পাকিস্তান-প্রেম উথলে উঠছে বাংলাদেশের, ৭১-এর সেই ‘ব্লাডি টেলিগ্রামে’র কথা মনে আছে তো?
Bangladesh: এলাকার পর এলাকা যেন শ্মশান। ঘরে ঢুকে ধর্ষণ-খুন করতেও দ্বিধাবোধ করেনি! বাংলাদেশ সেই সব ইতিহাস ভুলে আজ পাকিস্তানকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে।
১৯৭১ সালের ১০ মার্চ। আমেরিকায় ফরেন অফিসের হেড-কোয়াটার্সে একটি জরুরি বার্তা এল। টপ-সিক্রেট ডিপ্লোম্যাটিক কেবল। কেবল-এর বক্তব্য চমকে দেওয়ার মতো। কেবল-এ কী বলা হয়েছিল? ‘পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে, যা দেখছি, সেটার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। এখানে জেনোসাইড চলছে। এমন এক জেনোসাইড যার সঙ্গে একমাত্র হলোকাস্টেরই তুলনা চলতে পারে। এখানে যা হচ্ছে, তেমনটা আমি কোথাও ঘটতে দেখিনি বা ঘটেছে বলে শুনিওনি। এই ব্লাডবাথ থামাতে আমাদের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
টপ-সিক্রেট কেবলটা পাঠানো হয়েছিল প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন, নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের জন্য। ডিপ্লোম্যাটিক নর্মস মেনেই সেই বার্তা দু’জনের হাতে পৌঁছয় এবং সেটা হাতে পাওয়ার পরই চুপ করে যান নিক্সন ও কিসিঞ্জার। কেবলটা পাঠিয়েছিলেন, ঢাকার তত্কালীন মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার বল্ড।
কেবলে আরও কয়েকটি বিষয় জানানো হয়েছিল-
প্রথমত, মার্কিন কনসাল জেনারেল লিখেছিলেন, “প্রতিদিন ঢাকার একটা একটা করে অংশে ঢুকছে পাকিস্তানের সেনা। আর প্রতিদিন এখানকার একটা একটা এলাকা শ্মশানের আকার নিচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় শুধু মহিলাদের আর্তনাদ, মানুষজনের চিত্কার আর সারি সারি বন্ধ দরজা। মানুষজন দরজা খোলার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছে।”
দ্বিতীয়ত, তিনি বলেছিলেন, “হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদীদের এলাকায় ঢুকে যা, যা করত, ঢাকাতেও সেই সেটাই হচ্ছে। ঢাকার কোনও বাড়িতে এই মুহূর্তে কোনও পুরুষ থাকছে বলে আমার জানা নেই। সেনারা রামের বোতল আর খাবার নিয়ে মহল্লায় ঢুকছে। কিন্তু ব্যারাকে ফিরছে না।”
তৃতীয়ত, মার্কিন কনসাল জেনারেল লিখেছিলেন, “ওরা মহিলাদের উপর যেভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে শুনেছি, খবর পেয়েছি, এমনকী প্রত্যক্ষ করেছি, তাকে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এই টেলিগ্রাম ইতিহাসে ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ বলে কুখ্যাত।
আসলে মার্চের ৫ থেকে ৭ তারিখ ঢাকায় চলে পাক বাহিনীর গণহত্যা। ঘরে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পর মহিলাদের গোপনাঙ্গে বর্শা ঢুকিয়ে খুন করা হয়। তারপর সেই রক্তাক্ত দেহ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়, যাতে লোকে সেই দৃশ্য দেখে ভয় পায়, শিউরে ওঠে। পাকিস্তানি আর্মির সেই বর্বরতার প্রতিশোধ নিয়েছিল ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধারা।
বাংলাদেশ সেই সব ইতিহাস ভুলে আজ যখন পাকিস্তানকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে, তখন সেই ব্লাডি টেলিগ্রামের কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে।