ছোটবেলা থেকেই খুব ডানপিটে এবং ঠোঁটকাটা বাঙালি গায়িকা উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়। মেধাবী ছিলেন বলে মা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন তাঁকে। মায়ের উৎসাহেই গানটাও শিখে নিয়েছিলেন উজ্জয়িনী।
ক্লাসে ফার্স্ট হতেন গায়িকা। কোনওদিনও দ্বিতীয় হননি। সঙ্গে দোসর গান হাতে হাত ধরে চলত উজ্জয়িনীর। এই গানের জন্যই মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডাক আসে মুম্বই থেকে।
লেখাপড়া করতে-করতেই এক গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলে যান মুম্বইয়ে। সেখানে গিয়েই জীবনের প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছিলেন এই গায়িকা।
যেদিন সেই সঙ্গীত পরিচালক উজ্জয়িনীকে বলেছিলেন তাঁর পরবর্তী ছবিতে গানের সুযোগ করে দেবেন, সেদিনই রাতে তিনি ফোন করে বসেন গায়িকাকে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২টা বাজে।
গায়িকা ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন হোটেলের ঘরে। আচমকা ফোন বেজে ওঠে। ফোনের উল্টোদিকে সেই নামী সঙ্গীত পরিচালক। উজ্জয়িনী খুব অবাক হয়ে যান।
গায়িকার সঙ্গে অল্প কথা হতে না-হতেই উজ্জয়িনীকে তিনি বলে বসেন, “আই লাভ ইউ!” অর্থাৎ, “আমি তোমাকে ভালবাসি”।
গভীর রাতে বাবার বয়সি এক সঙ্গীত পরিচালকের থেকে এমন একটি কথা শুনে ১৭ বছর বয়সি অনভিজ্ঞ উজ্জয়িনীর পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল।
তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর নিজের উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করে বলেছিলেন, “বাট স্যার, আই রেসপেক্ট ইউ।” মানে, “কিন্তু স্যার, আমি আপনাকে সম্মান করি।”
উজ্জয়িনীর মুখে এই কথা শোনার অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন সেই নামজাদা সঙ্গীত পরিচালক। আর কথা তিনি বাড়াননি। গায়িকাকে আর ফোনও করেননি। মাস ছয় পর, একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানেই সেই পরিচালকের মুখোমুখি হতে হয় উজ্জয়িনীকে।
ব্যক্তির মধ্যে অন্য় এক মানুষকে আবিষ্কার করেন গায়িকা। রাত ১২টায় ফোন করা অসৎ উদ্দেশের মানুষটা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। সত্যি-সত্যিই সেই সঙ্গীত পরিচালক তারপর উজ্জয়িনীকে দিয়ে তাঁর পরের ছবিতে গান গাইয়েছিলেন।
আর নিজের জীবনের এই ঘটনার কথা শেয়ার করতে গিয়ে উজ্জয়িনী বলেছিলেন, “ওইদিন যদি হোটেলের ঘরে আমি মানুষটাকে মুখের উপর জবাব না দিতাম, আজ এই জায়গায় থাকতাম না।"
বলেন, "সেদিনের সেই ১৭ বছর বয়সের অনভিজ্ঞ আমিটা হঠাৎ বড় হয়ে গিয়েছিল। বুঝে গিয়েছিল, জীবনে চলার পথে কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।”