
রনি চৌধুরী ও শুভেন্দু হালদারের রিপোর্ট
জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা: একদিকে ধূপগুড়ি, অন্যদিকে কুলপি। বঙ্গে যখন ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জন ঘিরে পারদ তুঙ্গে। সেই আবহে জুড়ে গেল উত্তর ও দক্ষিণ। আতঙ্ক ও তারপর মৃত্যু, ধূপগুড়ি হোক বা কুলপি ভয়ের ছবি দুই জায়গাতেই। আর পরিবারের তোপ সেই এসআইআর-এর দিকে।
ছিল না ভোটার কার্ড, নাম ছিল না ২০০২ সালের সংশোধিত তালিকায়। তার মধ্যে বাংলায় শুরু হয়ে গিয়েছে এসআইআর। এমতাবস্থায় জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে মৃত্যু এক বৃদ্ধের। মৃতের নাম লালু রাম বর্মন। তিনি বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ নম্বর দক্ষিণ ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় লালু রাম বর্মনের নাম ছিল না। তাই সেই নিয়ে সারাদিন আতঙ্কে থাকতেন তিনি।
এদিন নিহতের পুত্রবধূ মতি মালা বর্মন বলেন, ‘আমার শ্বশুরের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল না, কোনও ভোটার কার্ডও ছিল না। সেই কারণেই তিনি বেশ আতঙ্কে ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিএলও যখন ফর্ম দিতে বাড়িতে এলেন, তখনই তিনি ঘাবড়ে যান এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর।’এদিন সংশ্লিষ্ট বুথের বিএলও সুমিত দাস বলেন, ‘ওনাদের বাড়িতে মোট পাঁচ জন সদস্য। চারজনের হাতে ফর্ম তুলে দিয়েছিলাম। তারপর ওঁদের পাশের বাড়িতে যেতেই শুনি বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
একই কাণ্ড দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি বিধানসভার অন্তর্গত কালীচরণপুরে। সেখানে মৃত্যু হয়েছে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের। নিহতের নাম শাহাবুদ্দিন পাইক। ঢোলাহাটের কিশোরপুর হাইমাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন তিনি। শনিবার সকালে ক্লাসের মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। পাঁচ দিন ধরে যমে-মানুষে টানাটানি। তারপর মৃত্যু। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সেলিব্রাল অ্যাটাকের কারণে প্রাণহানী। তবে পরিবার দায় ঠেলেছে সেই ভোটার তালিকার নিবিড় পরিমার্জনের দিকে। তাঁদের দাবি, ২০০২ সালের তালিকায় শাহাবুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীয়ের নাম ছিল না। তাই সেই নিয়েই আতঙ্কিত ছিলেন তিনি। চিন্তায় ভিতর-ভিতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ইতিমধ্যেই মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছে মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ বাপি হালদার ও কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার। এদিন তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘আমরা মানুষকে আশ্বস্ত করছি। কিন্তু বিজেপি এঁদের ভয় দেখাচ্ছে। রোহিঙ্গা বলছে, অনুপ্রবেশকারী বলছে। এসআইআর নিয়ে এরা সত্যিই চিন্তিত। তবে আমরা আশ্বস্ত করছি কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ যাবে না।’ অন্যদিকে মথুরাপুরের বিজেপি নেতার দাবি, ‘এসব তৃণমূলের অভিসন্ধি।’