Sri Lanka Crisis: রান্নার গ্যাস সাড়ে ৬ হাজার টাকা, পাউরুটি বিকোচ্ছে ১৪০০ টাকায়! শ্রীলঙ্কার এই দুর্দশার নেপথ্যে কী কারণ?

Sri Lanka Crisis: আকাশছোঁয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। যেমন, বর্তমানে শ্রীলঙ্কায়  ১ কাপ চায়ের দাম ১০০ টাকা। ১ প্যাকেট পাঁউরুটির বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। চালের দাম শুরু হচ্ছে কিলো প্রতি ৫০০ টাকা থেকে।

Sri Lanka Crisis: রান্নার গ্যাস সাড়ে ৬ হাজার টাকা, পাউরুটি বিকোচ্ছে ১৪০০ টাকায়! শ্রীলঙ্কার এই দুর্দশার নেপথ্যে কী কারণ?
অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কা। ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 10, 2022 | 10:29 AM

কলম্বো: মাথায় হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ, এদিকে, পকেট পুরো ফাঁকা। এক টাকাও ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে রাষ্ট্রই নিজেকে ঋণখেলাপি বলে ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু দেশের ২ কোটিরও বেশি জনতার কী হবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী? জ্বালানি সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, আর্থিক সঙ্কট- একের পর এক সঙ্কটের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল-কলেজ। অফিসেও যেতে বারণ করা হয়েছে। দেশের অন্দরেও যাতায়াত করার সুযোগ নেই, কারণ জ্বালানি অমিল। পরিবারতন্ত্র যে দেশশাসনের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শ্রীলঙ্কাবাসী।

আগামিকাল পেটে ভাত জুটবে কি না, তা জানেন না দেশের ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ। দেশের মানুষকে অন্ন-বস্ত্র ও মাথার উপরে ছাদের নিরাপত্তাটুকু দিতে ব্যর্থ হয়েছে রাজাপক্ষ সরকার। সমস্ত প্রশাসনিক উচ্চপদে রাজাপক্ষ পরিবারের সদস্যরা থাকলেও, তারা দেশ পরিচালন করতে পারেননি, এমনটাই অভিযোগ লঙ্কাবাসীর। সরকার ধুঁকছিল অনেকদিন আগে থেকেই। কিন্তু তা রাতারাতি চরম সঙ্কটে পরিণত হয় মে মাসে। ঘোষণা করা হয় দেশের জ্বালানি ভাড়ার শূন্য। পেট্রোল-ডিজেল কেনার মতো বিদেশি মুদ্রাও নেই সরকারের কাছে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পেট্রোল পাম্পের বাইরে লাইন। বিদ্যুৎ-জলের জন্য শুরু হয় হাহাকার। আক্ষরিক অর্থেই অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা দেশ।

আকাশছোঁয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। যেমন, বর্তমানে শ্রীলঙ্কায়  ১ কাপ চায়ের দাম ১০০ টাকা। ১ প্যাকেট পাঁউরুটির বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। চালের দাম শুরু হচ্ছে কিলো প্রতি ৫০০ টাকা থেকে। রান্নার গ্যাসের দাম সাড়ে ৬ হাজার টাকা পার করেছে। এদিকে সাধারণ মানুষের আয়ের পথ বন্ধ। প্রতিদিনের রোজগার পাঁচশো টাকার নীচে কমে দাঁড়িয়েছে। তিন মাসের মধ্যেই দারিদ্রসীমার নীচে চলে গিয়েছেন ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ।

শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সরকারি কোষাগারে রয়েছে মাত্র ২০০ কোটি ডলার। এই অর্থ দিয়ে টেনেটুনে আর ১ মাস চলতে পারে। তারপর কী হবে, তা জানে না কেউ। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আইএমএফের সঙ্গে আর্থিক সাহায্য নিয়ে কথা হলেও, তা মিলতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।

কেন দেউলিয়া হয়ে গেল শ্রীলঙ্কা?

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এই প্রথম এইরকম ভয়ঙ্কর আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশের দেউলিয়া দশার পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। এরমধ্যে অন্যতম হল-

১. করোনাকালে পর্যটন শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া– শ্রীলঙ্কার আয়ের অন্যতম বড় উৎস হল পর্যটন। করোনাকালে তা সম্পূর্ণরূপে মুখ থুবড়ে পড়ে।

২. সার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ– মাহিন্দা রাজাপক্ষ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই সার ব্যবহারে রাশ টেনেছিলেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে চাষের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরজেরে প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায় কৃষির উৎপাদন।

৩. চিনের থেকে নেওয়া ঋণ– চড়া সুদে চিনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ শ্রীলঙ্কার বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আর্থিক সঙ্কটের সময়ও ছাড় দেওয়ার বদলে চিন শ্রীলঙ্কার উপরে চাপ সৃষ্টি করছে দ্রুত ঋণ মেটানোর জন্য। সেই কারণেই সরকার নিজেদের ঋণখেলাপী বলে ঘোষণা করেছে।

৪. লাগামছাড়া করছাড়, বিনামূল্য প্রকল্প– রাজাপক্ষ পরিবারের হাতেই দেশের মোট বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ থাকায় চূড়ান্ত আর্থিক তছরুপ হয়েছে। শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া হওয়ার অন্যতম বড় কারণ সরকারের লাগামছাড়া দান-খয়রাতি, বিনামূল্যে সামগ্রী দেওয়ার টোপ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ঢালাও করছাড়, নানা সরকারি সংস্থাকে বাড়তি খরচে ছাড় দেওয়া হয়।বন্ধ হয়ে যায় সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ-বেসরকারিকরণ। উল্টে চালু করা হয় নিখরচার নানা প্রকল্প। দেশের পড়ুয়াদের জন্য চালু করা হয় সুদহীন ঋণের ব্যবস্থা। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই নিয়োগ করা হয় ৫০ হাজার শিক্ষক ও নিরাপত্তাকর্মী। বাড়িয়ে দেওয়া হয় পেনশন ব্যবস্থার পরিধিও।

স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত সিদ্ধান্তের জেরে সরকারের পরোক্ষ কর আদায়ের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে শ্রীলঙ্কার আর্থিক ঘাটতি, জিডিপির ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। খালি হয়ে যায় সরকারি কোষাগার। বর্তমানে আমদানির খরচও মেটাতে পারছে না শ্রীলঙ্কা সরকার। দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে গোটা দেশ।