Cyber Attack: তাঁর নগ্ন ছবি পাঠানো হয়েছিল পরিচিত ১০০ জনকে! কীভাবে নিজেই হ্যাকারকে ধরলেন যুবতী?

Cyber Attack: পরিচিত সকলকে তাঁর নগ্ন ছবি পাঠানো হয়েছিল। লজ্জায় গুটিয়ে না গিয়ে, এক বান্ধবীর সহায়তায় ওই হ্যাকারকে ধরে ফেললেন মার্কিন যুবতী। কীভাবে জানেন?

Cyber Attack: তাঁর নগ্ন ছবি পাঠানো হয়েছিল পরিচিত ১০০ জনকে! কীভাবে নিজেই হ্যাকারকে ধরলেন যুবতী?
সাইবার হামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 01, 2022 | 9:10 AM

ওয়াশিংটন: ধরুণ হঠাৎ আপনার অজান্তেই বন্ধুবান্ধব, তুতো ভাইবোন, প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকা এবং আরও পরিচিত লোকজনের কাছে আপনার নগ্ন ছবি পৌঁছল। নিশ্চয়ই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে? আর যদি পুলিশও সাহায্য না করে? এরকমই অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন মার্কিন যুবতী নাটালি ক্লজ। তাঁর স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। আর তাঁর ডজনখানের পরিচিত ব্যক্তিবর্গের কাছে তাঁর নগ্ন ছবি পাঠিয়েছিল হ্যাকার। পুলিশের কাছে গিয়েও, বিশেষ সহায়তা পাননি তিনি। শেষে এক বান্ধবীর সহায়তায়, নিজেই মাথা খাটিয়ে এবং দুর্দান্ত সাহসের পরিচয় দিয়ে ওই হ্যাকারকে ধরে ফেলেছেন নাটালি। কীভাবে? আসুন জেনে নেওয়া যাক –

সময়টা ছিল, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস। সামনেই ছিল শীতের ছুটি। তার কয়েকদিন আগেই ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন নাটালি ক্লজ। সেই সময় জেনেসিও শহরে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি। ধর্ষণের মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কলেজের বন্ধুদের এক গ্রুপে যোগ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তাদের সঙ্গেও মিশতে পারেননি। বাকি মেয়েরা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-রসিকতাই করেছিল। এইরকম দুর্বিসহ পরিস্থিতিতেই তাঁর উপর নেমে এসেছিল সাইবার অ্যাটাকের অভিশাপ!

তাঁর বন্ধু-বান্ধব, কলেজের সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন, এমনকি, প্রাক্তন প্রেমিক-সহ পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে এসেছিল বেশ কিছু অস্বাভাবিক স্ন্যাপচ্যাট বার্তা। প্রেরক ছিলেন স্বয়ং নাটালি। বার্তাগুলির মধ্যে নাটালির বেশ কিছু নগ্ন ছবি ছিল। সঙ্গে লেখা ছিল “ফ্ল্যাশ মি ব্যাক ইফ উই আর বেস্টিজ”, অর্থাৎ, “আমরা যদি ভাল বন্ধু হই তাহলে আমাকে তোমার নগ্ন ছবি পাঠাও”। শুধু পরিচিত লোকজনই নয়, এই বার্তা পেয়েছিলেন বেশ কিছু অপরিচিতও – সব মিলিয়ে মোট সংখ্যাটা ১০০ জনেরও বেশি।

দুর্বিসহ পরিস্থিতি নাটালির উপর নেমে এসেছিল সাইবার অ্যাটাকের অভিশাপ

প্রাপকদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নাটালির পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই ভেবেছিল যে বার্তাটি সত্যি সত্যিই সেই পাঠিয়েছে। কেউ কেউ সোৎসাহে জবাবি ছবি পাঠিয়েছিলেন। কেউ কেউ ভেবেছিলেন নাটালি বোধহয় খুব নিচু মানের রসিকতা করছে। কেউ কেউ ছিলেন বিভ্রান্ত। প্রাক্তন এক প্রেমিক তাঁকে ফোন করে রীতিমতো রাগারাগি করে।

কিন্তু কেটি ইয়েটস নামে নাটালির এক বন্ধু ওই বার্তাগুলি দেখেই বুঝেছিল, নাটালি অনলাইন অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। আসলে ওই ঘটনার কয়েক মাস আগেই, কেটি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছিলেন। তারপর, থেকে তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক অপরিচিত ব্যক্তি অপমানজনক বার্তা পাঠাতে শুরু করেছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন না পেয়ে কেটি নিজেই ওই হেনস্থাকারীকে শনাক্ত করার উপায়গুলি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তাই তিনি জানতেন কীভাবে নাটালিকে সাহায্য করা যেতে পারে।

