Turkey, Syria earthquake: মৃত পাঁচ হাজার! কেন এত ভয়াবহ হল তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প? কী ঘটল মাটির নীচে?

Turkey-Syria earthquake: মঙ্গলবার তুরস্ক সিরিয়ার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০০০ ছাড়িয়েছে। কেন এত ভয়াবহ চেহারা নিল এই ভূমিকম্প?

Turkey, Syria earthquake: মৃত পাঁচ হাজার! কেন এত ভয়াবহ হল তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প? কী ঘটল মাটির নীচে?
ধ্বংসস্তূপে চলছে প্রাণের খোঁজ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 07, 2023 | 6:15 PM

আঙ্কারা: সোমবার ভোর থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে মোট ৫টি ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় বিভিন্ন স্থানে। সবথেকে বড় মাপের ভূমিকম্পটি হয়েছে সোমবার ভোর ৪টের কিছু পরে। ৭.৮ মাত্রার সেই ভূমিকম্পটিকে ভবিষ্যতে এই দশকের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পগুলির অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে মনে করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার শুধু তুরস্কেই নিহতের সংখ্যা ৩,৪১৯-এ পৌঁছেছে। সঙ্গে সিরিয়ার পরিসংখ্যান ধরলে, এই ধারাবাহিক ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০০০ ছাড়িয়েছে। অন্তত ৫০০০-এর বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় গোটা বিশ্ব জুড়েই ঘুরছে একটা প্রশ্ন, কেন এত ভয়াবহ আকার ধারণ করল তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প? কেন কেড়ে নিল এত প্রাণ? ৭ মাত্রার উপর যে কোনও ভূমিকম্পকেই বিপজ্জনক বলে ধরা হয়। কিন্তু, তারপরও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেশি। এর পিছনে কারণটা কী? কী ঘটেছে ভূপৃষ্ঠের নীচে? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

এখনও পর্যন্ত তুরস্কের বিভিন্ন দিকে মোট ৫টি ভূমিকম্প হলেও, মূল ক্ষতি হয়েছে সোমবার ভোরের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটিতেই। এর কেন্দ্র ছিল তুরস্কের নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে। তুরস্ক অবস্থিত আনাতোলীয় প্লেট এবং আরবি প্লেটের মধ্যবর্তী চ্যুতির উপর। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পূর্ব আনাতোলীয় চ্যুতির প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে কম্পনটির উৎপত্তি হয়েছিল। এই কম্পন ক্রমে উত্তর-পূর্ব দিকে ধাবিত হয় এবং মধ্য তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়। এর জেরে আনাতোলীয় প্লেট এবং আরবি প্লেটের মধ্যে ১০০ কিলোমিটারের বেশি লম্বা ফাটল তৈরি হয়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আসলে দীর্ঘদিন ধরেই চাপ তৈরি হচ্ছিল দুই প্লেটের মধ্যে।

বস্তুত, গোটা বিংশ শতাব্দীতেই পূর্ব আনাতোলীয় চ্যুতি বরাবর ভূমিকম্প প্রায় হয়নি বললেই চলে। ১৯৭০ সাল থেকে সোমবারের আগে পর্যন্ত এই অঞ্চলে মাত্র তিনটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যেগুলির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬-এর উপরে। অথচ, এই অঞ্চলে যে বড় মাপের ভূমিকম্প হয়, তার প্রমাণ মিলেছিল ১৮২২ সালেই। একটি ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে আনুমানিক ২০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত শক্তিই সোমবার ভূমিকম্পের আকারে নির্গত হয়েছে। কতটা শক্তিশালী ছিল ভূমিকম্পটি? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যে মারাত্মক ভূমিকম্পগুলির সাক্ষী হয়েছে পৃথিবী, তার মধ্যে মাত্র দুটির মাত্রা ছিল সোমবারের ভূমিকম্পের সমান।

আসলে পূর্ব আনাতোলীয় চ্যুত হল একটি ‘স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্ট’। এই ক্ষেত্রে কঠিন শিলা দিয়ে গঠিত প্লেটগুলি একটি উল্লম্ব ফল্ট লাইন বরাবর ক্রমাগত একে অপরকে ধাক্কা মারতে থাকে। আর তা থেকেই তৈরি হয় প্রচণ্ড চাপ। যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি প্লেট পিছলে গিয়ে আরেকটি প্লেটের নীচে ঢুকে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধাক্কাধাক্কি চলতে থাকে। আর এই প্লেট পিছলে যাওয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণে চাপ মুক্ত হয়। যা থেকে ভূমিকম্প ঘটে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আর দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে ভূমিকম্প না হওয়ায় পূর্ব আনাতোলীয় চ্যুতি বরাবর প্রচুর পরিমাণে চাপ জমে ছিল, যা ভূমিকম্পের মাধ্যমে নির্গত হয়েছে। পাশাপাশি কম্পনের সূচনা হয়েছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে অপেক্ষাকৃত কম গভীর স্তরে। যে কারণে ভূ-পৃষ্ঠের কম্পন অনেক বেশি তীব্র হয়েছে। একই মাত্রার ভূমিকম্প যদি আরও গভীরে হত, তাহলে এতটা ক্ষয়ক্ষতি হত না।

একই সঙ্গে তুরস্ক ও সিরিয়া ঘন জনবসতিপূর্ণ বলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে। ২০১৫ সালে ঠিক একই কারণে নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৯,০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ক্ষেত্রেও মৃতের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত সেই রকমই হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনটি ১০,০০০-ও ছাপিয়ে যেতে পারে। মরার উপর খাড়ার ঘা-এর মতো, সমস্যা বাড়িয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার হিম-শীতল আবহাওয়া। যার ফলে ধ্বংসস্তূপের নীচে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা আরও কমে গিয়েছে।