Panchayat Election 2023: তিনটি আলাদা আলাদা রঙের ব্যালট কেন পঞ্চায়েতে? কীভাবে ভাঁজ করবেন?
Panchayat Vote: একজন ভোটার একসঙ্গে তিনটি আলাদা আলাদা ভোট দেন পঞ্চায়েতে। একটি ভোট গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য, একটি ভোট সমিতির জন্য এবং একটি ভোট জেলা পরিষদের জন্য।
কলকাতা: শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। বাকি আর ঠিক দুই সপ্তাহ। অনেকেই আছেন, যাঁরা প্রথমবার পঞ্চায়েতে ভোট দিচ্ছেন। পঞ্চায়েত ভোটের ব্যবস্থা লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের থেকে অনেকটা আলাদা। এখানে ইভিএম মেশিন নেই। রয়েছে ‘মুড়ির টিনে’র মতো ব্যালট বাক্স। আর রয়েছে ব্যালট পেপার। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত। অর্থাৎ, তিনটি পর্যায় রয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সমতি। জেলা পরিষদ। সেক্ষেত্রে একজন ভোটার একসঙ্গে তিনটি আলাদা আলাদা ভোট দেন পঞ্চায়েতে। একটি ভোট গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য, একটি ভোট সমিতির জন্য এবং একটি ভোট জেলা পরিষদের জন্য।
একজন ভোটার যখন ভোটকেন্দ্রে ঢোকেন, তখন বুথের ভিতরে ভোটকর্মীরা তাঁর হাতে তিনটি আলাদা আলাদা রঙের কাগজ ধরিয়ে দেন। একটি ক্রিম রঙের, একটি গোলাপি রঙের এবং একটি হলুদ রঙের। এই তিনটি কাগজ হল, তিনটি ব্যালট পেপার। সেখানে প্রার্থীদের নাম উল্লেখ করা থাকে। ব্যালট পেপারগুলি নিয়ে ভোটাররা চারিদিক থেকে ঘেরা ভোটদানের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনটি আলাদা আলাদা কাগজে পছন্দের প্রার্থীর নামের প্রতীকে ছাপ দেন। তারপর কাগজগুলিকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ভাঁজ করে তিনটি আলাদা আলাদা মুড়ির টিনের মতো ব্যালট বাক্সে ফেলে দেন।
কেন তিনটি আলাদা আলাদা রং হয় ব্যালট পেপারের?
তিনটি স্তরে আলাদা আলাদা ভোট হয়। তিনটি স্তরে আলাদা আলাদা প্রার্থী থাকেন। অর্থাৎ, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ… তিনটি স্তরেই প্রতিটি দলের আলাদা আলাদা প্রার্থী। আবার কোনও দল কোনও একটি জায়গায় তিনটি স্তরে প্রার্থী নাও দিতে পারে। আবার নির্দলের ব্যাপারও থাকে। সেক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। সমিতিতেও কিছু কিছু থাকে। জেলা পরিষদে আবার নির্দলের সংখ্যা অনেকটা কম।
সেক্ষেত্রে, তিনটি স্তরের জন্য একই রঙের ব্যালট পেপার হলে ভোটারদের বিভ্রান্তি হতে পারে। আবার ভোট গণনার সময়েও সমস্যা হতে পারে। সেই কারণে আলাদা আলাদা ইউনিট থাকে প্রতিটি স্তরের জন্য। আলাদা রঙের ব্যালট পেপার এবং আলাদা আলাদা ব্যালট বাক্স। যাতে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
কোন স্তরের জন্য কী রঙের ব্য়ালট পেপার?
গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের জন্য থাকে ক্রিম রঙের ব্যালট পেপার। সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কোন কোন প্রার্থী দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের নাম ও প্রতীক সহ-তালিকা দেওয়া থাকে। একইভাবে গোলাপি রঙের ব্যালট পেপার থাকে পঞ্চায়েত সমিতির জন্য এবং হলুদ রঙের ব্যালট পেপার থাকে জেলা পরিষদের জন্য। সেগুলিতেও সংশ্লিষ্ট স্তরে যে যে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের নাম ও প্রতীকের তালিকা থাকে।
ব্যালট পেপার ভাঁজ করার জন্যও নির্দিষ্ট নিয়ম আছে
ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার পর কীভাবে তা ভাঁজ করবেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে ভাঁজ করার। ভোটারদের ব্যালট পেপার দেওয়ার সময় ওই বুথের পোলিং অফিসার বুঝিয়ে দেন কীভাবে তা ভাঁজ করতে হবে। সাধারণত, কোনও ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার পর সেটিকে একবার আড়াআড়ি সমান ভাঁজ এবং একবার লম্বালম্বি সমান ভাঁজ করতে হয়।
ব্যালট পেপার ভাঁজে ভুল হলে?
ব্যালট পেপার ভাঁজ করার সময় যত্ন সহকারে তা করা দরকার। কারণ, ভাঁজে ভুল হলে আপনার ভোটটি বাতিল হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, তা গণ্য হবে না। তাই তিনটি ব্য়ালট পেপারের প্রতিটি সঠিকভাবে ভাঁজ করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সময়েও সচেতন হতে হবে
পঞ্চায়েত ভোটে কোনও ইভিএম-এর ব্যবস্থা থাকে না। ভোটদান থেকে শুরু করে ভোটগণনা পুরো প্রক্রিয়াই হয় হাতে হাতে। সেক্ষেত্রে পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার জন্য ভোটারদের সংশ্লিষ্ট ব্যালট পেপারে স্টাম্পের ছাপ মারতে হয়। এখানে ভুল হলেও আপনার ভোট বাতিল হয়ে যেতে পারে। তবে ব্যালটে ছাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা এদিক-ওদিক হলে ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে। অর্থাৎ, যদি পর পর থাকা দুই প্রার্থীর লাইনেই আংশিকভাবে ছাপ পড়ে যায়?
ধরুন, ‘এক্স’ প্রার্থী ও ‘ওয়াই’ প্রার্থীর নাম পর পর রয়েছে তালিকায়। আপনি ছাপ দেওয়ার সময় স্টাম্পের কিছুটা অংশ এক্স প্রার্থীর লাইনে এবং কিছুটা অংশ ওয়াই প্রার্থীর লাইনে। সেক্ষেত্রে যিনি ভোট দিচ্ছেন, তাঁর ‘ইনটেনশন’ দেখা হয়। যদি কোনও একটি প্রতীকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ছাপ পড়ে, বাকি ১০ শতাংশ অন্য প্রতীকে পড়ে যায়, তাহলে ভোট বাতিল হয় না। তখন যে প্রতীকে ৯০ শতাংশ ছাপ পড়ে, সেটিকেই ভোটারের মতামত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুটি প্রতীকের মাঝামাঝি ছাপ পড়ে গেলে ভোটটি বাতিল হয়ে যায়।
সাধারণত কত ভোট বাতিল হয় পঞ্চায়েতে?
যা ভোট পড়ে, তার প্রায় ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত এখন গৃহীত হয় বলে জানাচ্ছেন ওয়াকিবহাল মহল। যেসব ক্ষেত্রে কোনও ভুল-ত্রুটি বা অভিযোগ আসে, সেগুলি প্রিসাইডিং অফিসার খতিয়ে দেখেন তারপর ভোট বাতিল হবে কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।