কেটি সোজা চলে এসেছিলেন নাটালির হস্টেলে। আদালতের নথিতে নাটালি বলেছেন, “সেই সময়টা প্রায় সিনেমার দৃশ্যের মতো ছিল। আমার চারপাশের সবকিছু যে ধীর গতিতে চলছিল? আমার কানে ঝিঁঝি ডাকছিল। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না। কেটি প্রথমেই নাটালির হস্টেলের ঘর থেকে কাঁচি, ব্লেড-সহ সব ধারালো সব জিনিস সরিয়ে ফেলেছিলেন। যাতে অবসাদে থেকে নাটালি নিজেকে আঘাত করে না বসেন। তারপর নাটালিকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি ওই সাইবার হামলাকারীকে ধরতে চান কি না। নাটালি সম্মতি দিয়েছিলেন। তারপর তদন্ত শুরু করেছিলেন দুই বন্ধু।

যে হ্যাকার নাটালিকে নিশানা করেছিল সে নিজেকে একজন নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। নাটালিকে সে বলেছিল, তাঁর স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে বলে সতর্ক করেছিল। তারপর তাঁকে একটি কোড শেয়ার করার জন্য বলেছিল। সেই কোডটিই আসলে তাকে নাটালির অ্যাকাউন্টটি দখল করার সুযোগ করে দিয়েছিল। একবার নাটালির অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর, তিনি নাটালিকেই ওই অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা থেকে ব্লক করে দিয়েছিলেন। তারপর নাটালির অ্যাকাউন্টের প্রাইভেট বিভাগ থেকে তাঁর বেশ কিছু নগ্ন ছবি চুরি করে নেন। ধর্ষণের আঘাত থেকে সেরে ওঠার সময়ে ডাক্তারের পরামর্শেই নিজের ওই ছবিগুলি তুলেছিলেন নাটালি। নিজের শরীরকে উদযাপন করার জন্য।

কেটি ও নাটালি প্রথমে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পুলিশকে জানিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ দুই পুরুষ পুলিশ কর্তা এসেছিলেন। কথোপকথনের পুরো সময়টায় তাঁদের ভাবখানা এমন ছিল, যেন দোষ নাটালিরই। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন নাটালি। এরপর জেনেসিও টাউন পুলিশকে জানানো হয়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশের কাছে যেতে বলেছিলেন। এরপরই কেটি এবং নাটালি নিজেরাই ওই হ্যাকারকে ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন।

নাটালি ক্লজ

কেটি তাঁর নিজের প্রোফাইল থেকে নাটালির হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টে যোগাযোগ করে বলেছিলেন, তিনি তাঁর নগ্ন ছবি শেয়ার করতে চান। সঙ্গে একটি লিঙ্ক পাঠিয়েছিলেন। লিঙ্কটি এমনবাবেই তৈরি করা হয়েছিল, যাতে দেখে মনে হয় সেটি কোনও পর্ণ সাইটের। আসলে লিঙ্কটি ছিল ‘গ্র্যাবিফাই আইপি লগার’ নামে একটি ওয়েবসাইটের বিশেষ লিঙ্ক। ওই লিঙ্কে ক্লিক করলেই ব্যবহারকারীর আইপি অ্যাড্রেস ধরা পড়ে যায়। তবে, হ্যাকার সহজেই তাদের পরিকল্পনাটি ব্যর্থ করতে পারত। একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করলেই তার আইপি অ্যাড্রেস কেউ ধরতে পারত না। তবে, হ্যাকার তা করেনি। আর সেটাই তার কাল হয়।

কেটি এবং নাটালি এমনভাবে ওই লিঙ্কটি তৈরি করেছিলেন, যাতে হ্যাকারের আইপি অ্যাড্রেস সংগ্রহ করার পাশাপাশি সেই লিঙ্কটি নিয়ে যায় উইকিপিডিয়ার একটি পেজে। পেজটি ছিল ‘গট্চা’ শব্দের, অর্থাৎ ‘তোমায় ধরে ফেলেছি’। হ্যাকার সেই ফাঁদে পা দিয়েছিল। তারপর, কেটিকে বার্তা পাঠিয়েছিল, ‘এটা কী?’ ওই বার্তা পাওয়ার পরই কেটি নাটালির হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টটি ব্লক করে দিয়েছিলেন। আইপি অ্যাড্রেস থেকে জানা গিয়েছিল, হ্যাকার নিউইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকায় ছিল এবং সে একটি আইফোন থেকে স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে।

পুরো বিষয়টি নিয়ে এরপর নাটালি জেনেসিও পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা মামলাটি নিউ ইয়র্ক পুলিশের কাছে পাঠান। সেখানকার এক গোয়েন্দা যোগাযোগ করেন এফবিআই-এর সঙ্গে। এফবিআই নাটালির থেকে সব তথ্য নিয়ে ধরেছে হ্যাকারকে। তার নাম ডেভিড মন্ডোর। সে হার্লেমের বাসিন্দা, বয়স ২৯ বছর, পেশায় ‘শেফ’ অর্থাৎ রাঁধুনি। অন্তত ৩০০টি স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার কথা স্বীকার করেছে সে। হ্যাকিং-সম্পর্কিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এক মার্কিন আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। নাটালির মতে ওই ব্যক্তির পাপের তুলনায় তার দণ্ড খুবই লঘু হয়েছে। তার মতে ডেভিড মন্ডোর কোনও অস্বাভাবিক ব্যক্তি নয়, সে নেহাতই একজন সাধারণ মানুষ। আর সেটাই সবথেকে ভয়ের।