দুর্গাপুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে এখনই চ্যালেঞ্জ নয়

করোনা সংক্রমণ রুখতে পুজোমন্ডপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা লাইভ স্ট্রিমিং-র পথ বেছে নিয়েছেন দর্শনার্থীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে।

দুর্গাপুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে এখনই চ্যালেঞ্জ নয়
এই বছর দর্শনার্থী ছাড়াই পূজিত হবেন মা দূর্গা।
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 7:59 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: দুর্গাপুজো নিয়ে রাজ্যের তরফ থেকে কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata High Court)-র সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা হবে কিনা, তা এখনও স্থির হয়নি, নবান্ন সূত্রে এমনটাই খবর।

দূর্গাপুজোয় (Durga pujo 2020) প্যান্ডেলে ভিড় থেকে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে, এই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে গতকাল কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata High Court on Duga puja 2020) এ রাজ্যের ছোট-বড় প্রতিটি পুজো মন্ডপেই দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেয়। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Banerjee) রাজ্যের সব পুলিশ সুপার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, সুরক্ষা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্ত এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। বাড়ি থেকেই এই বৈঠকে যুক্ত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

জেলার এক আধিকারিক জানান, “আমরা এখনও হাইকোর্টের অর্ডার হাতে পাইনি। অর্ডারটি পেলে সমস্ত নির্দেশিকা পড়ে তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে রাজ্যের তরফ থেকে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।”

রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বলেন,”আমি এখনও হাইকোর্টের অর্ডার হাতে পাইনি। অর্ডার পাওয়ার পরই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।” চেতলা অগ্রণীর উদ্যোক্তা হিসাবে তিনি বলেন, ক্লাবের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া(Social Media)-র মাধ্যমে পুজোর সম্পূর্ণ লাইভস্ট্রিম (Live Stream) করা হবে।

অন্যদিকে, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা একডালিয়া এভারগ্রিনের উদ্যোক্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন,”আমরা রাজ্যের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি। আপাতত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে কিন্তু সকলকেই কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।”

তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) নেতা এবং কলকাতার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, “উত্তর কলকাতায় বিভিন্ন গলিতে বহু দূর্গাপুজো হয়। কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই সকল প্যান্ডেলে তো কোনও দর্শনার্থীই যেতে পারবে না।”

এক সরকারি আধিকারিক জানান, “প্রতিটি জেলার আধিকারিকদেরই দূর্গাপুজো (Durga Puja 2020) চলাকালীন ও পুজোর পর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য তাদের একটি নির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করতে ও সাধারণ মানুষকে সেই নির্দেশিকা পালনে সহায়তা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে আবার মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়(Alapan Banerjee)-ও সমস্ত জেলা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখ হয় এবং হাসপাতাল থেকে যেন রোগী ফিরিয়ে না দেওয়া হয়। রাস্তায় বেরোনো সাধারণ মানুষ যাতে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মানে এবং মাস্ক পড়ে, সেই বিষয়েও জোর দেন মুখ্যসচিব। এছাড়াও করোনা রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেন অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকে, তাও উল্লেখ করেছেন মুখ্যসচিব।

মুখ্যমন্ত্রী ও বাকি আধিকারিকদের বৈঠকের পরই স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফ থেকে টুইট করে জানানো হয়,”আসন্ন দূর্গাপুজোয় (Durga Puja 2020) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে রাজ্যবাসীকে আবেদন জানানো হচ্ছে যে, সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তারা যেন খাবার ও জামাকাপড়ের দোকানে ভিড় না জমান। সচেতন থাকুন,সুস্থ থাকুন।” রাজ্য পুলিশের তরফ থেকেও বাজারহাটে ভিড় এড়াতে ও যাবতীয় সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে রাজ্যের বিরোধী শিবির হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) বলেন, “যা হয়েছে, ভালোর জন্যই হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ছে,তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রয়োজন।” রাজ্য বিজেপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “রাজ্য সরকার করোনা সংক্রমণের হার নিয়ে চিন্তিত নয়, তাই প্রতিবারের মতোই জাঁকজমক করে পুজো করতে দিয়েছে। কোর্ট সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস (Congress) সভাপতি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে দূর্গাপুজো কেবল পুজো নয়, একটি উৎসব। কিন্তু রাজ্যে যখন সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, গোষ্ঠী সংক্রমণ হচ্ছে, তখন আমাদের ভাবতে হবে যে আমরা উৎসব পালন করতে চাই নাকি নিজেদের জীবন বাঁচাতে চাই। ” কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “প্রশাসন কীভাবে এই নির্দেশিকা পালন করবে, এখন তা দেখতে হবে। এইবছর দূর্গাপুজো করা নিয়ে রাজনীতি করার কোনও প্রয়োজন ছিল না।”

সিপিএম (CPIM) বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এই সিদ্ধান্তে মানুষ শান্তি পেল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভার্চুয়ালি পুজোগুলির উদ্বোধন করছেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করছেন।”