Nepal Economic Crisis: টেনেটুনে চলবে ৬ মাস, তার মধ্যেই ভোট, খেপছে জনতা! অর্থনৈতিক সঙ্কটে নেপালও কি হবে শ্রীলঙ্কা?
Nepal Economic Crisis: অর্থনীতির অবস্থা টালমাটাল, তার মধ্যেই নভেম্বরে হবে ভোট। প্রথম সারির রাজনৈতিক দলগুলির উপর খাপ্পা সাধারণ মানুষ। তবু নেপালের দাবি, তারা শ্রীলঙ্কা হবে না। কেন জানেন?
কাঠমান্ডু: ইতিমধ্যেই জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে ভারতের প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশে। তারা দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কা হয়ে উঠবে কিনা, এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, একই পথে এগোচ্ছে ভারতের আরও এক প্রতিবেশী দেশ, নেপাল। গত জুন মাসে হিমালয়ের কোলের এই দেশের খুচরো বাজারে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ পৌঁছেছিল ৮.৫৬ শতাংশে। গত ছয় বছরের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ। এক বছর আগেও নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে সেই ভাঁড়ার প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এতে টেনেটুনে আগামী ছয় মাসের জন্য আমদানির খরচ উঠতে পারে। তবে এরপরও নেপালের দশা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না বলেই দাবি করছে সেই দেশের সরকার। এমনকি, এই টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেই আগামী নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে।
বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার এবং মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি নেপাল বর্তমানে ব্যাপক ঋণের ঘাটতি অনুভব করছে। প্রায় সব ব্যাঙ্কের ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে গ্রাহকরা ঋণ পাচ্ছেন না। তারমধ্যেও আমানতের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বাজেট ব্যবহার করতে পারছে না। এই ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থাতেও কেন শ্রীলঙ্কা না হওয়ার বিষয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসী নেপাল সরকার? তাদের দাবি, শ্রীলঙ্কার বিপরীতে, বর্তমানে নেপালে পর্যটন শিল্প ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স অর্থাৎ বিদেশে বসবাসরত নেপালিদের দেশে পাঠানো টাকার পরিমাণও ক্রমে বাড়ছে। সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মতো বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে পড়েনি কাঠমান্ডু। এই সকল বিষয়ই ভারত ও চিনের মতো দুই বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যে থাকা ছোট্ট দেশটিকে আর্থিক সংকট থেকে বাঁচাতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে।
নেপাল সরকারের দাবি, সরকার এবং নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার স্থিতিশীল করার জন্য সক্রিয় আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার উদ্বেগজনক হলেও, তা সামলে ওঠার মতো ক্ষমতা রয়েছে তাদের, এমনটাই দাবি কাঠমান্ডুর। শের বাহাদুর দেউবার সরকারের দাবি, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে নেপালের কোনও উদ্বেগ নেই, বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার থেকেই তা পূরণ করা যেতে পারে। তাছাড়া, নেপাল বিদেশী ঋণ নিয়েছে নামমাত্র সুদের হারে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিশোধের চুক্তিতে। তাই তা পূরণ করতে গিয়ে অবিলম্বে বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এর পাশাপাশি কাঠমান্ডু বলছে, গত দুই মাসে রেমিট্যান্স ফ্লো, অর্থাৎ, বিদেশ থেকে নেপালিদের দেশে টাকা পাঠানোর প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। চল্লিশ লক্ষেরও বেশি নেপালি বিদেশে কাজ করেন। তাই, তাঁরা দেশে যে অর্থ পাঠান, তাই নেপালের বিদেশী মুদ্রার প্রাথমিক উৎস। বর্তমানে, বিদেশে কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। বেশিরভাগ দেশেই আর পরিবহণের বিষয়ে বিধিনিষেধ নেই। তাই ফের নেপালি পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী কয়েক মাসেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে কোভিড-১৯’এর দাপট কমার ফলে পর্যটন শিল্পেও প্রভূত উন্নতি হয়েছে। পর্যটন শিল্প নেপালের বিদেশী অর্থের আরেকটি মূল উৎস। কোভিডের পর নেপালে ফিরতে শুরু করেছেন বিদেশী পর্যটকরা। তবে, এই দুইভাবে তৈরি বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার যাতে বিলাসবহুল সামগ্রী আমদানিতে নষ্ট না হলে নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি মিটবে না। তাই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমদানি ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে, নেপালের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বিলাসবহুল পণ্যগুলির বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু কিছু বিলাসবহুল পণ্য রয়েছে যা বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার বাড়াতে পারে।
যেমন বিদেশি মদ। নেপালের জন্য বিদেশি মদ বিলাসবহুল পণ্য হলেও, বিদেশী পর্যটকরা নেপালে থাকার সময়ও তাদের পরিচিত অ্যালকোহলের স্বাদ পছন্দ করেন। তাই আদতে বিদেশি অ্যালকোহল আমদানি করলে বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার বাড়তে পারে। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারকে উত্সাহিত করা উচিত সরকারের। তাতে আগামী কয়েক বছরে পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর নির্ভরতা কমবে। এছাড়া, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিতে উৎপাদিত অতিরিক্ত শক্তি প্রতিবেশী দেশগুলিতে রফতানি করেও বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা যেতে পারে। এছাড়া, কৃষি খাত থেকে উৎপন্ন জৈব পণ্যগুলি এবং নেপালি হস্তশিল্প এবং হস্তনির্মিত অলঙ্কার বিশ্বব্যাপী রফতানি করেও বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার বাড়ানো যেতে পারে।
খাতায় কলমে এই ব্যবস্থাগুলি অবশ্যই কার্যকর মনে হতে পারে। বাস্তবে তা কতখানি কাজে দেবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নেপালের বাসিন্দারা যে সরকার তথা প্রথম সারির প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উপরই বিতশ্রদ্ধ, তা সাম্প্রতিক বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনেই বোঝা গিয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় জয়ী হয়েছেন নির্দল তরুণ মুখ। তাই শেষ পর্যন্ত নেপালের দশা কি শ্রীলঙ্কার মতোই হবে, না কান ঘেঁসে বেঁচে যাবে হিমালয়ের কোলের এই ছোট্ট দেশ, সেটাই এখন দেখার।