বাঙালির পাতে নেই ইলিশ, নেপথ্যে চড়া দামের ডিজেল!

খরচ বেড়েছে বরফের। তার ওপর ট্রলারে ডিজেলের বিপুল খরচ সামলে যা দাম হচ্ছে, সেই দাম পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

বাঙালির পাতে নেই ইলিশ, নেপথ্যে চড়া দামের ডিজেল!
প্রতীকি ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 10, 2021 | 2:12 PM

দিঘা: বর্ষা চলছে পুরোদমে। অথচ বাঙালির পাতে ইলিশ নেই। চড়া দামের ধাক্কায় রূপোলি মাছ বর্জন করতে হয়েছে কার্যত। মোহনাতেই কেজি প্রতি দাম উঠে যাচ্ছে ২৫০০ টাকা। রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় আরও চড়া দর ইলিশের। আর এই পরিস্থিতির জন্যও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন মৎস্যজীবীরা। ‌ইয়াসের ধাক্কা সামলে যদিও জলে নামছেন মৎস্যজীবীরা, কিন্তু জ্বালানির দামের ধাক্কা সামলে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

১৪ই জুন পর্যন্ত মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল রাজ্য সরকারের। এরপর জলে নামতে পেরেছেন মৎস্যজীবীরা। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের নির্দেশে গণ পরিবহনে ছাড় দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর মাছ ধরতে গিয়ে আশার আলো দেখেছিলেন মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা। ঘূর্ণিঝড়ে যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে ভেবেছিলেন। ইলিশ, পমফ্লেট বা চিংড়ির যদি পর্যাপ্ত ওঠে তাহলে ক্ষতির কিছুটা অংশ উঠে আসবে বলেই আশা ছিল। কিন্ত মাছ উঠলেও খরচ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ইয়াসের ফলে উপকূলে বহু বরফ কল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে দূর থেকে চড়া দামে বরফ আনতে হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেঞ্চুরির পথে ডিজেলের দাম, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মাছ ধরার ক্ষেত্রে। প্রতি বছর প্রায় তিন থেকে চার হাজার ট্রলার মাছ ধরতে যায় সমুদ্রে, ছোট নৌকা ধরলে পাঁচ হাজার ছাড়াবে। কিন্তু এ বছর মাছ ধরার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সব মিলিয়ে মোট সংখ্যার অর্ধেকের কম ট্রলার নেমেছে জলে। বেশ কিছুদিন ধরে দিঘা মোহনা ফিশ অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও  কর্তারা দাবি জানিয়ে আসছেন যে ডিজেলের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ভর্তুকি সহ বহু দাবি দাওয়া নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা। কিন্তু সরকার উদাসীন  বলে দাবি সংগঠনের। তার ফলে মাছ ধরার বিপুল খরচের জন্য মালিকরা ট্রলার নামাচ্ছেন না। আর যে সব মৎস্যজীবি এই বিপুল খরচ কাটিয়ে মাছ ধরছেন তাঁদের মাছ বাজারে আসছে চড়াদামে। বর্তমান বাজারে দিঘা মোহনা বাজারে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৮০০, ১০০০, ১২০০ ও ১৫০০ থেকে ২৫০০ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে, যার কারণ হিসেবে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করেছেন মৎস্যজীবীরা।

আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খোলার খেসারত! বাবুল সুপ্রিয়, সৌমিত্র খাঁকে শোকজ করল বিজেপি

প্রতি ট্রলারে বরফ লাগে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে ১০০ টি ব্লগ। আগের থেকে ১২ টাকা বেড়ে প্রতি ব্লগে খরচ হচ্ছে ৪০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি ট্রলারে ২০ জন মৎস্যজীবী থাকেন। মাছ ধরতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ দিন। সে ক্ষেত্রে ডিজেলের খরচ প্রতি ট্রলারে ২ লক্ষ টাকা লাগছে। এ ছাড়াও রয়েছে আনুসঙ্গিক খরচ। গভীর সমুদ্রে যেতে খরচ হয় ৩০০ থেকে ৪০০ ব্যারেল তেল। সেই তেল খরচ করে মাচ ধরলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না দাম। তাই মধ্যবিত্তের পাতে পড়ছে না ইলিশ, মাথায় হাত পড়ছে ব্যবসায়ীদের।