তাঁদের কাছে মোটা টাকা তোলা চেয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। তা না পেয়ে চিকনহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিউবওয়েল বসানোর কাজ বন্ধ করিয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁর  বিরুদ্ধে মঙ্গলবার জামালপুর থানা ও বিডিওর দফতরে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন নির্মাণকারী সংস্থার কর্ণধার শেখ মারজান আলি। অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।

চিকনহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের রান্না ও পানীয় জলের সংস্থানের জন্যে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি  বিদ্যালয়ে একটি  টিউবওয়েল বসানোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশাসনকে নির্মাণকারী সংস্থার কর্ণধার মারজান আলি জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে টিউবওয়েল বসানোর জন্য পঞ্চায়েত সমিতি ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে। তাঁর সংস্থা কল বসানোর কাজের বরাত পায়। কাজ শুরুর আগে তিনি ও তাঁর লোকজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন। বিদ্যালয়ের জায়গায় গত সোমবার কল বসানোর কাজ শুরু করে শ্রমিক ও মিস্ত্রিরা। মারজান বাবুর অভিযোগ, শ্রমিক ও মিস্ত্রিরা কল বাসানোর কাজ শুরু করতেই চিকনহাটির তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষ তাঁর দলবল নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে কাজে বাধা দেয়। একই সঙ্গে ওই তৃণমূল নেতা হুমকি দিয়ে জানিয়ে দেন, ‘১০ হাজার টাকা তোলা না দিলে তিনি কল বসানোর কাজ করতে দেবেন না। ৭০ হাজার টাকার কল বসাতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা তোলা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই চিকনহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কল বসানোর কাজ স্থগিত করে দিয়ে সমস্ত সরঞ্জাম গুটিয়ে নিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে মারজান আলি।

অপরদিকে, তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষকে ঠিকাদার সংস্থার আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। পাল্টা বিশ্বজিৎ ঘোষ দাবি করেন, আমি এলাকার তৃণমূলের নেতা।পাশাপাশি তিনি চকদিঘি পঞ্চায়েতে ভিলেজ রিসোর্স পারসনের কাজ করেন। এমনকী, এনআরইজিএস-এর কাজও দেখাশুনা করেন। সেই কারণেই তিনি এলাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে কল বসানোর কাজে যুক্ত শ্রমিকদের কাছে ওয়ার্ক অর্ডার ও অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চান। ঠিকাদার সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেন। তবে কোনও টাকা পয়সার দাবি কারোর কাছে করেননি।’ যদিও, বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা এলাকার জনপ্রতিনিধি বা বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির কেউ না হয়েও কোন এক্তিয়ারে বিদ্যালয়ের কল বাসানোর ব্যাপারে কৈফিয়ত চাইতে গেলেন? এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট  কোনও উত্তর অবশ্য তৃণমূল নেতা দিতে পারেননি।

এই বিষয়ে চকদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গৌরসুন্দর মণ্ডল বলেন, ‘চিকনহাটি গ্রামের বিশ্বজিৎ ঘোষ যে পঞ্চায়েতের ভিলেজ রিসোর্স পারসন সেটা আমি জানি। তবে বিশ্বজিৎ কবে তৃণমূলের নেতা হয়ে গেল সেটা আমার জানা নেই। ওর  কীর্তিকলাপের কথা জানার পর আমি নিজেই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে উন্নয়ন কাজে গতি আনতে চাইছেন সেখানে বিদ্যালয়ে সেলেন্ডার কল বসানোর কাজে বাধা দিয়ে বিশ্বজিৎ ঠিক করেনি। এইসব বরদাস্ত করা হবে না।’

জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি ভূতনাথ মালিক বলেন, ‘বিশ্বজিৎ ঘোষ স্ব-ঘোষিত তৃণমূল নেতা। বিদ্যালয়ে সেলেন্ডার কল বসানোর কাজ বন্ধ করিয়ে দিয়ে বিশ্বজিৎ চরম অন্যায় করেছে। ওর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসনকে বলা হবে।’

জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছে, ‘দীর্ঘদিন ধরে চিকনহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সেলেন্ডার কল বসানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন কর্তৃপক্ষ। সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি ওই বিদ্যালয়ে সেলেন্ডার কল বসানোর উদ্যোগ নেয়। তার জন্যে ১৫ তম ফিনান্স কমিশন থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু ঠিকাদার সংস্থা অভিযোগ জানিয়েছে, ব্লকের ভিলেজ রিসোর্স পারসন বিশ্বজিৎ ঘোষ ওই বিদ্যালয়ে কল বসাতে বাধা দিয়েছে এবং ঠিকাদার সংস্থার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছে।’