বেজিং: চলতি মাসের শুরুতেই ৬.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমের সিচুয়ান প্রদেশে। অন্তত ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল, কয়েক হাজার মানুষ ভিটে হারিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সেই বিপর্যয়ের ১৭ দিন পর খোঁজ মিলল এক চিনা ব্যক্তির। ভূমিকম্পের পর সিচুয়ানের ‘ওয়াংডং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে’র কর্মী গান ইউ, তাঁর আহত সহকর্মীদের উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিলেন। কিন্তু, তারপর থেকেই তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। চিনের রাষ্ট্রীয় রেডিয়োজানিয়েছে, বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক গ্রামবাসী গুরুতর আহত অবস্থায় গান ইউ-কে উদ্ধার করেন। জানা গিয়েছে গত ৫ সেপ্টেম্বর যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, সেই সময় গান ইউ তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে কাজে ছিলেন। ভূমিকম্পের পরই তাঁরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাঁধ থেকে জল ছেড়েছিলেন। এর ফলে ওই অঞ্চলে বন্যা হয়নি। শুধু তাই নয় গান ইউ এবং তাঁর সহকর্মী লুও ইয়ং আহত সহকর্মীদের প্রাথমিক শুশ্রুষাও দেন।
ওয়াংডং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। শহরাঞ্চল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। বন্যা প্রতিরোধ এবং আহত সহকর্মীদের শুশ্রুষার পর তাঁরা দুই জন ওই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, গান চশমা ছাড়া ভাল দেখতে পান না। এদিকে ভূমিকম্পের সময় তাঁর চশমাটি হারিয়ে গিয়েছিল। ফলে পাহাড়ি পথে হাঁটতে গিয়ে প্রবল সমস্যার মুখে পড়েছিল তারা। এক সময়ে অনেক দূরে তাঁরা উদ্ধারকারীদের দেখতে পেয়েছিলেন। লুও জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের জামা খুলে উড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, লাভ হয়নি। শেষে তাঁরা ঠিক করেন, গান ওখানেই অপেক্ষা করবেন, লুও এগিয়ে গিয়ে সাহায্য নিয়ে ফিরে আসবেন। গানকে, বাঁশ দিয়ে একটি অস্থায়ী খাট বানিয়ে দেন লুও, আর খাওয়ার জন্য কিছু কাঁচা ফল দিয়ে যান।
His name is Gan Yu, a hydropower station’s staff.
A few days ago, when an earthquake occurred in Sichuan Province, he gave up escape to open the water gate, avoided a flood.
Then he got lost in the jungle.
After 17 days, he was found!
Thanks to this ordinary hero!? pic.twitter.com/NGfxMm1n4D— ShanghaiPanda (@thinking_panda) September 22, 2022
৮ সেপ্টেম্বর উদ্ধারকারীদের একটি হেলিকপ্টার দেখতে পেয়ে, আগুন জ্বালিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন লুও। ১১ সেপ্টেম্বর গানের সেই অস্থায়ী আবাসের খোঁজ মিলেছিল। কিন্তু সেখানে গানের কিছু পোশাক এবং পায়ের ছাপ ছাড়া কিছু ছিল না। আশঙ্কা করা হয়েছিল, হাইপোথার্মিয়ায় গানের মৃত্যু হয়েছে।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যে পাহাড়ে অবস্থিত তারই পাদদেশে একটি গ্রাম রয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ত্রাণ শিবির থেকে গ্রামের ফিরে এসেছিলেন গ্রামবাসীরা। গান-এর অনুসন্ধান চলছে শুনে, বুধবার, নি তাইগাও নামে এক গ্রামবাসীও অনুসন্ধান অভিযানে যোগ দেন। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই এক গাছের নিচে আহত অবস্থায় গানকে খুঁজে পান তিনি। তারপর অন্যান্য উদ্ধারকারীরা সেখানে আসেন, গানকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এক হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের বেশ কয়েকটি হাড় ভেঙে গিয়েছে। তবে, শরীরের থেকেও তাঁর মানসিক আঘাত অনেক বেশি বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।