Nuclear Weapons: পরমাণু অস্ত্র বাড়াচ্ছে সব শক্তিধর, আগামী দশক হবে ভয়ঙ্কর?

Nuclear Weapons: বর্তমান বিশ্বে সামরিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলির মধ্যে। এই দেশগুলির বেশিরভাগই পরমাণু শক্তিধর। তাই, আগামী দশক অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হতে পারে।

Nuclear Weapons: পরমাণু অস্ত্র বাড়াচ্ছে সব শক্তিধর, আগামী দশক হবে ভয়ঙ্কর?
ভারতের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনে সক্ষম পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 14, 2022 | 7:25 PM

প্রদীপ চক্রবর্ত্তী

স্টকহোম: ‘দ্য সুপ্রিম ভ্যালু অব হিউম্যান লাইফ অ্যান্ড হিউম্যান ব্লাড হ্যাজ বিন ফরগটেন।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু বিস্ফোরণের পর জাপানের দ্বীপে প্রথমবার পৌছেছিল রেডক্রশের দল। তাঁদের দেখা ধ্বংসস্তূপের বর্ণনা রয়েছে হিরোসিমা প্রবন্ধে। সেই দলের প্রধান ছিলেন মার্সেল জুনোদ। আটই সেপ্টেম্বর টোকিয়ো শহরে পৌঁছে মিত্রশক্তির সুপ্রিম কমান্ডার, জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের সঙ্গে দেখা করেন মার্সেল জুনোদ। পরমাণু বোমার বিধ্বংসী পরিণতি চোখের সামনে থেকে দেখেছিলেন মার্কিন সেনাপ্রধান। তাঁর মনে হয়েছিল মানুষ মনুষ্যত্ব ভুলে গেছে। সেখানেই উপরের এই ঐতিহাসিক উক্তিটি করেছিলেন তিনি। পরের তিন বছরে জাপানকে নতুন করে গড়ে তুলতে কাজ করেছিলেন মার্কিন সেনাপ্রধান। হয়তো নিজের দেশের পাপস্খালন করেছিলেন।

উনিশশো পঁয়তাল্লিশ সালের ছয়ই আগস্ট প্রথম পরমাণু হামলা হয়। তারপর প্রায় সাতাত্তর বছর কাটিয়ে ফেলেছি আমরা। আর একটাও পরমাণু বোমা ফাটেনি। তার মানে এই নয় যে মানুষ দেবতা হয়ে গিয়েছে। উনিশশো পঁয়তাল্লিশে পৃথিবীতে পরমাণু বোমার সংখ্যা ছিল দুটি – ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাটম্যান’। বোমা দুটিকে হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে ফেলেছিল আমেরিকা। বর্তমানে পরমাণু বোমার সংখ্যা দশ হাজার। তখন শুধু আমেরিকার হাতেই এই অস্ত্র ছিল। এখন পৃথিবীর সাতটি দেশ ঘোষিতভাবে পরমাণু শক্তিধর। ইজরায়েল ও উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা ঘোষণা করেনি। আর ইরানকে ঘিরে গোড়া থেকেই সন্দেহের মেঘ রয়েছে।

দিনকাল ভাল নয়। তালিবানের আফগানিস্তান দখল এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ – পরপর দুটি ঘটনা গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি ওলটপালট করে দিয়েছে। আমেরিকা যে আর মহাশক্তিধর নয়, তা প্রমাণ হয়েছে। আবার রাশিয়াকে সাড়ে তিন মাস ঠেকিয়ে রেখে ইউক্রেন প্রমাণ করে দিয়েছে, পুতিনকে অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পাশাপাশি, লাদাখে লালফৌজকে পাল্টা মার দিয়ে তাদের দর্পচূর্ণ করেছে ভারত। অর্থাত্‍, এখন আর কেউই ‘বড়দা’ নয়। ফলে, একসঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশের সামনে সামরিক দিক থেকে প্রভাবশালী হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে । ফাঁকা মাঠ দখল করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারের খোঁজ খবর রাখে স্টকহোমের আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা কেন্দ্র। তাদের রিপোর্ট বলছে, পরমাণু শক্তিধর সব দেশই তলে তলে পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। তাই আগামী দশক বড়ই বিপজ্জনক। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে –

– পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে

– সব দেশই নতুব করে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াচ্ছে

– সামরিক কৌশলের অন্যতম অংশ হয়ে উঠছে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার

– আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে আরও শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি হচ্ছে

– এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতা

চিন ও উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে বিশেষ চিন্তিত পশ্চিমী বিশ্ব। উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যেই তাদের সপ্তম পরমাণু পরীক্ষা করে ফেলেছে অথবা করতে চলেছে। বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট বলছে, ‘চিনের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি এখন মধ্যগগনে রয়েছে’।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর ঠিক তৃতীয় দিনে, ভ্লাদিমির পুতিনও রুশ সেনাকে পরমাণু সক্ষমতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আমেরিকাকে বার্তা দেওয়া ছিল না সত্য়ি সত্যি সামরিক প্রস্তুতি – এই বিষয়ে এখনও ধন্দে রয়েছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। কোন দেশের কাছে কত পরমাণু অস্ত্র রয়েছে? কেউই তাদের পরমাণু অস্ত্রের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ্যে আনে না। তবে, বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিচার করে গড়পড়তা একটা হিসেব খাড়া করেছে পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সেই হিসেব অনুযায়ী –

– রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা সবথেকে বেশি, ৪৪৭৭টি

– আমেরিকার হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে ৩৭০৮ টি

– চিনের কাছে রয়েছে ৩৫০ পরমাণু অস্ত্র

– ফ্রান্সের ভাণ্ডারে ২৯০ পরমাণু অস্ত্র

– ব্রিটেনের অস্ত্রাগারে ১৮০ টি পরমাণু অস্ত্র

– পাকিস্তানের ১৬৫টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে

– ভারতের কাছে রয়েছে ১৫৬টি পরমাণু অস্ত্র

– ইজরায়েলের কাছে রয়েছে ৯০ টি পরমাণু অস্ত্র

– উত্তর কোরিয়ার হাতে রয়েছে প্রায় ৫৫টি পরমাণু অস্ত্র

ইজরায়েল ও উত্তর কোরিয়া এখনও নিজেদের পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে ঘোষণা করেনি। আবার ঠাণ্ডাযুদ্ধের পর আমেরিকা ও রাশিয়া নিজেদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার কমিয়েছে। তবে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যার উপর কোনও দেশের মারণ ক্ষমতা নির্ভর করে না। মূল বিষয় নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডগুলির ক্ষমতা। মিসাইল বা যুদ্ধ বিমানের মাধ্যমে কিংবা ডুবোজাহাজের টর্পেডোতে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ব্যবহার করা যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ভারতের থেকে বেশি। কিন্তু, তারপরেও পরমাণু শক্তিতে ভারতের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। কারণ ইসলামাবাদের কাছে কোনও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নেই। ফলে, বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পরমাণু বোমা ফাটাতে পারবে না পাকিস্তান। আবার এই হিসেব অনুযায়ী উত্তর কোরিয়া তুলনায় ছোট দেশ হলেও, অনেক বেশি শক্তিশালী। কারণ সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার কাছে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যার পাল্লা এতটাই বেশি, যে সহজেই আমেরিকাতেও পৌঁছে যাবে পিয়ং ইয়ং-এর ক্ষেপণাস্ত্র। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে কোনও যুদ্ধেই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। পরমাণু শক্তিধর প্রতিটি দেশেই দাবি করে, যুদ্ধ ঠেকাতে ও আত্মরক্ষার স্বার্থেই তারা পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার তৈরি রাখছে। কিন্তু, পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়তে থাকলে সেটাই যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেয় বলেই জানিয়েছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

তবে, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, কিংবা ইরান নয়, পশ্চিমী বিশ্বের ভয় রয়েছে দুটি দেশকে নিয়ে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গত জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপু্ঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করে তোলার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানোর শপথ নিয়েছিল। অথচ, ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরই তাঁর সেনাবাহিনীকে পরমাণু সক্ষমতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন।

অন্যদিকে, গত শনিবারই সাংগ্রি-লা সম্মেলনে পরমাণু অস্ত্র আধুনিকীকরণে চিনের ‘লক্ষ্যনীয় উন্নতির’ কথা জানিয়েছেন চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। মার্কিন উপগ্রহের তোলা ছবিতে নাকি ধরা পড়েছে চিনের পশ্চিমদিকে তাকলা মাকান মরুভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্রের অস্ত্রাগার তৈরি করেছে চিন। সেখানে প্রায় একশো কুড়িটি মিসাইল কুঠুরি রয়েছে। মিসাইলের মাথায় নিশ্চয়ই গোলাপ ফুল বেঁধে ছুড়বে না চিন। নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের জন্যই ওই ক্ষেপণাস্ত্রের অস্ত্রাগার তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল দখলের মার্কিন কায়েমি স্বার্থ বড় হয়ে উঠলে সংঘাত অনির্বার্য বলে মনে করা হচ্ছে। কাজেই সামনের দশক হতে চলেছে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।